Kim Jong Un-Vladimir Putin: বাড়ছে কিমের ইমেজ ! যুক্তরাষ্ট্রকে জব্দ করতে ২৪ বছর পর কিম পুতিনের জোট

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

Kim Jong Un-Vladimir Putin: ভাঙবে পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্র , পুতিন যাচ্ছেন কিমের দেশে। যে কিম কথায় কথায় ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে ওস্তাদ, সেই কিম যুক্তরাষ্ট্রকে জব্দ করতে এবার তার শেষ চালটা চেলেই দিলেন। বহুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন নাকি যাবেন উত্তর কোরিয়ায়। এই খবরটা কিন্তু সত্যি। গোটা বিশ্বে বাড়ছে কিমের ইমেজ। প্রায় ২৪ বছর পর ঘটতে চলেছে সেই বড় ঘটনা। আর তাতেই ভয় ধরছে যুক্তরাষ্ট্রের বুকে। কারণ দক্ষিণ কোরিয়াকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র সবসময় উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে থেকেছে। উত্তর কোরিয়ার প্রধান কিমকে জব্দ করতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কিমকে হাতের মুঠোয় আনতে পারেনি। কারণ কিম যে বড্ড বেপরোয়া। এবার সেই কিম কৌশলে নিজস্ব শক্তি বাড়াতে মাখোমাখো বন্ধুত্ব করে ফেলেছে রাশিয়ার সঙ্গে। ইউক্রেন যুদ্ধ কিম পুতিনের মধ্যে গাঢ় করেছে সেই সম্পর্ক। একটা সময় ইউক্রেনের পাশে যুক্তরাষ্ট্র দাঁড়ানোয় চোখে অন্ধকার দেখছিল রাশিয়া, তখন কিন্তু এই কিম অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছিল মস্কোকে। তাহলে কি এবার বন্ধুত্বের প্রতিদান দিতে পুতিন চললেন কিমের দেশে? কূটনৈতিক মহল কিন্তু উত্তর কোরিয়া আর রাশিয়ার এই জোটকে একেবারেই হালকা চোখে দেখছে না। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, বলা ভালো গোটা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কিম পুতিনের জোট বড় শক্তি হয়ে উঠতে পারে। এই দুই দোস্ত ঠিক কোন ফন্দি আঁটতে চলেছে? রয়েছে বড়সড় ছক। আপাতত তিনটে কারণকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল।

 

গোটা বিশ্ব জানে কিম চলেন নিজের নীতিতে। কাউকে পাত্তা দেয় না। যেখানে নিজের স্বার্থ রয়েছে, সেখানেই একমাত্র বন্ধুত্ব পাতায়। শুধুমাত্র পশ্চিমাদের জব্দ নয়, কিম আর পুতিনের জোটের নেপথ্যে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটা উদ্দেশ্য। সেই ২০০০ সালে নেতা কিম জং উনের বাবা কিম জং ইলের সময় পুতিন উত্তর কোরিয়ার সফরে গিয়েছিলেন। তারপর দীর্ঘ ২৪ বছর পর আবার পুতিন যাচ্ছেন সেই দেশে। কূটনৈতিক মহলের অনুমান, এই সফরের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা। কীভাবে দুই দেশ নিজের সেনাবাহিনীর মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বাড়াবে, সেই দিকটাই হয়তো একটু বেশি করে গুরুত্ব দেবে। পাশাপাশি নজর থাকবে অর্থনীতি, সংস্কৃতি, কৃষি, পর্যটন এবং সামাজিক বিষয়। তাহলে কি পুতিন উত্তর কোরিয়াকে অত্যাধুনিক অস্ত্র প্রদান করবে?

 

কিংবা আণবিক অস্ত্রের ক্ষেত্রে পুতিনকে সাহায্য করবেন কিম? পশ্চিমা বিশ্বের এই আশঙ্কাই বলুন, আর সম্ভাবনা, সত্যি হলেও হতে পারে। কারণ উত্তর কোরিয়া আর রাশিয়ার এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শুধুমাত্র একটা আলোচনা নয়, বরং একটা নিট ফলাফল পেতে চলেছে গোটা বিশ্ব। যা বদলে দিতে পারে ভূরাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি। হয়ত বা দেখা গেল আরো দীর্ঘায়িত হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধ। আর অপরদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে উত্তর কোরিয়া যুদ্ধ ঘোষণা করল, শুধুমাত্র রাশিয়ার সাপোর্ট পেয়ে। কারণ এই মুহূর্তে রাশিয়ার উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র ভীষণ দরকার। আবার উত্তর কোরিয়ার দরকার রাশিয়ার কারিগরি সাহায্য। সোজা কথায়, আদান-প্রদান নীতিতে চলছে দুই দেশ। এক বৈঠকেই ঠিক হয়ে যেতে পারে, উত্তর কোরিয়ায় তৈরি ঠিক কি কি পরিমাণ অস্ত্র রাশিয়া ভবিষ্যতে পেতে চলেছে। যৌথভাবে অস্ত্র তৈরির প্রকল্পে দুই দেশ চুক্তি করতে পারে। আবার অপরদিকে যদি উত্তর কোরিয়ার কথা বলা হয়, তাহলে দেশটা কিন্তু শুধুমাত্র রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহর বদলে জ্বালানি আর খাবার নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে না। কারণ কয়েক মাস আগেই সামরিক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ পরীক্ষায় কিম ব্যর্থ হয়েছেন। সেক্ষেত্রে মহাকাশ প্রযুক্তির ব্যাপারে রাশিয়ার কাছ থেকে তিনি সাহায্য চাইতে পারেন। এছাড়াও আণবিক সাবমেরিন কিংবা স্যাটেলাইট পরীক্ষাতেও কিমকে সাহায্য করতে পারেন পুতিন। যদিও আণবিক অস্ত্রের বিনিময়ে যদি কোন চুক্তি হয়েও থাকে তাহলে দুই দেশ এই মুহূর্তে তা কখনোই প্রকাশ করবে না। কারণ বিষয়টি দক্ষিণ কোরিয়া, উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মতো দেশগুলোর কাছ থেকে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।

 

পর্যটন আয়ের ক্ষেত্রেও কিন্তু এই দুই দেশ একে অপরের উপর নির্ভরশীল হতে চায়। একটা সময় রাশিয়া উত্তর কোরিয়ায় পর্যটক পাঠাতে শুরু করলে করোনা কালীন অবস্থার জন্য তা বাতিল হয়ে যায়। তারপর পুনরায় রাশিয়া আর উত্তর কোরিয়ার মধ্যে চালু হয়েছে যাত্রীবাহী ট্রেন সার্ভিস। বর্তমানে রাশিয়ানরা উত্তর কোরিয়া ভ্রমণ করছে, যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে। সাধারণত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে উত্তর কোরিয়া অনেকটা আগ্রাসি মূলক দেশ হিসেবেই পরিচিত। কেউবা বলে এই দেশ নাকি ঝুঁকিপূর্ণ। রুশ পর্যটকদের এই ভ্রমণ আস্তে আস্তে উত্তর কোরিয়ার ইমেজকে ভালো করছে। শুধু তাই নয়, কিমের দেশ চাইছে অর্থনৈতিক সহযোগিতা। কারণ রাশিয়ার যেমন শ্রমিক প্রয়োজন, তেমনি উত্তর কোরিয়ার দরকার বিদেশি অর্থ। উত্তর কোরিয়ার শ্রমিকরা কিন্তু রাশিয়ায় গিয়ে বিদেশি মুদ্রা আয় করছে। যুদ্ধের কারণে এমনিই রাশিয়ার জনশক্তির প্রয়োজন, আর সেই জায়গায় একটা বড় ভরসার জায়গা হয়ে উঠছে কিমের আশ্বাস।

 

দেখুন, বর্তমানে বৈশ্বিক সমীকরণের ক্ষেত্রে কেউ কারোর স্বার্থ থেকে এক পাও পিছু হটে না। কিম পুতিনের এই বন্ধুত্বের মাঝে স্বার্থের গন্ধটাই বেশি। কিন্তু ওই যে শত্রুর শত্রু বন্ধু হয়, আর এই নীতিতেই তো এখন গ্যাঁড়াকলে পড়তে চলেছে জো বাইডেনের দেশ। কারণ একবার সামরিক খাতে যদি উত্তর কোরিয়া আর রাশিয়া বড় চুক্তি করে ফেলে, একে অপরকে অস্ত্র দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়, তখন কিন্তু ঘুরে যাবে ইউক্রেন যুদ্ধের মোড় । যুক্তরাষ্ট্র শুধুমাত্র রাশিয়াকে হারাবে বলে ইউক্রেনের মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছে। সেই জায়গায় ব্যাক ফুটে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত স্ট্র্যাটেজি। তাই তো যখন কিমের অতিথি হয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন উত্তর কোরিয়ায় যাচ্ছেন, তখন সেই সফর ঘিরে পশ্চিমাদের মনে তৈরি হয়েছে ব্যাপক আগ্রহ আর উদ্বেগ। যেন কি হয় কি হয় ভাব। দুই রাষ্ট্র প্রধানের স্বাক্ষর করে বড় চুক্তি করে ফেলার আশঙ্কায় রয়েছে পশ্চিমারা। অপরদিকে উত্তর কোরিয়ার জন্য পুতিনের সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ করোনা কালের পর এই প্রথম কোন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান উত্তর কোরিয়া যাচ্ছেন। মূলত পশ্চিমা বিরোধী মনোভাব আর ইউক্রেন যুদ্ধ কাছে এনেছে এই দুটি দেশকে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের বিশ্বাস, পুতিনের এই সফর নিছক সফর নয়, ভবিষ্যতে পশ্চিমাদের সঙ্গে লড়াইয়ে নতুন রোড ম্যাপ তৈরি করে ফেলতে পারে দুই দেশ। তাই পর্যবেক্ষকদের তীক্ষ্ম চোখ রয়েছে পুতিনের এই সফরে।

 

কিম আর পুতিনের এই জোটকে অত্যন্ত সুকৌশলী দৃষ্টিতে দেখছে আন্তর্জাতিক মহল। এই দুই দেশ কিন্তু আর বোঝাপড়ার চুক্তিতে নেই। ধীরে ধীরে একে অপরের মিত্র দেশ হয়ে উঠেছে। যেভাবে বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক স্তরে ভাঙ্গা-গড়া চলছে, যুক্তরাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক শক্তিও কিন্তু আগের চেয়ে অনেক দুর্বল হয়ে এসেছে, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে রাশিয়া আর উত্তর কোরিয়া নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে হাজির করতে চলেছেন নতুন কৌশল। যা ওয়াশিংটনকে বড় ধাক্কা দিতে প্রস্তুত। এরই মাঝে যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করে দেয়, তাহলে সত্যি সত্যি ভয় ধরবে যুক্তরাষ্ট্রের বুকে। এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। পরাশক্তি হিসেবে রাশিয়া যে বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থাকে পাল্টে দিতে চায়, তারই প্রতিফলন ঘটাতে চলেছেন কিম। যদি একবার কিম আর পুতিন পারস্পরিক সহযোগিতার কথা দিয়ে ফেলে, যে তারা যুদ্ধের মাঠেও একে অপরকে সরাসরি সাহায্য করবে, তখন কিন্তু কোনঠাসা হতে পারে পশ্চিমারা। হয়তোবা সেই আশঙ্কাই করছে পশ্চিমারা রাষ্ট্রগুলো। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র দেশগুলো কম শক্তিশালী নয়। যদি পরাশক্তি গুলোর মধ্যে টক্কর বাঁধেও, তাহলে সেটা হবে শেয়ানে শেয়ানে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version