Kalighat: কালীতীর্থ কালীঘাট, হাতছানি দেয় ইতিহাস! সতীর পাথর হয়ে যাওয়া অঙ্গ মন্দিরের কোথায় আছে?

।।প্রথম কলকাতা।।

Kalighat: একসময় কালো জাদু হতো। মায়ের জীভ ছুঁলেই হবে পূণ্যলাভ। কালীঘাটের কালী সাধনার অলৌকিক ইতিহাস জানুন। সতীর দেহের মধ্যে ডান পায়ের চারটি আঙুল পড়েছিল কালীঘাটে। বিপদে আপদে এই সতীপীঠেই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন ভক্তরা। এখনও মন্দিরে হয়ে চলেছে তন্ত্র সাধনা। কালীঘাটের মন্দিরের আড়ালে থাকা অনেক অজানা কাহিনী জানেন না কেউ।

মন্দিরের অনেকে বলেন, চারটে নয়,সতীর ডান পায়ের একটি আঙুল এখানে পড়েছিল। এই মন্দিরে দেবীর মূর্তিটি কষ্টিপাথরে তৈরি।মূর্তির জিভ, দাঁত, মুকুট, হাত ও মুণ্ডমালা সোনার,বিগ্রহের নিম্নভাগ দেখা যায় না। এই মন্দিরের মধ্যেই জাগ্রত দেবীর অঙ্গ রাখা রয়েছে। একটি সিন্দুকে সতীর পাথর হয়ে যাওয়া অঙ্গটি এখনও রয়েছে।এটাই ভক্তদের বিশ্বাস যদিও তা কারও সামনে বের করা হয় না।প্রতি বছর স্নান যাত্রার দিন মন্দিরের দরজা বন্ধ রেখে। চোখ বাঁধা অবস্থায় মূর্তিটিকে স্নান করানো হয়। ২০১৬ সালে প্রায় ৪০ বছর পর দেবীর জিভটিকে পাল্টানো হয়েছিল। বর্তমান জিভটি প্রায় ২ কিলো ১৯১ গ্রাম রুপোর ওপর ৫৫৮ গ্রাম সোনা দিয়ে মোড়া। দেবীর খড়গটি পাল্টে একটি দু কেজি ওজনের সোনার খড়গ বসানো হয়েছে।

কালীঘাট। বাংলার এই মন্দিরেই সবচেয়ে বেশি তন্ত্র সাধনা করা হয়। লোকমুখে সোনা যায় আগে এই মন্দিরে নিয়মিত মায়ের পায়ে বলি দেওয়া হতো। এখনও রীতি থাকলেও বিশেষ বিশেষ দিনেই এই বলি দেওয়া হয় । এই অঞ্চলে একসময় কালো জাদুও হতো। পুজোর রাতে ভরা অমাবস্যায় তন্ত্র সাধনায় বসেন তান্ত্রিকেরা। জটাধারী চেহারা, লাল পোশাক, রুদ্রাক্ষের মালা
রক্তচক্ষুর সে সব চেহারা দেখলে খানিকটা হলেও ভয় লাগবে।কালীঘাটের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা দিয়ে চারশো বছর আগে ছোট ছোট জাহাজ চলত।

ভক্তেরা পুণ্যস্নান করে মা কালীর থানে পুজো দিতেন। মন্দিরের সামিনেই ছিল স্নানের ঘাট। ঘাটের পাশে চিনু শাঁখারি নামের একজন শাঁখা বিক্রি করত। মেয়েরা স্নান করতে এসে, পুজো দিতে এসে তার কাছ থেকে শাঁখা কিনে নিয়ে যেত। কিন্তু একদিন তার একটিও শাঁখা বিক্রি হল না। ছেলেমেয়ের কথা ভেবে কাঁদতে বসে শাঁখারি। শোনা যায়, তখন দেবী বিবাহিত মেয়ের রূপ ধরে তার কাছ থেকে শাঁখা কিনে পরেন। তাকে অনেক রত্ন দিলেন, দেবীর বরেই অভাব ঘুচে যায় তার।

কালীঘাট মন্দিরটি কীভাবে তৈরি হয়, সেনিয়েও রয়েছে অজানা কাহিনী। লোকমুখে শোনা যায়, এই সতীপীঠ দীর্ঘকাল জঙ্গলে ঢাকা পড়ে ছিল। এক ব্রাহ্মণ গঙ্গার তীরে সন্ধ্যা আহ্নিক সেরে ফেরার সময় জঙ্গলের ভেতর এক আশ্চর্য আলো দেখে এগিয়ে যান। কালীকুণ্ড নামে এক নদীর পাড়ে কালীর মুখের আকারের পাথরের টুকরো ও পাথরের পায়ের আঙুল দেখতে পান। যদিও এই ঘটনার সত্যতা কতটা তা জানেন না কেউ।এই ব্রাহ্মণের নাম আত্মারাম ব্রহ্মচারি। পরে আকবরের সেনাপতি মানসিংহ এই আত্মারাম ব্রহ্মচারি নামের ব্রাহ্মণকে কালীঘাটের ভার দেন। আর বর্তমানে কালীঘাটের যে মন্দির রয়েছে তা ১৮০৯ সালে বরিশালের সার্বণ রায়চৌধুরিদের নির্মিত মন্দির। পরবর্তীকালে মন্দিরের কিছু পোড়ামাটির কাজ নষ্ট হয়ে গেলে সেগুলি সংস্কার করা হয়। বর্তমান মন্দির টি ৬ টি ভাগে ভাগ করা ষষ্ঠী তলা, নাট মন্দির, জোড় বাংলা, হারকাঠ তলা, রাধা কৃষ্ণ মন্দির এবং কুন্ড পুকুর । চূড়ামণি তন্ত্রে বলা হয়েছে, কালীঘাটে নকুলেশ্বর নামে বিরাজ করছেন এবং ব্রহ্মা এখানে একটি কালীমূর্তি স্থাপন করেন। কবে থেকে এই মন্দিরে পুজো শুরু হয়েছে, তা নিয়েও রয়েছে নানা মত।

শক্তিপীঠের মধ্যে কালীতীর্থ কালীঘাট ৪১ তম সতীপীঠ। কালীক্ষেত্র কালীঘাট বহু প্রাচীন তীর্থস্থান। কারণ গবেষকরা বলছেন় ষোড়শ শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীরবহু তীর্থ বিষয়ক বইতে কালীঘাটের নাম পাওয়া গিয়েছে ।শ্রী শিবপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর “প্রাচীন কলিকাতা” বইতে লিখেছেন, পনেরোশ শতাব্দীর শেষভাগে বা ষোড়শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে গোবিন্দপুরে
যা তখনকার কালীঘাট সেই সময় থেকেই মা কালীর পুজো শুরু হয়।

কালীপুজোর দিন কালীঘাটের গেলেই মায়ের অন্যরূপ দেখতে পাবেন। সেদিন দেবীকে লক্ষ্মী রূপে পুজো করা হয়। দেবী যেন ঘরের লক্ষ্মী দেবী।অনান্য সব মন্দিরে কালীপুজো শেষ হতে রাত গড়িয়ে যায়।কিন্তু এখানে কালীপুজো সারারাত ধরে নয় সন্ধ্যার সময়ই পুজো পাঠ হয়ে যায়। এটাই কালীঘাটের নিয়ম, নীতি ও রেওয়াজ। কালীপুজোয় ৬ রকম ভাজার সঙ্গে থাকে। ঘিয়ের পোলাও, ঘি ,ডাল, শুক্তো ।মাছের কালিয়া, পাঁঠার মাংস ও চালের পায়েস।তবে রাতে মা লক্ষ্মীকে নিরামিষ ভোগ নিবেদন করা হয় কালীঘাটে।তাতে থাকে লুচি, বেগুনভাজা, আলু ভাজা, দুধ, ছানার সন্দেশ আর রাজভোগ ।

কালীঘাটে পুকুরটির নাম কুণ্ড পুকুর। কথিত আছে, এর জল গঙ্গাজলের মতই নাকি পবিত্র। প্রত্যেক বছর কালীপুজো উপলক্ষ্যে এই মন্দিরে প্রচুর ভক্তরা আসেন। জাগ্রত তীর্থস্থান বলে কালীঘাটের কালীমন্দিরের খ্যাতি বরাবরই।

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version