।। প্রথম কলকাতা ।।
Afghanistan-Israel: হিজবুল্লাহর শক্তি বাড়াচ্ছে তালেবান, মোক্ষম জবাব দেবে ইসরায়েলকে। ইরানের উপকারের প্রতিদান দিচ্ছে তালেবান। নিজেদের শানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রে। তাও আবার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। আজব ব্যাপার। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহর হয়ে এবার লড়বে আফগানিস্তান। হ্যাঁ, এমনটাই হতে চলেছে। লেবাননের দিকে এগিয়ে চলেছে তালেবানের শত শত সেনা। লক্ষ্য একটাই, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। হিজবুল্লাহর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করা। কতটা মারাত্মক হতে চলেছে এই যুদ্ধ? হঠাৎ তালেবানের এমন সুর বদল কেন? মধ্যপ্রাচ্যের এই সংকটে তালেবান জড়িয়ে পড়ে কোনও ভুল করছে না তো? সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের সাথে তালেবানের কিন্তু কোনও শত্রুতা নেই। যেন আগ বাড়িয়ে যুদ্ধের কুয়োয় ঝাঁপ দিতে চলেছে তালেবান। যদি সরাসরি তালেবান যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, আর পশ্চিমাদের রোষে পড়ে তখন কী হবে? নিজেকে রক্ষা করতে পারবে তো? শুধুমাত্র ইরানের সাপোর্টের জোরে তালেবান এত কিছু করে ফেলছে। তবে হ্যাঁ, শক্তি বাড়ছে হিজবুল্লাহর। একথা ঠিক। কারণ এই মুহূর্তে যদি লেবানন আর ইসরায়েলের যুদ্ধ বাঁধে তখন হিজবুল্লাহর প্রচুর সৈন্য প্রয়োজন। আর সেই সেনা দিতেই কি তবে তালেবানের এত বড় পদক্ষেপ?
* যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রে শানাচ্ছে তালেবান, ইসরায়েলকে কোণঠাসা করার প্ল্যান!
একটা সময় ছিল, যখন আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র বান্ধব সরকার পছন্দ করত না তালেবান। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র পিছু হটেছিল। সেই সময় তালেবানকে পুরো সাপোর্ট করেছিল ইরান। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটা তখন শুধু তালেবান নেতা কিংবা যোদ্ধাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ই দেয়নি, বরং তালেবান সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের কুদস ফোর্সের ইরানি সদস্যরা পশ্চিম আর দক্ষিণ আফগানিস্তানে তালেবান কমান্ডারদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ আর বুদ্ধিমত্তা প্রদানের সাহায্য করেছিল। আর সেই দাম চুকাতে এবার তালেবানের সেনারা আসছে লেবাননে। ফলত, এবার নতুন মোড় নিল ইসরায়েল আর হামাস যুদ্ধ। যে মোড় আস্তে আস্তে ঘুরে যাচ্ছে ইসরায়েল বনাম লেবাননের দিকে। যেখানে রীতিমত ফুঁসছে হিজবুল্লাহ। তারা যে কোনও মূল্যে ইসরায়েলকে পরাজিত করতে বদ্ধপরিকর। পিছন থেকে সরাসরি হুমকি দিচ্ছে ইরান। ইরান বলেই দিয়েছে, তারা হিজবুল্লাহকে সাহায্য করবে। আর করছেও। এবার সেই দলে নতুন করে সংযোজন হল তালেবান। হিজবুল্লাহকে সমর্থন দিতে, ইতিমধ্যেই প্রায় ১০০০ এর বেশি তালেবান যোদ্ধা প্রস্তুত। খেয়াল করে দেখুন, গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই সেই যুদ্ধের পরিধি যেন ধীরে ধীরে বাড়ছে। একটু একটু করে জড়িয়ে পড়ছে মধ্যপ্রাচ্যের বাইরের দেশগুলো। ভয়টা তো এখানেই। দুম করে এই যুদ্ধ ওবড় আকারে বিস্ফোরণে পরিণত হবে না তো? তালেবান হিজবুল্লাহর দিকে যাওয়া মানে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যাওয়া। এমত পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্র চুপ করে থাকবে না। এমনি থেকেই যুক্তরাষ্ট্র আর তালেবানের সম্পর্ক বেশ জটিল।
হয়ত ভাবছেন, যে তালেবানের কি এমন ক্ষমতা আছে, যা দিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়বে? ইসরায়েলের শক্তি গোটা বিশ্ব জানে। প্রযুক্তিতে যেমন উন্নত, তেমনই সমৃদ্ধ অস্ত্র ভান্ডার। তার ওপর ইসরায়েলের মিত্র দেশ বড় বড় পশ্চিমা দেশগুলো। সেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা বা বিরুদ্ধে যাওয়া মুখের কথা নয়। আসলে তালেবান ঘুর পথে শক্তি পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের থেকে। আজ্ঞে হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। আজ যে তালেবানের এত শক্তি, অধিকাংশ টাই কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রে শাণিত তালেবান। মনে পড়ে ২০২১ সালের আগস্টের কথা, যখন আফগানিস্তানে অস্ত্র ফেলে চলে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা। আর ঠিক সেই অস্ত্রগুলোই কাঁধে উঠেছিল তালিবানের। যে অস্ত্রগুলো যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছিল আফগান সরকারকে। যার মূল্য ছিল প্রায় ২৮০ কোটি ডলার। ২০০২ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে অস্ত্র ভান্ডারের জন্য দেওয়া এই অর্থের পাশাপাশি ছিল সেনার প্রশিক্ষণ আর উন্নতির কাজে দেওয়া প্রায় ৮৩০ কোটি ডলার । আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর তালেবান এই বিপুল যুদ্ধ সরঞ্জাম নিজেদের দখলে করে নেয়। কি ছিল না সেই তালিকায়! প্রায় দুই হাজার অস্ত্রবাহী গাড়ি , হামভি, যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, স্ক্যান ইগল ড্রোন ও বিমান, সবই চলে যায় তালেবানের দখলে। সোজা কথায়, যুক্তরাষ্ট্রই কিন্তু তালিবানের হাতে তুলে দিয়েছে আধুনিক সব অস্ত্র। এই বিপুল অস্ত্রে নিশ্চয়ই নিয়মিত দেখভালের প্রয়োজন, তার প্রশিক্ষণও প্রয়োজন। তালেবানের কিন্তু সেই প্রশিক্ষণ ছিল না। আর এই জায়গায় তালেবানকে বড় সাহায্য করেছে ইরান।
* যেচে যুদ্ধে জড়াচ্ছে তালেবান! উদ্দেশ্যটা কী?
আসলে তালেবানও একটু এখন ভয়ে আছে। আফগানিস্তানে ক্ষমতায় আসার পর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সেভাবে পোক্ত করে উঠতে পারেনি। তালেবান জানে, বর্তমানে যে পরিমাণে বৈশ্বিক উত্তেজনা বাড়ছে, এই সময় বন্ধু রাষ্ট্র বড্ড দরকার। এমনিতেই আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুবই শোচনীয়। ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে মানবাধিকার পরিস্থিতি। তার উপর তালেবানের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে আফগানিস্তানের ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট বা জাতীয় প্রতিরোধ ফ্রন্টের কর্মকান্ড। এটি মূলত চরমপন্থী নয় এরকম একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী, যা তালেবান শাসকদের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ। ওই সশস্ত্র গোষ্ঠী কিন্তু তালেবান বিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠীকে এক ছাতার নিচে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাই তালেবান কোনঠাসা হওয়ার আগে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে। যাতে সংকটে সাহায্য চাইলেই পেতে পারে।
আর তাছাড়া তালেবান আগাগোড়াই হামাসের সাথে সখ্যতা বেশি পছন্দ করে। হামাস আবার সাপোর্ট করে হিজবুল্লাহকে। আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় এলে, ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ভূমি দখল করে রাখা যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করার জন্য আর তালেবানের সাহসীর নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানায়। এই বিজয় যেন কুড়ি বছর দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল। হামাসের কথায়, মার্কিন বাহিনী আর তার মিত্রদের পরাজয় এটাই প্রমাণ করে, দুর্দশা জর্জরিত ফিলিস্তিনি জনগণসহ সারা বিশ্বের বিপ্লবী জনতা দ্রুত বিজয় লাভ করবে। সেই সময় প্রকাশ্যে আসে, হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার সঙ্গে তালেবান প্রতিনিধিদের মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকের ছবি। আসলে প্রথম থেকেই তালেবানরা হামাসের প্রতি সহানুভূতিশীল। তার উপর গাজা যুদ্ধ শুরু হলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য একটা বড় সুযোগ খুঁজছিল তালেবান। ইসরায়েল লেবাননের যুদ্ধের আশঙ্কা আর নেতানিয়াহু আর হিজবুল্লাহর হুঙ্কার যেন সেই সুযোগটা এনে দিল তালেবানের সামনে।
•গাজা নয়, ইসরায়েলের টার্গেট এবার লেবানন! প্রস্তুত তালেবানও
যুদ্ধের বড় সংকটে পড়তে চলেছে গোটা বিশ্ব। সেটাই তো স্বাভাবিক। ইসরায়েল কখনই দমার পাত্র নয়। ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলে দিয়েছেন, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নাকি প্রায় শেষ। তবে এটি এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে। কিন্তু বিপুল সংখ্যক হামাস সদস্য নিহত হওয়ার পর গাজায় আর ইসরায়েলের সেনার খুব একটা প্রয়োজন নেই। অতএব এখন ইসরায়েলের সেনাবাহিনী হিজবুল্লাহকে শেষ করতে প্রস্তুত। নেতানিয়াহুর ঘোষণার পরেই, কিন্তু ইসরায়েলি সৈন্য এবং ট্যাংক গুলো ঘুরে গিয়েছে লেবাননের সীমান্তের দিকে। যা হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে বড় ধরনের যুদ্ধের প্রস্তুতির ইঙ্গিত। আর ঠিক তারপরেই, তালেবানও এই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল। যদিও তালেবানের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো এই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।। তবে একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, তালেবান যোদ্ধারা লেবাননের দিকে এগিয়ে চলেছে। আফগানিস্তান থেকে প্রথম ব্যাচে লেবাননে পাঠানো হয়েছে এক হাজারেরও বেশি সৈন্য। যারা যুদ্ধের ময়দানে হিজবুল্লাহকে সাপোর্ট করবে। এই যোদ্ধাদের আধুনিক অস্ত্র আর সামরিক যানবাহন রয়েছে। তালেবান যোদ্ধাদের হাতে অস্ত্র দোলাতে আর সামরিক গাড়ির সাথে স্কেটিং করতে দেখা যায়। তালেবান তো জানে, তাদের কাছে রয়েছে বিলিয়ন বিলিয়ন মূল্যের আমেরিকান অস্ত্র। আর সেই জোরেই এখন তারা পরোক্ষভাবে লড়বে সেই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে।
তালেবান যে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের মাঠে জড়িয়ে পড়তে মুখিয়ে রয়েছে, তার প্রমাণ বহু আগেই দিয়ে দিয়েছে। ইরান যখন গত এপ্রিল মাসে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ড্রোন আর ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা শুরু করেছিল, তখন আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, ইরানের এই প্রতিশোধ নাকি আত্মরক্ষার ন্যায় সঙ্গত পদক্ষেপ। উল্টে গাজায় হামলা চালানোর জন্য এবং ওই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার জন্য অভিযোগের আঙুল তোলে ইসরায়েলের দিকে। গত বছরের অক্টোবরে গাজা সংকট শুরু হলে জল্পনা উঠে, তালেবান হয়তো তাদের কিছু যোদ্ধাদের গাজা যুদ্ধে পাঠাতে পারে। তার জন্য ইরান আর ইরাককে নাকি অনুরোধ করেছিল, যাতে তালেবান যোদ্ধাদের তাদের দেশের মধ্য দিয়ে গাজায় যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। যদিও তা প্রকাশ্যে তালেবান স্বীকার করেনি। বরং জানিয়েছিল, তারা কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। তবে ফিলিস্তিনিদের প্রতি বরাবরই সহানুভূতিশীল। গাজা-যুদ্ধের প্রথম মাসগুলোতে তালেবানরা খুব সতর্কতার সাথে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। প্রকাশ্যে সেভাবে এসে হামাসকে সমর্থন করেনি। কিন্তু হামাসের সাথে যে তালেবানের গভীর যোগ রয়েছে তা তো গোটা বিশ্ব জানে। তাই আর কোনও রাখঢাক নয়, সরাসরি হিজবুল্লাহর পাশে গিয়ে দাঁড়াল তালেবান।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম