Ajit Doval: ভারতের মুশকিল আসান, জেমস বন্ড অজিত ডোভাল! দেশের প্রকৃত নায়ক

 

।। প্রথম কলকাতা ।।

Ajit Doval: ভারতের(India) মুশকিল আসান, সরকারের ভরসাস্থল, দেশের জেমস বন্ড অজিত ডোভাল(Ajit Doval)। ভারতের সুপার গোয়েন্দা এজেন্ট অজিত ডোভালের জীবন যেন টানটান রোমহর্ষক প্লটে ঘেরা সিনেমা, যা হলিউডের যে কোন সিনেমাকে হার মানিয়ে দেবে। ভারতের নিরাপত্তার দায়িত্বের ভার তাঁর কাঁধে। বয়স হয়েছে প্রায় ৭৭ বছর। দেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তিনি পালন করছেন। দেশকে বাঁচাতে কখনও ফেরিওয়ালা আবার কখনো বা পাকিস্তানের চোখে ধুলো দিয়ে গোপন তথ্য টেনে বার করে আনেন। ভারতবাসী তাঁকে ভালবেসে বলে জেমস বন্ড। এক ডাকে তাঁকে সবাই চেনে। কিন্তু গুগল সার্চ করলে তাঁর জীবন সম্পর্কে তথ্য জানার কোন সলিড অ্যাকাউন্ট পাবেন না। এনার আরেকটি নাম রয়েছে, যা শুনে ভয়ে কাঁপে শত্রুরাও। অজিত ডোভালের ছদ্মনাম ০০৭। তাঁর ঝুলিতে একাধিক রোমহর্ষক মিশন, যা জানলে আজও ভারতবাসীর গায়ে কাঁটা দেয়। মাইন্ড গেম খেলে কিভাবে শত্রুদের বশে আনতে হয় তা ভালোভাবে জানেন ভারতের এই ০০৭

১৯৮৮ সালের কথা মনে আছে, যখন স্বর্ণমন্দিরের দখল নিয়ে ছিল খালিস্তান পন্থী সশস্ত্র জঙ্গিরা? সেই সময় বাইরে থেকে ভারত সরকার অনুমান করে বুঝেছিল ভিতরে হয়তো জঙ্গির সংখ্যার ৪০ মতো হবে। প্রায় ৭০০ বিএসএফ জওয়ান স্বর্ণমন্দির ঘিরে ফেলে। কিন্তু কিছুতেই স্বর্ণমন্দিরে কেউ প্রবেশ করতে পারছিলেন না। অপরদিকে মন্দিরে মধ্যে জঙ্গিদের কব্জায় ছিলেন পুণ্যার্থীরা। বাইরে থেকে জঙ্গিদের সঙ্গে বার বার কথা বলেও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন রীতিমত অবতারের মতো আবির্ভাব হন অজিত ডোভাল। খাটো চেহারার একটা লোক ফেরিওয়ালা সেজে মন্দিরের সামনে ঘোরাঘুরি করছিল। তাকে খুব একটা কেউ পাত্তা দেয়নি। জঙ্গিরা তাকে ভেতরে ডেকে নিয়ে যায়। মিশন সাকসেস করে সবার চোখ এড়িয়ে সেই ফেরিওয়ালা বেরিয়ে আসেন, তিনি ছিলেন ০০৭। ভিতরের সব কথা বলে দেয়। তারপর ওই তীব্র গরমের মধ্যে কেটে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ আর জলের লাইন। কয়েক দিনের মধ্যে জঙ্গিরা সুরসুর করে জলের টানে বাইরে বেরিয়ে আসে। রক্তপাত ছাড়া ভারত স্বর্ণমন্দিরকে দখলমুক্ত করে । আসলে সেদিন অজিত ডোভাল নিজেকে আইএসআই এর গুপ্তচর রূপে পরিচয় দিয়েছিল। তাইতো জঙ্গিদের কাছে পৌঁছাতে পেরেছিলেন। সেদিন সেখানে ৪০ নয়, জঙ্গিরা ছিল প্রায় ২৫০ জনের মতো।

অজিত ডোভালের ঝুলিতে রয়েছে একাধিক মিশনের সাকসেস। ১৯৮৬ সালে মিশন নর্থ ইস্ট, যেখানে সামনে ছিলেন মিজো বিদ্রোহ। মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট এর ৭ কমান্ডারের মধ্যে ৬ জনকে অজিত ডোভাল তার পক্ষে এনেছিলেন। তাই তো আজও মিজোরামের মানুষ শান্তিতে সেখানে বসবাস করছেন। কাশ্মীরে ভারত বিরোধী আন্দোলন সামলাতে ১৯৯০ সালে কাশ্মীরে চলে যান। সেখানে বহু কাশ্মীরি যুবককে মূল স্রোতে ফিরিয়ে এনেছিলেন। শোনা যায় তিনি নাকি প্রায় সাত বছর পাকিস্তানে লুকিয়েছিলেন। ছদ্মবেশে পাকিস্তানের বেআইনি গোপন তথ্য সংগ্রহ করতেন। ভিখারি সেজে ছদ্মবেশে পাকিস্তানে ঢুকে পড়েছিলেন। তার আগে রপ্ত করে নিয়েছিলেন উর্দু ভাষা। শিখে নিয়েছিলেন পাকিস্তানের সমস্ত আদব-কায়দা। পাকিস্তান লুকিয়ে তাদের দেশে পরমাণু বোমার ল্যাব তৈরি করছিল। তিনি সেই তথ্য ভারতের কাছে ফাঁস করে দেন। ২০১৬ সালের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মূল কান্ডারী ছিলেন তিনি। জঙ্গিদের বারংবার অপরাধমূলক কার্যক্রমে বাঁধ ভেঙেছিল ভারতের। পরিস্থিতি সামলাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠক করেন।

যেখানে উপস্থিত ছিলেন অজিত ডোভাল। পরিকল্পনা অনুযায়ী, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতের দুঃসাহসী সেনারা ঢুকে সন্ত্রাসীদের ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। ইরাকের তিকরিত হাসপাতালে আটকে ছিলেন ভারতীয় ৪৬ জন নার্স । গোপন মিশনের মাধ্যমে ইরাকে চলে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে ইরাকি সরকারের উচ্চস্তরে আমলাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নার্সদের জঙ্গিদের হাত থেকে রক্ষা করেন। ১৯৯৯ সালে ঘটনা তো আরও ভয়ঙ্কর। ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স ৮১৪ কান্দাহারে হাইজ্যাক হয়। হাইজ্যাকারদের সঙ্গে তিনি রীতিমত মাইন্ড গেম খেলেন। উদ্ধার করেন যাত্রীদের। এই মানুষটিকে প্রকৃত নায়কের থেকে কম বললে ভুল বলা হবে।

অজিত ডোভালের বাবা ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন মেজর। বাবার থেকেই শিখেছেন দেশকে কিভাবে আগলে রাখতে হয়। উত্তরাখণ্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চল পাউরি গারোয়ালে ১৯৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কিং জর্জ রয়াল ইন্ডিয়ান মিলিটারি স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে স্নাতক করার পর ইকোনমিক্সে মাস্টার ডিগ্রি পড়বেন বলে ভর্তি হন হন আগ্রা ইউনিভার্সিটিত। তবে লক্ষ্য ছিল আইপিএস অফিসার হবেন। তাই স্নাতক স্তরের পড়াশোনার সময় থেকেই তিনি আইপিএস হওয়ার জন্য পড়াশোনা শুরু করে দেন। ১৯৬৮ সালের সিভিল সার্ভিস পাস করে কেরালা ক্যাডারের আইপিএস হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। সেখান থেকে যোগ দেন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোতে। তিনি ভারতের সর্বকনিষ্ঠ আইপিএস অফিসার হিসেবে পদক পেয়েছেন। তিনি প্রথম পুলিশ অফিসার হিসেবে পেয়েছেন কীর্তিচক্র সম্মান। টানা ৩৭ বছর পুলিশ আর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর সঙ্গে কাজ করেছেন। তারপর যোগ দেন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর চিফ হিসেবে।

ছোটখাটো চেহারার এই মানুষটি বেশ মুখচোরা, নিজের সম্পর্কে খুব একটা কথা বলতে ভালোবাসেন না। তাঁর চাকরি জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে কাশ্মীর সমস্যা সামলাতে। নিজের কাজের জন্য প্রচুর দুর্নামও পেয়েছেন, কিন্তু তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। নিজের লক্ষ্য পূরণে সর্বদা অবিচল থেকেছেন। জঙ্গি নেতাদের ছলচাতুরির মাধ্যমে নিজের দলে টেনে কিভাবে জঙ্গি দমন করতে হয় তা তিনি ভালই জানেন। তাঁর স্ট্যাটিজিতে রয়েছে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার নীতি। কাজ করেন এক্কেবারে ঠান্ডা মাথায়। ব্যর্থ হলেও লক্ষ্য থেকে সরে দাঁড়ান না।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version