।। প্রথম কলকাতা ।।
India Pakistan: ভারত নিজের স্ট্যান্ড পয়েন্টে অনড় থাকতে চাইছে। পাকিস্তানের সঙ্গে মিটমাট করতে বোধহয় এখনই চাইছে না ভারত। ভারত পাকিস্তানের মধ্যে রেষারেষির সম্পর্ক বোধ হয় থেকে যাবে, থেকে যাচ্ছে।এসসিওর বৈঠকেও গললো না বরফ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের পাল্টা দিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তাহলে, ভারত পাকিস্তান শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে কখন হতে পারে আলোচনা? বাড়ছে ধোঁয়াশা! কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা? সম্পর্ক কি আরও তলানিতে? জানেন দুই দেশের মধ্যে এই বিরোধ শুরু কিভাবে? দীর্ঘ ১২ বছর পরেও প্রত্যাশা পূরণ হলো না। ভারত পাকিস্তান দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, অভিব্যক্তি একের পর এক সামনে আসায় একটা বিষয় নিয়ে জোরদার আলোচনা শুরু হয়ে গেছে, কেউ কেউ বলছেন দুই দেশের মধ্যে চলতে থাকার রেষারেষি এখনই কাটছে না। বলা ভালো, সেই সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।
কিন্তু কেন এই আলোচনা শুরু হল? কেন ভারত পাকিস্তান সম্পর্কে ইস্যু নিয়ে এত লেখালেখি হচ্ছে? সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন-এসসিওর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ দিতে গত ৫ মে ভারতের গোয়ায় সম্মেলনে পৌঁছান পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো
তাঁকে স্বাগত জানান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। কিন্তু করমর্দন এড়িয়ে গিয়েছেন। আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনার সময় নমস্কার বিনিময় ছাড়া জয়শঙ্কর-বিলাওয়ালের মধ্যে কোনো বাক্য বিনিময় কিন্তু হয়নি। জয়শঙ্করের শরীরী ভাষাতেও ছিল কঠোরতা। যা অলরেডি বুঝিয়ে দিয়েছে, দু’পক্ষের সম্পর্ক সেই একই তিমিরে রয়েছে মোটেও বদলায়নি।
না, এটা ভারত জানিয়েছিল এসসিও সদস্য রাষ্ট্রের একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শুধুমাত্র বিলাওয়াল ভুট্টোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এটাও জানানো হয়েছিল, এবার ভারত-পাকিস্তান শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না। এরপরেও কি কোন সম্ভাবনা রয়েছে? দু দেশের মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়া শুরুর চান্স কতটা? সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে বিলাওয়াল ও পাকিস্তানকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের আক্রমণ বলে দিচ্ছে, বুঝিয়ে দিচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতেও তলানি থেকে সম্পর্কের উন্নতির বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই। অন্তত তেমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। বিলাওয়ালকে জয়শঙ্কর ‘পাকিস্তানের সন্ত্রাস ইন্ডাস্ট্রির একজন প্রমোটার, সন্ত্রাসের সপক্ষে যুক্তিনিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ও মুখপাত্র’ হিসাবে অভিহিত করেছেন। সন্ত্রাস ইস্যুতে কার্যত পাকিস্তানকে পাঠ পড়িয়েছেন জয়শঙ্কর বলেছেন কোনও মতেই সন্ত্রাস ঘিরে যৌক্তিকতাকে ভারত বিশ্বাস করে না, সমস্ত রকমের সন্ত্রাস বন্ধের আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
জাতিসংঘের বিশ্ব আঙিনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীকে নিয়ে এক বিতর্কিত মন্তব্যে একটি তকমা ব্যবহার করেছিলেন পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। আর মনে করা হচ্ছে, ২০২৩ এর এসসিও বৈঠকে কার্যত বিলাওয়ালকে তারই পাল্টা জবাব দিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। যদিও, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল মনে করছেন ‘সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে দুই দেশের একে অপরের কথা বলা উচিত’ তাঁর বক্তব্য, দুই দেশেরই দায়িত্ব আলোচনার পরিবেশ তৈরি করা। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে মনে হয় না অদূর ভবিষ্যতেও দুই দেশের সম্পর্কের কোনো উন্নতি হবে।
কেন দুই দেশের মধ্যে এতো বিরোধ? কবে কিভাবে শুরু?
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পরই কাশ্মীরকে পাওয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামে ভারত পাকিস্তান। প্রতিদ্বন্দ্বিতার জের থেকেই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে রেষারেষির শুরু। যা আজও চলছে। ভারত-পাকিস্তান ভাগ করার পরিকল্পনা অনুযায়ী, কাশ্মীর দুই দেশ থেকেই মুক্ত ছিল। তবে তৎকালীন কাশ্মীরের রাজা হরি সিং ভারতকে বেছে নিয়েছিলেন। একটি চুক্তির মাধ্যমে কাশ্মীরকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। জানা যায়, ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাক্সেশনের মাধ্যমে কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। আর, পাকিস্তান অনেকটা জোর করে কাশ্মীরে ঢুকে পড়ে। আর সেই থেকেই সঙ্কট শুরু, যা দিন দিন আরও জটিলের দিকেই যাচ্ছে।
এখন কেন ভারত কথা বলতে চাইছে না?
প্রথমত, কাশ্মীর উপত্যকা অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলা কমেনি। যেখানে বারংবার ভারত স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে, এই ধরনের ঘটনা কমলে তবেই আলোচনা সম্ভব।
দ্বিতীয়ত, পাকিস্তান বলছে ভারত সরকারের উচিত জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা অপসারণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা। আর, ভারত এরইমধ্যে স্পষ্ট করে জানিয়েছে এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ২০১৯ সালের আগস্টে ভারত সরকার ৩৭০ ধারা অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়, ওই ধারায় জম্মু কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়। এবার সেখানে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। আর, আর্টিকেল-৩৭০ এমন একটি ইস্যু যে শুধু বিজেপি নয়, বিরোধীরাও এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বদলাতে চাইবে না বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
আসলে, ভারতের অবস্থান স্পষ্ট। সন্ত্রাসবাদের ঘটনা না কমানো পর্যন্ত কোনো আলোচনা হতে পারে না, এই স্ট্যান্ড পয়েন্টেই দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারত। তাতে অবশ্য পাকিস্তানের আশায় জল ঢালা হলো বৈকি। কারণ, বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের দৃষ্টিকোণ থেকে বিলাওয়াল ভুট্টো অনেক চিন্তাভাবনা করে এসসিও বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু সফর শেষে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে, দ্রুত সম্পর্ক ভালো হওয়ার কোনও চান্সই নেই দুই দেশের মধ্যে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম