রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্বে পাশ কাটাচ্ছে ভারত, মেপে মেপে সম্পর্ক রাখছে বাংলাদেশ!

।। প্রথম কলকাতা ।।

রাশিয়ার জাহাজ ভিড়ছে বাংলাদেশে, কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে নয়। রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের পণ্য মোংলা বন্দরে এলেও কম ঝঞ্ঝাট পোহাতে হচ্ছে না। এই পারমাণবিক কেন্দ্রে কিন্তু ভারতের সহযোগিতা রয়েছে, অথচ বাংলাদেশের পণ্যবাহী রাশিয়ার জাহাজকে কেন আশ্রয় দিচ্ছে না ভারত? দিতে কি পারত না? মুহূর্তে ভারতের সিদ্ধান্ত ঘুরিয়ে দিচ্ছে মার্কিন স্ট্র্যাটেজি। ভারত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পাশ কাটালেও বাংলাদেশ কেন পারছে না? কোন ভয়ে মেপে মেপে সম্পর্ক রাখতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার সঙ্গে?

ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের পর দলাদলির জটিলতা বেড়েই চলেছে। রাশিয়া আর আমেরিকার মধ্যে কাউকে খুশি করতে গেলে অন্য জনের মুখভার। বাংলাদেশ কিন্তু দুই দেশের দূতাবাসের সঙ্গে নানান বিষয়ে আলোচনা করে। দুই দেশের মধ্যে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছে। কিন্তু কোথাও গিয়ে ব্যালেন্স করতে পারল না, রাশিয়ার জাহাজের ক্ষেত্রে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল নিয়ে একের পর এক রাশিয়ার জাহাজ মোংলা বন্দরে ভিড়ছে ঠিকই কিন্তু এগুলি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বাইরে। মোট সাতটি জাহাজ কোম্পানির ৬৯ টি জাহাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তাই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকা জাহাজগুলো রাশিয়া থেকে সরাসরি আসছে। যদিও বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম কালের কণ্ঠের দাবি অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা জাহাজগুলো রাশিয়া থেকে পণ্য নিয়ে ভারত ট্রানজিট হয়ে মোংলা বন্দরে আসছে।

এই যে বারংবার রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের কথা হচ্ছে, এটা কিন্তু ভারতের কাছে অত্যন্ত ইম্পরট্যান্ট। ২০১১ সালে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ এই বিষয়ে একটা চুক্তি করে। তার কয়েক বছর পরেই, এই পারমাণবিক কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ, নির্মাণ আর পরিচালনার সহযোগিতার উদ্যোগে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি হয় ভারতের। আবার তার উপর ভিত্তি করে স্বাক্ষরিত হয় বাংলাদেশ-রাশিয়া-ভারত ত্রিপক্ষীয় চুক্তি। এটি এমন প্রকল্প যেখানে ভারত প্রথম নিজে দেশের গণ্ডির বাইরে পারমাণবিক সহযোগিতায় চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। অথচ সেই রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের জিনিস যখন মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকায় জাহাজ নিয়ে ভিড়তে চেয়েছিল, তখন ভারত চাইলেও হলদিয়া বন্দরে আশ্রয় দিতে পারেনি। রাতারাতি বদলে গিয়েছিল সিদ্ধান্ত। অবশেষে বাধ্য হয়ে মাঝ সমুদ্রে জাহাজটি পণ্য খালাস করে। তারপরে শুরু হয় রাশিয়া আর বাংলাদেশের ভুল বোঝাবুঝি। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে মস্কো, তখনই বোঝা যায় রাশিয়া ঠিক কতটা অসন্তুষ্ট।

বর্তমানে রাশিয়ার বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেকটা পিচ্ছিল পথের মতো। যেখানে বিন্দুমাত্র ব্যালেন্স হারালে চলবে না। কিন্তু প্রশ্ন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের কাছে সমস্যার কিন্তু ভারতের কাছে নয় কেন? তাহলে কি বাংলাদেশ দুই দেশের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না? আসলে চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধের কিছুটা হলেও সুযোগ নিচ্ছে ভারত। যে সময়টা যুদ্ধের কারণে রাশিয়া কোণঠাসা ছিল সেই সময় ভারত রাশিয়ার থেকে ব্যাপক হারে তেল কিনেছে। ব্রিটেন রাশিয়ার থেকে তেল না কিনলেও ভারত থেকে তেল নিয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতের গুরুত্ব অনেকটা। পশ্চিমারা জানে ভারতের উপর কঠিন নিষেধাজ্ঞা চাপানো হলে তার ফল ভালো হবে না। ভারতের রাশিয়ার উপর রয়েছে সামরিক নির্ভরতা। অথচ এখনো পর্যন্ত ভারত যুদ্ধের ক্ষেত্রে রাশিয়াকে সাপোর্ট করেনি। দক্ষিণ এশিয়ার যতগুলো দেশ আছে তার মধ্যে অর্থনৈতিক দিক থেকে এগিয়ে ভারত। আর তাই ভারতকে খুব একটা কেউ ঘাঁটাতে চাইছে না। ভারতের অবস্থানকে মেনে নিয়েছে রাশিয়া সহ গোটা ইউরোপ।

কিন্তু বাংলাদেশকে ব্যালেন্স করে চলতে হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপে পড়ে কখনো রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে পারে না। কারণ যে কোন দেশের পররাষ্ট্র নীতি গড়ে ওঠে কিন্তু রাষ্ট্রীয় স্বার্থের ভিত্তিতে। যেখানে জড়িয়ে আছে বাণিজ্যিক সম্পর্ক। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে যেমন বাংলাদেশ রাগাতে পারবে না, তেমনি রাশিয়ার বিপক্ষে অবস্থান নেয়া সম্ভব নয়।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version