Salt Farming Process: কীভাবে লবণ তৈরি হয়? জানলে গা গুলিয়ে উঠবে!

।। প্রথম কলকাতা ।।

Salt Farming Process: এক চিমটি লবণে (Salt) আছে একরাশ তৃপ্তি। একটু লবণ ছাড়া তরকারি কেমন যেন বিস্বাদ, পানসে। যতই টাটকা সবজি মাছ মাংস নামিদামি মশলা দিয়ে রান্না করুন না কেন, লবণ ছাড়া সব বেকার। ভেবে দেখেছেন এই লবণ কোথা থেকে তৈরি হয়? রান্নাঘরের অত্যন্ত মহামূল্যবান এই জিনিস সমুদ্রের জল থেকে আসে, তা কম বেশি অনেকেই জানেন। কিন্তু বানানোর পদ্ধতি জানেন? লবণ (Salt) ফ্যাক্টরিতে হয়, নাকি চাষ করা হয়? লবণের সঙ্গে চাষ শব্দটা কেন জুড়লো? লবণ (Salt) বানানোর পদ্ধতি জানলে গা গুলিয়ে উঠবে!

পদ্ধতি

লবণ শুধু খাবার নয়, ড্রাইং, কাপড় তৈরি, চামড়া শিল্পেও ব্যবহার করা হয়। লবণ চাষি কথাটির সঙ্গে কম বেশি আপনি পরিচিত। যারা লবণ চাষ করেন তাদের লবণ চাষি বলা হয়। সমুদ্রের ধারে ফাঁকা মাঠে থাকে লবণ রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান কিংবা ফ্যাক্টরি। প্রথমে সমতল জমিকে চারিপাশে কেটে মাটির আল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। অর্থাৎ উঁচু বেড়ার মত কয়েকটি ছোট ছোট প্লট আকারে জমিকে ভাগ করে নেওয়া হয়। সেই জমির উপর বিছিয়ে দেওয়া হয় পলিথিন। নদী বা সমুদ্র থেকে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে নোনা জল সেই প্লট গুলিতে ভর্তি করা হয়। এইভাবে টানা রোদে জল রেখে দেওয়া হয় প্রায় ৬ থেকে ৮ দিন। কড়া রোদে ধীরে ধীরে জল বাষ্পীভূত হয়ে লবণ ওই পলিথিনের উপর থিথিতে পড়ে। জল উবে যায়, আর লবণ ওই পলিথিনলনের উপর পড়ে থাকে। লবণ চাষিরা সেই লবণ একত্রিত করতে একটি বড় তক্তা কাঠের সাহায্য নেয়। এই পদ্ধতি দেখলে আপনার গা গুলিয়ে উঠবে। ভাববেন লবণ চাষিরা খালি পায়ে, খোলা আকাশের নিচে এমনভাবে লবণ তৈরি করছেন, যা খেলে পেটের গন্ডগোল নিশ্চিত। কিন্তু যেমনটা ভাবছেন ঠিক তেমনটা নয়। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে বাজারে নামি দামি নানান ব্র্যান্ডের লবণ পাওয়া যায়। সেখানে বিভিন্ন দামে লবণ পাবেন। এই লবণ জমি থেকে সংগ্রহ করে সোজা চলে যায় ফ্যাক্টরিতে। বাজার থেকে যে প্যাকেট লবণ কেনেন তা অত্যন্ত মিহি হয়। কিন্তু জমি থেকে যে লবণ নিয়ে যাওয়া হয় তা বড় বড় দলা পাকিয়ে থাকে। আগে সনাতন পদ্ধতিতে লবণ চাষ করা হত। তখন সরাসরি জল শুকিয়ে মাটি থেকে লবণ পাওয়া যেত। সেই পদ্ধতি প্রচুর কষ্টকর এবং অস্বাস্থ্যকর। সেই লবণের রং হত কালো। তাতে লেগে থাকত মাটি আর ময়লা। এখন বাজারে পাবেন স্বচ্ছ লবণ। জমি থেকে ওই দলা পাকানো লবণ চলে যায় ফ্যাক্টরিতে। সেই মোটা মোটা লবণ মেশিনের সাহায্যে ভালোভাবে পিষে নেওয়া হয়। তারপর পরিষ্কার করার জন্য জল আর লবণ একত্রে মিশিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলা হয়। তখন আর নোংরা আবর্জনার ভয় থাকে না। পুনরায় মেশিনের সাহায্যে লবণ থেকে জল আলাদা করে নেওয়া হয়। তারপর মেশানো হয় আয়োডিন। এতগুলি ধাপ পেরিয়েও কিন্তু লবণ থাকে এক্কেবারে ভিজে। তাই মেশিনের মাধ্যমে লবণ ভালোভাবে শুকিয়ে ঝুরঝুরে করে নেওয়া হয়। সেই মিহি লবণ নির্দিষ্ট প্যাকিং মেশিনে চলে যায় কোম্পানির বিভিন্ন রকম প্যাকেটিংয়ের জন্য।

ভারতে লবণ চাষ

লবণ চাষে প্রচুর অসুবিধা রয়েছে। একটু ঝড় বৃষ্টি হলে কিংবা শীতে কুয়াশা হলে লবণ চাষ ভালো হয় না। তাই এই ব্যবসাটি অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন। লবণ চাষের মোক্ষম সময় হল ফাল্গুন-চৈত্র মাস। কারণ এই সময়ে ভালো রোদ পাওয়া যায়। লবণ চাষের কথা উঠলেই পয়লা নম্বরে চলে আসে ভারতের গুজরাতের নাম। প্রতিবছর ভারতবর্ষে প্রায় ২২ মিলিয়ন টন নুন তৈরি হয়, যার মধ্যে গুজরাতে তৈরি হয়, তার ৭৬ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১৬ মিলিয়ন টন। একসময় ভারতবর্ষে মোট লবণ উৎপন্ন হত ১.৯ মিলিয়ন টন, সময়টা তখন ১৯৪৭ সাল। এখনকার পরিসংখ্যান যে কাউকে অবাক করে দেবে।

বাংলাদেশে লবণ চাষ

বাংলাদেশের মোট চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ লবণ আসে কক্সবাজার থেকে। কক্সবাজারে বিভিন্ন এলাকায় লবণ চাষ হয়। সেখানে অন্য কোন ফসল চাষ হয় না। সেই পঞ্চদশ শতাব্দীতে কক্সবাজারের লবণ চাষ শুরু হয়েছিল। তারপর সপ্তদশ শতাব্দীতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাণিজ্যিকভাবে এখানে লবণ ব্যবসায় সাহায্য করে। কক্সবাজারে লবণ চাষের সংখ্যা প্রায় ৪৩ হাজারের বেশি।

লবণ চাষের সঙ্গে জড়িত বহু কৃষক। যাদের গোটা জীবন কেড়ে নিয়েছে নুনে ভেজা দুনিয়া। সেই শৈশব থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত কাটছে লবণের জমিতে। খুব কুয়াশা কিংবা ঝড় বাদলার দিনে লবণ চাষিদের পরিশ্রম একটু কম হয়। কিন্তু চিন্তা করতে হয় পেটের ভাতের। এনারা না থাকলে আমাদের গোটা হেঁসেল হত এক্কেবারে আলোনা।

লবণ এমন একটি আয়নিক যৌগ যাকে বাদ দিয়ে আপনি চলতে পারবেন না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ আয়োডিনের অভাবজনিত রোগে ভুগছেন। আবার বহু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কোন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি যদি দৈনিক ৫ গ্রামের কম লবণ গ্রহণ করেন তাহলে তিনি অনেক রোগ থেকে বেঁচে যান। যেমন কিডনির সমস্যা, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ প্রভৃতি। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বেশিরভাগ মানুষ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৯ থেকে ১২ গ্রাম লবণ গ্রহণ করে। যদি বিশ্ববাসী লবণ গ্রহণের পরিমাণ একটু কমিয়ে দেন, তাহলে বছরে গড় মৃত্যু কমতে পারে প্রায় ২৫ লক্ষ। বিশেষ স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী এই লবণ গ্রহণের পরিমাণ ৩০ শতাংশ কমাতে বলেছে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version