Indian Army in Siachen Glacier: সিয়াচেনের -৪০° তাপমাত্রায় জওয়ানরা কীভাবে রান্না করেন? রয়েছে স্নানের বিশেষ টেকনিক!

।। প্রথম কলকাতা ।।

Indian Army in Siachen Glacier: ডিম এখানে পাথরের মতো, আছার মারলেও ভাঙবে না। তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস ৪০ ডিগ্রি। জুন জুলাই মাসেও এই জায়গায় ঠান্ডা মানুষকে বরফের পুঁটলি বানিয়ে দেয়। রক্ত মাংস জমিয়ে দেওয়া ঠান্ডায় বারো মাস ভারতীয় জওয়ানরা দেশ রক্ষায় পাহারা দিচ্ছেন। জায়গাটি সিয়াচেন। প্রায় ২৪ হাজার ফুট উঁচুতে শান্তিতে উঠছে ভারতের তেরঙ্গা। কিন্তু কোনদিন ভেবেছেন, মাইনাস ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় যেখানে চারিদিকে শুধু বরফের স্তুপ সেখানে জওয়ানরা কীভাবে ডিউটি পালন করেন? তারা কি খায়? আদৌ কি রান্না করা যায়? এমন পরিস্থিতিতে জওয়ানরা কীভাবে স্নান করেন? এসব জানতে হলে এই প্রতিবেদনটি পুরোটি দেখুন। সিয়াচেনের এই ভিডিওটি দেখার পর গায়ে কাঁটা দেবে, জওয়ানদের স্যালুট জানাতে বাধ্য হবেন।

 

১৯৮৪ সালে সিয়াচেনে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষে উভয় দেশে তাদের সৈন্য হারিয়েছে। ২০০৩ সালে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বিরতির পর অতন্ত্র প্রহরীর মত পাহারা দিচ্ছে ভারতীয় জওয়ানরা। আশ্চর্যের বিষয় হল, এখানে সৈন্যরা প্রতিপক্ষ নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়, কারণ তাদের প্রধান শত্রু আবহাওয়া। এত উঁচুতে অক্সিজেনের ঘাটতিতে বেঁচে থাকা সবথেকে বড় সমস্যা। সৈনিকরা ভয়াবহ তুষার ঝড়ে যে কোন মুহূর্তে বরফের নিচে চাপা পড়তে পারে । কম অক্সিজেনে সৈনিকরা ঠিক কিভাবে বেঁচে থাকবে, সেই বিষয়ে আগে থাকতেই বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষের সৈনিকদের ব্যাগে দেওয়া হয় প্রয়োজনীয় নানান জিনিস। সেই তালিকায় থাকে বরফ কাটার যন্ত্র, স্লিপিং ব্যাগ, অক্সিজেন সিলিন্ডার, কেরোসিন তেল, হাত পায়ের মোজা ইত্যাদি। সব মিলিয়ে ব্যাগের ওজন হয় প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কেজি। সব থেকে বেশি প্রয়োজনীয় জিনিস হলো কেরোসিন। ফোনে চার্জ দেওয়া, বরফ গলানো, জল ফোটানো, ঘর গরম রাখার মতো কাজে কেরোসিন তেল ব্যবহার করা হয়। ওই ঠান্ডা পরিবেশে কোন তৈলাক্ত খাবার রান্না করা হয় না। এমন খাবার রান্না করা হয় তার কোন স্বাদ থাকে না। বহু সৈনিক প্রথম প্রথম ওই খাবার খেয়ে বমি করে ফেলেন। এই আবহাওয়ায় সামান্য আলু সিদ্ধ হতে প্রায় ৮ থেকে ১০ টা সিটি দিতে হয়।

 

সিয়াচেনের পুরো জোনে প্রায় ১০৮টি ফরোয়ার্ড মিলিটারি পোস্ট রয়েছে. এছাড়াও রয়েছে আর্টিলারি অবজারভেশন পোস্ট। সব থেকে উঁচু পোস্ট হল বানা পোস্ট। যার উচ্চতা ২০,৫০০ ফুট। বানা পোস্টে সৈনিকদের পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ২০ দিন। সিয়াচেনে প্রায় ১০ হাজারের বেশি সেনা মোতায়েন করা রয়েছে। যাতে সহজেই অপারেশন চালানো যায়। এখানে থাকা সৈনিকদের কাছে সব থেকে খতরনাক হল হাড় হিম করা ঠান্ডা। কখনো তুষার ঝড়, আবার কখনো বা আচমকা নেমে আসে বরফের ধস, যা জাওয়ানদের সবথেকে বড় দুশমন।

• বিশেষ ট্রেনিং
জওয়ানরা যে ব্যাটেলিয়নের হোক না কেন, সিয়াচেনের ডিউটি দেওয়ার আগে বিশেষভাবে ট্রেনিং দেয়া হয়। এই ট্রেনিং হয় কাশ্মীরের হাই অলটিটিউড ওয়ার ফেয়ার স্কুলে কিংবা সিয়াচেনের ট্রেনিং ক্যাম্পে। এখানে কয়েক মাস থাকতে হয়। শেখানো হয় কিভাবে প্রাণঘাতী আবহাওয়ার সঙ্গে একজন সৈনিক লড়াই করবেন। একের পর এক দেওয়া হয় আইস ক্রাফট, রক ক্রাফট, রেপলিং, স্টিম ক্রসিং এর ট্রেনিং। যা সৈন্যদের স্ট্যামিনা বাড়ায়। শেষে হয় বিশেষ মেডিক্যাল চেকআপ। যারা সম্পূর্ণভাবে ফিট তাদেরকেই পাঠানো হয় সিয়াচেনে। এখানে যে জওয়ানদের মূলত তিন থেকে চার মাস থাকতে হয়। সেখানেও চলে কয়েক মাসের ট্রেনিং। তারপরে পাঠানো হয় ফরমাল পোস্টে।

• বিশেষ পোশাক
সিয়াচেনে কর্তব্যরত সেনাদের দেওয়া হয়, বিশেষ পোশাক। এই পোশাকের খরচ পরে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা। চোখে থাকে বিশেষ গগলস। এই বিশেষ পোশাকে রয়েছে স্নো ব্লাইন্ডনেস প্রটেকশন এবং উইন্ড প্রটেকশন। এই পোশাক বিশেষ আধুনিক টেকনিকে তৈরি হয়। যা ঠান্ডা হাওয়া এবং তুষারপাতের হাত থেকে জওয়ানদের বাঁচায়। সৈন্যরা পায়ে ব্যবহার করেন বিশেষ জুতো। যার ওজন প্রায় তিন কেজির বেশি। এই জুতোর নিচে দেওয়া থাকে ছোট ছোট কাঁটা। বলা হয় সিয়াচেনের সৈনিকদের জুতো আর পোশাক তৈরিতে সরকারের খরচ হয় প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা। অথচ এত টাকা খরচ করার পরেও সৈনিকরা ঘুমানোর ক্ষেত্রে বা খাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ অসুবিধায় পড়েন।

সৈন্যদের যখন সিয়াচেনের ডিউটিতে পাঠানো হয় তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাতেই তারা গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলেন। কারণ দিনে ধসের সম্ভাবনা বেশি। গোটা ইউনিটের কোন সৈনিক যাতে দিক হারিয়ে না ফেলেন, তাই প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকের কোমরে দড়ি দিয়ে বাঁধা থাকে। ইউনিটের মধ্যে একজন সৈনিকের ছোট্ট ভুল পুরো ইউনিটকে ভয়ঙ্কর বিপদে ফেলতে পারে।

• বরফের মধ্যে খুঁজতে হয় খাবার
সিয়াচেনে ছোট্ট একটি হেলিপ্যাড রয়েছে। এখানে হেলিকপ্টার ল্যান্ডিং করে সৈনিকদের রেশন দিয়ে যায়। কিন্তু সমস্যা হল যখন আবহাওয়া খারাপ থাকে তখন হেলিকপ্টারে করে রেশন নিচে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়। সৈনিকরা বরফের মধ্যে গিয়ে সেই খাবারের জিনিসগুলি খুঁজে খুঁজে নিয়ে আসে। এখানে হেলিকপ্টার বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। এখানে রান্না করা বেশ কষ্টকর। সমস্ত সবজির জমে বরফের মতো জমে শক্ত পাথর হয়ে যায়। ডিম শক্ত ইঁটের মতো, যা ভাঙা দুষ্কর। সামান্য আলু সিদ্ধ করতে কাল ঘাম ছোটে। প্রতিবছর সিয়াচেনের জন্য শুধু খরচ হয় ২ লক্ষ লিটার কেরোসিন। এখানে জওয়ানদের জলের উৎস বলতে বরফ। পরিষ্কার বরফ একত্রে করে গলিয়ে পানীয় এবং রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়।

 

• বিশেষ টয়লেট এবং জেল
এখানে সৈনিকদের জন্য বিশেষভাবে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এস্টাব্লিসমেন্ট (DRDE) এর দ্বারা ডিজাইন করা টয়লেট আছে। এছাড়াও এখানে সৈনিকরা অস্থায়ী টয়লেট বানিয়ে দেন। একমাস পর্যন্ত অনেকেই স্নান করেন না। তার পরিবর্তে ব্যবহার করে জেল বেসড বার্থ প্রোডাক্ট। সিয়াচেনে এক একজন সৈনিকদের ডিউটি করতে হয়। প্রায় ৯০ দিন পর যখন তারা ফিরে আসেন তখন ত্বক ফেটে যায়। এক এক জনের ওজন বেশ কয়েক কেজি পর্যন্ত কমে যায়। ত্বকে দেখা দেয় লাল লাল ইনফেকশন। পাশাপাশি রয়েছে ফুসফুসের সমস্যা, মস্তিষ্কের সমস্যা। হাত-পায়ের আঙুলগুলি ফুলে লাল হয়ে যায়। সাথে জ্বালা যন্ত্রণা তো রয়েছে।

৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই হিমবাহের ভারতীয় সেনারা সুযোগ থাকলেও নিচে নেমে আসতে পারেন না। কারণ তারা ভালোভাবেই জানে সামান্য ফাঁক পেলেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরা আক্রমণ করতে পারে। প্রত্যেকদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই সেনাদের নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। টুথপেস্ট পর্যন্ত জমে যায়। কোন ফলই তারা খেতে পারেন না। এখানে বেঁচে থাকাটাই বিস্ময়কর। সিয়াচেন যে কোন মুহূর্তে ঘণ্টায় একশ মাইল বেগে ঝড় উঠতে পারে। এই ঝড় কখনো তিন সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। যখন তুষারঝড় হয় তখনও তাঁবুতে বসে থাকার কোন উপায় নেই। কারণ সেই সময় পুরো শিবির বরফের তলায় জমে যেতে পারে। ওই ঝড়ের মধ্যেই সেনাদের বেলচা নিয়ে বরফ সাফ করতে হয়। সিয়াচেনের এই ভয়ঙ্কর পরিবেশে যে জওয়ানরা শত্রুদের থেকে ভারত মাতাকে রক্ষা করছেন, যাদের জন্য আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছি, তাদেরকে ঈশ্বরের দূত বললে ভুল হবে না।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version