।। প্রথম কলকাতা ।।
Rajendra Prasad: একাধারে একজন স্বাধীনতা আন্দোলনকারী, আইনজীবী ও পণ্ডিত ছিলেন তিনি। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন। পরবর্তীতে বিহার ও মহারাষ্ট্রের একজন অন্যতম নেতা হয়ে উঠেছিলেন। ১৯৫০-এ ভারত প্রজাতন্ত্র ঘোষিত হওয়ার পর গণপরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন রাজেন্দ্র প্রসাদ। তাঁর জন্ম বিহারের সিওয়ানে। পিতা সংস্কৃত ও পারশি ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন। ছোট থেকেই পড়াশুনায় তুখর ছিলেন রাজেন্দ্র প্রসাদ। তাঁকে ছোটতে একজন মুসলিম মৌলবি পণ্ডিত পড়াতেন। ১৯০২ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। এর পর ১৯০৭-এ স্নাতকোত্তর পাশ করেন। বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষকতার কাজ করেছেন।
বিহারের মুজাফফরপুরের একটি কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি কলকাতার সিটি কলেজেও অধ্যাপনা করেছেন বেশ কিছুদিন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্বর্ণপদক সহ স্নাতকোত্তর পাশ করেছিলেন। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। কলকাতায় যে সময় জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক সভা চলছিল, সেই সময় কংগ্রেসের স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করেছিলেন। কিছু সময় কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবেও কাজ করেছেন এই ব্যক্তিত্ব। ছাত্রাবাস্তাতেই রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন তিনি। ১৯১১-তে জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য হন রাজেন্দ্র প্রসাদ। মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে তাঁর আলাপ হয় ১৯১৬ সালে। তার পর গান্ধীজি তাঁকে কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে চম্পারনে পাঠিয়েছিলেন।
আইনজীবীর পেশা ছেড়ে রাজনীতির ময়দানে পা রাখেন রাজেন্দ্র প্রসাদ। ১৯৪২-এর অগাস্ট, আন্দোলনের সময় গ্রেফতার হন। জেলে বসে লিখেছিলেন আত্মজীবনী। অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার পর তাঁর আলাপ হয় রাহুল সংস্কৃত্যায়নের সঙ্গে। তিনি রাজেন্দ্র প্রসাদের দ্বারা প্রচণ্ডভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। ১৯৪৫-এর ১৫ জুন জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয় তাঁকে। ১৯৪৬-এ জহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে যে সরকার গড়ে তোলা হয়েছিল, তার খাদ্য এবং কৃষি বিভাগের দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছিল তাঁর কাঁধে। আবার ওই একই বছর তাঁর আত্মজীবনী ‘আত্মকথা’ প্রকাশিত হয়েছিল। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বিপ্লবী প্রকাশনা সংস্থা ‘সার্চলাইট’ এবং ‘দেশ’-এর জন্য লেখালেখি করতেন রাজেন্দ্র প্রসাদ।
ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি তিনি। ইতিহাস অনুযায়ী তিনি একমাত্র রাষ্ট্রপতি যিনি দু’বার ভোটে জিতে, রাইসিনা গিয়েছেন। এমনকি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে জেতার রেকর্ড রয়েছে তাঁর। ১৯৫৭ সালে তিনি মোট ভোটের ৯৮.৯৯ শতাংশ পেয়েছিলেন। তার আগে ১৯৫২-তে প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ৮৩.৮১ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতেছিলেন রাজেন্দ্র প্রসাদ। তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে তিনি জাতীয় কংগ্রেস ছেড়ে দেন। সংসদের সদস্যদের জন্য নতুন নির্দেশিকা তৈরি করেছিলেন, যা আজও অনুসরণ করা হয়। ১৯৬২-তে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ভারতরত্ন দেওয়া হয়েছে তাঁকে। ১৯৬৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর স্মৃতিতে পাটনা শহরে রাজেন্দ্র স্মৃতি সংগ্রহালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম