।। প্রথম কলকাতা ।।
Ratan Tata: ভারতের জনপ্রিয় শিল্পপতিদের মধ্যে তিনি একজন। ১৯৩৭-এর ২৮ ডিসেম্বর জন্ম হয় তাঁর। শৈশব থেকেই খুব কাছ থেকে ব্যবসাকে উপলব্ধি করেছেন। নভাল টাটার ছেলে রতন টাটা (Ratan Tata), যিনি টাটা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জামশেদজি টাটার (Jamsetji Tata) দত্তক নেওয়া নাতি। ছোটবেলায় দিদার কাছে বড় হয়েছেন তিনি, পড়াশোনার জন্য পা রাখেন মুম্বইতে।
কর্নেল ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ আর্কিটেকচার এবং হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছেন তিনি। বাবা-মার বিচ্ছেদের কারণে আলাদা থাকতেন। ধনী পরিবারে জন্ম হয়েও ছোটবেলা খুব একটা ভালো কাটেনি রতন টাটার। মুম্বইতে পড়াশুনা শেষ করে ১৯৬১-তে প্রথম টাটা গ্রুপের (Tata Group) স্টিল কোম্পানিতে যোগ দেন তিনি। তিনি হন টাটা গ্রুপের পঞ্চম চেয়ারম্যান। মাত্র ৬ জন চেয়ারম্যান রয়েছেন, যার মধ্যে ২জন টাটা পরিবারের সদস্য নন। এই টাটা গ্রুপকে দেশের বিশ্বস্ত কোম্পানী বলে মনে করা হয়। ১৯২৭ সালে প্রথমবারের মতো ভারতে লবণ তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল গুজরাটের ওখাতে, যা ১৯৩৮-এ কিনেছিলেন জেআরডি টাটা। তার সাথেই শুরু হয়েছিল টাটা সল্টের (Tata Salt) পথ চলা।
২০০৮-এ মাত্র ১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা গাড়ি ‘ন্যানো’ (Nano) চালু করেছিলেন রতন টাটা। ১৯৯৭ সালে তিনি এই স্বপ্নটি দেখেছিলেন। যাতে একজন সাধারণ মানুষ ১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে একটি গাড়ি কেনার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। দেশ ছাড়িয়েও বিদেশের মাটিতে তিনি পা ফেলেছেন। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির মুখেও তাঁর নাম শোনা যায়। তরুণদের কাছে তিনি অনুপ্রেরণার জায়গা। ছেলেবেলা থেকেই বেশ মেধাবী ছিলেন তিনি। তবে এই সফল ব্যবসায়ীর শুরুটা হয়েছিল ছোটখাটো চাকরি দিয়ে। পড়াশুনা শেষ করে আগে আমেরিকার (America) ‘জোনস অ্যান্ড ইমনস’ নামে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে কিছুদিন কাজ করেন। তারপর টাটা গ্রুপের কর্মচারী হিসেবে নিজের কেরিয়ার শুরু করেন। যেখানে তাঁর দায়িত্ব ছিল, বিস্ফোরণের চুল্লি এবং চাউলের পাথর পরিচালনা করা।
নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি আজ এই জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তবে অত্যন্ত মাটির মানুষ রতন টাটা। ২০০৮-এ মুম্বই তাজ হোটেলে (Taj Hotel) জঙ্গি হামলায় অনেকেই স্বজন হারা হয়েছেন। আহত হয়ে হারিয়েছেন চাকরি, সেই সময় সকল কর্মীদের পাশে থেকেছেন টাটা। এমনকি কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজে উপস্থিত থেকে সাহায্য করেছেন। জাতীয়-আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন ভারতের বিখ্যাত এই শিল্পপতি। ২০০০ সালে ‘পদ্মভূষণ’ এবং ২০০৮-এ ‘পদ্মবিভূষণ’ সম্মানে সম্মানিত করা হয় তাঁকে।
শিল্পজগতে তাঁর নাম-ডাক থাকার সঙ্গে তিনি একজন সমাজসেবী এবং মানব দরদি মানুষ। মানুষের পাশে সবসময় দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। সমাজের কল্যাণেই মূলত ব্যবসাকে দাঁড় করিয়েছেন তিনি, যা নতুন প্রজন্মকে আগামী দিনে পথ দেখাতে সাহায্য করবে। সারা জীবন ধরে তিনি প্রমাণ করেছেন জেদ, দৃঢ় সংকল্প আর মানুষের প্রতি কল্যাণময় চিন্তা-ভাবনা থাকলে বিশ্ব জয় করা সম্ভব। তিনি জনহিতকর কাজের জন্য বেশি পরিচিত। তাঁর কাছে শিল্প, ব্যবসা এইগুলি শুধুমাত্র মুনাফার জন্য কোনও সময়েই ছিল না। দেশ, সমাজকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করাই টাটা গোষ্ঠীর মূলে রয়েছে। তিনি টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান পদে থেকে পারিবারিক ব্যবসাকে বহুগুণ বৃদ্ধি করেছেন। সেইসঙ্গে আধুনিক যুগের বিভিন্ন বড় বড় ব্যবসার মূলে ছিল তাঁর সাহায্যের হাত। লেন্সকার্ট (Lenskart), পেটিএম (Paytm), ওলা ইলেকট্রিক মোবিলিটি প্রাইভেট লিমিটেড সহ প্রায় ৫০ টিরও বেশি স্টার্টআপে টাকা বিনিয়োগ করে ব্যবসা দাঁড় করাতে সাহায্য করেছেন রতন টাটা। এমনকি আজও নতুন ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে পরামর্শ দেন তিনি। আজ এই মহান ব্যক্তিত্বের জন্মদিন। জন্মদিনের শুভেচ্ছা রতন টাটাকে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম