Pranab Mukherjee: সাংবাদিক থেকে দেশের রাষ্ট্রপতি, জন্মদিনে ফিরে দেখা প্রণব মুখোপাধ্যায়কে

।। প্রথম কলকাতা।।

Pranab Mukherjee: ১৯৩৫-এর আজকের দিনেই বীরভূমের কীর্ণাহারের মিরাটি গ্রামে জন্মেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। ইন্দিরা গান্ধীর ঘনিষ্ঠ এই সদস্য রাজনীতির ময়দানে পা দেওয়ার আগে শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতা দিয়ে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন। নিজের রাজনৈতিক জীবনে বহু মাইলস্টোন ছুঁয়েছেন তিনি। আজ, তাঁর জন্মদিন।

২০১২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে প্রণব মুখোপাধ্যায় ছিলেন ভারতের অর্থমন্ত্রী ও কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় সমস্যা-সমাধানকারী নেতা। পিতার নাম কামদাকিঙ্কর মুখোপাধ্যায় ও মাতার নাম রাজলক্ষ্মী দেবী। বাবা ১৯২০ সাল থেকেই ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সক্রিয় সদস্য ছিলেন । ব্রিটিশ শাসনকালে ১০ বছর কারারুদ্ধ ছিলেন তিনি। পরে কামদাকিঙ্কর অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটি এবং পশ্চিমবঙ্গ বিধান পরিষদের সদস্য হয়েছেন। প্রণব মুখোপাধ্যায় সিউড়ির বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র ছিলেন। ওই কলেজ সেই সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল।

‘দেশের ডাক নামে’ একটি পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন প্রণব বাবু। সেইসঙ্গে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের ট্রাস্টি ও পরে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের সভাপতি হয়েছেন। কর্মজীবনের প্রথম দিকে হাওড়া জেলার বাঁকড়ায় অবস্থিত ‘বাঁকড়া ইসলামিয়া হাইস্কুল’-এ দু’বছরের জন্য শিক্ষকতা করেছেন এই ব্যক্তি। ১৯৬৩-৬৯ পর্যন্ত তিনি দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার নিকটস্থ বিদ্যানগর কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন। পাঁচ দশক ভারতীয় সংসদের সদস্যের ভূমিকায় নিজের দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন। ১৯৬৯-এ প্রথমবার কংগ্রেস দলের প্রতিনিধিস্বরূপ রাজ্যসভায় নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ১৯৭৫, ১৯৮১, ১৯৯৩, ১৯৯৯ সালেও তিনি রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।

তাঁর মতো ব্যক্তিত্ব খুব কমই হয়ে থাকে। যে কারণে নিজের কাজের জন্য দল ও দলের বাইরে থেকেও সমান সম্মান পেয়েছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। ১৯৭৩-এ কেন্দ্রীয় শিল্পোন্নয়ন উপমন্ত্রী হিসেবে তিনি প্রথম ক্যাবিনেটে যোগ দেন। ১৯৮২-৮৪ পর্যন্ত ভারতের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর ৮৪-তে ইউরোমনি পত্রিকার একটি সমীক্ষায় তাঁকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পাঁচ অর্থমন্ত্রীর মধ্যে অন্যতমের শিরোপা দেওয়া হয়েছে। তবে এত কিছুর মাঝেও রাজীব গান্ধী একসময় তাঁকে নিজের ক্যাবিনেটে স্থান দেন নি। কিছুকালের জন্য কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল তাঁকে। ‘রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস’ নামে নিজস্ব একটি দল গঠন করেছিলেন সেই সময়।

১৯৮৯-এ রাজীব গান্ধীর সঙ্গে মিটমাট করে নেওয়ার পর, ‘রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস’ নিয়ে ভাবনা চিন্তা করেন। বরাবর তাঁর কাছে গুরুত্ব পেয়েছে কংগ্রেস। পি. ভি. নরসিমা রাও তাঁকে পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান নিযুক্ত করলে, রাজনৈতিক কর্মজীবনের পুনরুজ্জীবন ঘটে। ২০০৪-এ কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট কেন্দ্রে সরকার গঠন করে। এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ রাজ্যসভার সদস্য হওয়ায়, প্রণব মুখোপাধ্যায় লোকসভায় দলের হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বিভিন্ন সময়ে প্রতিরক্ষা, অর্থ, বিদেশ, রাজস্ব, জাহাজ চলাচল, পরিবহন, যোগাযোগ এবং শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। ২০০৮-এর ১০ অক্টোবর প্রণব মুখার্জি ও ইউএস সেক্রেটারি অফ স্টেট কন্ডোলিজা রাইস সেকশন ১২৩ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। নিজের দলে প্রণব মুখোপাধ্যায় একজন ব্যতিক্রমী সম্মানের অধিকারী। সোনিয়া গান্ধী অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাজনীতিতে যোগদান করতে সম্মত হলে, তাঁর প্রধান সহায়কের ভূমিকা পালন করেছিলেন প্রণব বাবু। তাঁর জীবনে ইন্দিরা গান্ধী যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। রাজনৈতিকভাবে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির অধিকারী তিনি। কিন্তু তাই বলে কি রাজনীতিতে দুর্নীতি হয়নি, হয়েছে। তবে তাঁর মতো মানুষ খুব কমই পাওয়া গিয়েছে। ভারতীয় রাজনীতিতে তিনি চাণক্য। যে কোনও কঠিন পরিস্থিতি সামলেছেন বুদ্ধির জোরে। ৯ অগাস্ট ২০২০-র রাতে নিজের দিল্লির বাড়িতে বাথরুমে পড়ে গিয়েছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। তারপরে তাঁর শরীরে একাধিক সমস্যা দেখা দেয়। এরপর ২০২০-র ৩১ অগাস্ট জীবনযুদ্ধে হার মানেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version