বাংলাদেশী পর্যটকদের ভোগান্তি শেষ ? বড় বদল কলকাতায়, দেরীতে হলেও বোধদয়

।। প্রথম কলকাতা ।।

বাংলাদেশী পর্যটকদের জন্য কতো বড় সেফ জোন কলকাতা! তাহলে কি এবার আর ঠকতে হবে না বাংলাদেশীদের? পড়তে হবে না দালালদের খপ্পরে? ট্রান্সসিট রুট হিসেবে বাংলাদেশীদের কাছে কলকাতার গুরুত্ব আরো বাড়বে? এতো এতো কড়া পাহারা, পর্যটকবান্ধব কাকে বলে! মধ্য কলকাতা নমুনা হয়ে উঠছে। উদ্যোগ ভালো, কিন্তু আদৌ এই প্ল্যানিং এর বাস্তবায়ন হবে কি? বাংলাদেশিরা মুখ ফেরালে, কী ঘটবে? আন্দাজ আছে? গুড সাইন, ওপার বাংলার কথা ভেবেই আমূল বদল মহানগরীর বুকে। অবশেষে বাংলাদেশী পর্যটকদের অভিযোগ আমল পেল? কম ভোগান্তি তো হয় না বাংলাদেশীদের। কলকাতার বুকে বাংলাদেশীদেরকে কি কি না ফেস করতে হয়। যেমন বাস থেকে নামার পরেই আবাসিক হোটেলগুলোতে যাওয়ার আগে দালালদের মুখোমুখি হতে হতো। একই রুম কোথাও মিলছে ১৫০০ তে, আবার কোথাও ২২০০ টাকায়। সঙ্গে দালালকেও টাকা দিতে হতো।

রিক্সা ভাড়া থেকে শুরু করে খাবারের দোকানগুলোতেও একেক জায়গায় একেক রকম রেট নেওয়া হতো বাংলাদেশীদের কাছ থেকে। চায়ের দোকানগুলোতেও সঠিকভাবে বসা বা দাঁড়ানোর মতো জায়গা নেই। একইসঙ্গে মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র নিয়েও নানান রকমের অভিযোগ। সব মিলিয়ে যাকে বলে চরম অব্যবস্থাপনা। সবচেয়ে বড় অভিযোগ, স্থানীয়রা যারা পরিষেবা দিয়ে থাকেন তাঁদের আচরণে নেই সৌজন্যতা। নেই পর্যটকদের জন্য নির্দিষ্ট জবাবদিহিদার জায়গাও। কলকাতায় এখনো সেটা হয়ে ওঠেনি। আর সেটা হলেই এই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হয়ে উঠেবে প্রকৃত পর্যটক-বান্ধব মনে করতেন বাংলাদেশী পর্যটকরা। কলকাতায় বাংলাদেশী পর্যটকদের সংখ্যা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। বিশেষ করে বাংলাদেশী মেডিকেল টুরিস্ট এর সংখ্যা আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক হারে বেড়েছে।

তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে চেন্নাই বা দিল্লী যাওয়ার ক্ষেত্রেও ট্রান্সিট রুট হিসেবে কলকাতাকে ব্যবহার করতেই হতো। বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও অন্তত ১৫ শতাংশ বাংলাদেশীকে একটা রাতের জন্য হলেও কলকাতায় কাটাতে হতো। আর সেই সময়ই নানান বিরম্বনার মুখোমুখি হতে হয়েছে বাংলাদেশী পর্যটকদের। উপযুক্ত নজরদারির অভাব, কলকাতা কর্পোরেশনের উদাসীনতাও, অনেক ক্ষেত্রে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ এইসব মিলিয়েই বাংলাদেশী পর্যটকদের বিভিন্ন খারাপ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এখন পরিস্থিতি অন্যরকম, ঢাকা থেকে সরাসরি ফ্লাইট হয়ে যাওয়ার কারণে ধীরে ধীরে কলকাতায় বাংলাদেশীদের সংখ্যা কিছুটা হলেও কমেছে। অথচ, এখনই কিছু ভালো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যদিও এখনের বদল বা তৎপরতা দেখে অনেকেরই বক্তব্য দেরিতে হলেও বোধোদয় হয়েছে।

না কলকাতায় নিরাপত্তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। এই কথা বলে খোদ বাংলাদেশীরাই, কিন্তু পর্যটকদের আসা যাওয়ার ব্যস্ততা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছোটখাটো বিড়ম্বনাগুলো কাটাতে এবার স্থানীয় প্রশাসন তৎপর হচ্ছে। কলকাতার নিউমার্কেট এলাকাকে বাংলাদেশী পর্যটকদের জন্য নিরাপদ করতে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা, স্থাপন করা হয়েছে সার্বক্ষণিক অভিযোগ কেন্দ্র। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি খুশি বাংলাদেশ থেকে আসা পর্যটকরাও। পার্সপোর্ট, আইফোন হারিয়ে গেলেও সেটা খুঁজে পাওয়া সহজ হচ্ছে। তবে, মধ্য কলকাতার নিউমার্কেট এলাকার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি রাস্তায় অসংখ্য আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট দোকানপাট যেগুলো গড়ে উঠেছে কেবল বাংলাদেশী পর্যটকদের আসা-যাওয়ার কারণে, সঙ্গে মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র সেগুলোতেও বিশেষভাবে নজরদারি চালানোর দরকার আছে। দেখতে হবে যাতে কোথাও কোন ভাবে বাংলাদেশী পর্যটকরা, প্রতারিত না হন। প্রতিমাসে ফিডব্যাক নেওয়ার প্রয়োজন আছে।

ব্যবসায়ীদের একাংশ মনে করছেন, এই ধরনের উদ্যোগের ফলে অনেকেই আবার আসা-যাওয়ার কথা ভাববেন। মাথায় রাখতে হবে বাংলাদেশী পর্যটকরা মুখ ঘুরিয়ে নিলে কলকাতার ওই অঞ্চলের অর্থনীতির ভিত অনেকটাই নড়ে যাবে। তাই, শুধু নিরাপত্তা নয় ব্যবহার-আচরণ, সেটা যদি ঠিক করা যায় তবে নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য আরও চাঙ্গা হয়ে উঠবে। মনে করিয়ে দিই গত বছর যে পরিমাণ বিদেশী পর্যটক ভারতে এসেছে তার মধ্যে সবথেকে বেশি ছিল আমেরিকান পর্যটক। তার পরেই ছিল বাংলাদেশী পর্যটকদের সংখ্যা। অতএব বুঝতে হবে পর্যটন খাতে বড় অঙ্কের একটা রেভিনিউ আসে বাংলাদেশি পর্যটকদের থেকে। তাই এক্ষেত্রে বাংলাদেশী পর্যটকদের দিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে উপলব্ধি হওয়ার প্রয়োজন ছিল আরো আগেই। তবু, দেরীতে হলেও কলকাতা মেনে চলুক ভারতের পর্যটনের মূলমন্ত্র “অতিথি দেব ভব”।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version