Mother Octopus: সন্তান জন্মবার পরেই মৃত্যু, নেই জীবনের মায়া! পৃথিবীর এই ত্যাগী ‘মা’কে চেনেন?

।। প্রথম কলকাতা ।।

Mother Octopus: ‘মা'(Mother) মানেই তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একরাশ ত্যাগ। যিনি সন্তানের মঙ্গলের জন্য নিজের কথা একেবারেই ভাবেন না। সন্তানের মঙ্গলে নিজের প্রাণ দিতে সর্বদা প্রস্তুত। প্রাণী জগতে এমন এক মা রয়েছে যে জানে সন্তান জন্মানোর পর তার মৃত্যু হবে, তা সত্ত্বেও অত্যন্ত যত্ন ভালোবাসায় সন্তান জন্ম দেয়। সন্তানকে রক্ষা করতে শত্রুর দিকে ছুঁড়ে দেয় বিষাক্ত পদার্থ। এই মা আসলে অক্টোপাসের (Octopus) মা।

‘ মা ‘ এই শব্দটার সাথে কত মধুরতা জড়িয়ে আছে। মায়েরা এই পৃথিবীতে সবথেকে বেশি ত্যাগী এবং সহনশীল হন । মায়েরা তাদের সন্তানের জন্য ঠিক কতটা পরিমাণে সহ্য করতে পারেন, তা সত্যিই অবাক করার মত। যদিও এই মায়ের কথা কোন মানব প্রজাতির নয় , প্রাণী প্রজাতির মায়ের কথা বলা হচ্ছে। এই মা জানে তার সন্তান জন্মের পরেই সে মারা যাবে, কিন্তু তাও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে কখন সন্তান জন্ম নেবে। একইভাবে সন্তানের জন্য অপেক্ষা করে বাবা। সমুদ্রে যত প্রাণী বসবাস করে তাদের মধ্যে অন্যতম ত্যাগী বাবা-মা বলা হয় অক্টোপাসকে। অক্টোপাসের আচরণ অনেকটা মানুষের মতো। পুরুষ কিংবা নারী অক্টোপাস জানে সন্তান জন্মের পরে তাদের মৃত্যু ঘটবে, তাও তারা একে অপরের সাথে মিলিত হয় এবং সন্তানকে পৃথিবীতে আনার জন্য বহুদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করে। তাই অক্টোপাসকে বলা হয় প্রাণী জগতের সবচেয়ে ত্যাগী প্রাণী। ডিম ফুটে ছোট্ট ছোট্ট অক্টোপাস বেরোনোর পরেই মা অক্টোপাস মারা যায়। সেই বাচ্চাটা আরেকটু বড় হতেই বাবা অক্টোপাসের মৃত্যু ঘটে। কিন্তু ডিম পাড়া থেকে সেই ডিম ফুটে বাচ্চা হওয়া পর্যন্ত মাঝের সময়ে রীতিমত লড়াই করে মা অক্টোপাস।

মা অক্টোপাস সাগরের নিচে এমন একটি সুরক্ষিত জায়গা বেছে নেয় যেখানে শত্রু সংখ্যা কম। ডিম পেড়েও শান্তি নাই। সেখানে নিজেই পাহারা দেয় মা অক্টোপাস। যদি কাঁকড়া বা অন্য প্রাণী এসে সেই ডিম খেয়ে ফেলে, এই ভয়ে মা অক্টোপাস নিজের জন্য কোন খাবার সংগ্রহ করতে যায় না। গভীর সমুদ্রে সাধারণ তাপমাত্রা অনেক কম তাই প্রজনন কাল বেশ দীর্ঘ সময়ের হয়ে থাকে। অগভীর সমুদ্রের তলদেশে ১ থেকে ৩ মাস সময় লাগে অক্টোপাসের ডিম ফুটে বাচ্চা রূপান্তরিত হতে, কিন্তু গভীর সমুদ্র হলে ঠিক কতদিন লাগে তার হিসাব আপনি আন্দাজ করতে পারবেন না। ২০১৪ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী গ্রানেলডোন বোরোপাশিয়া প্রজাতির একটি মা অক্টোপাস গভীর সমুদ্রে প্রায় ৫৩ মাস ধরে তার ডিম গুলিকে সযত্নে রেখে দিয়েছিল। আসলে ওই মা অক্টোপাস সাড়ে চার বছর ধরে অপেক্ষা করছিলেন, কখন তার সন্তান জন্ম নেবে। সে সময় বিশেষজ্ঞরা দেখেন সেই মা অক্টোপাস অত্যন্ত ক্ষীণ এবং দুর্বল হয়ে পড়েছেন।

এখানেই শেষ নয়, শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করতে মা অক্টোপাস এক ধরনের তরঙ্গ সৃষ্টি করে । সেই তরঙ্গ ডিমের উপর সহজে কোন ক্ষতিকারক প্রভাব পড়তে দেয় না । এমনকি ডিমের মধ্যে যাতে অক্সিজেন ভালোভাবে চলাচল করতে পারে তার জন্য সমস্ত রকম ব্যবস্থা করে মা অক্টোপাস। মোটামুটি গড়ে ৬ মাস পর্যন্ত সময় লাগে ডিম ফুটে বাচ্চা হতে। এই সময় মা অক্টোপাস কিছুই খায় না তাই বাচ্চা জন্মের পরেই মৃত্যু হয়। এই মায়ের কাহিনী এক নিঃস্বার্থ ত্যাগের কাহিনী। শত্রুদের হাত থেকে নিজের সন্তানকে রক্ষা করতে মা অক্টোপাস ছুঁড়ে দেয় এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যার ফলে শত্রুরা কিছুক্ষণের জন্য অন্ধ হয়ে যায় এবং হারিয়ে ফেলে স্বাদ ও ঘ্রাণশক্তি। ঠিক সেই মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে অক্টোপাস দ্রুত নিজের রূপ পরিবর্তন করে ফেলে। স্বাভাবিকভাবেই তখন সহজে ধরা পড়তে হয় না শত্রুর হাতে। এই সময় যদি কোন পুরুষ অক্টোপাস নারী অক্টোপাসকে বিরক্ত করে তখন সে একদমই তা সহ্য করে না। উপরন্তু সমুদ্রের তলদেশে থাকা জঞ্জাল, শুকনো ঝিনুকের খোলস ছুঁড়ে দেয় উত্ত্যক্তকারী পুরুষ অক্টোপাসের দিকে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version