Kalpana Chawla: নিজেকে সৌরজগতের নাগরিক ভেবে এসেছেন, কল্পনা চাওলার শেষ ইচ্ছে কী ছিল?

।। প্রথম কলকাতা ।।

Kalpana Chawla: নারী সমাজের কাছে একজন প্রেরণাদায়ক দৃষ্টান্ত তিনি। প্রমাণ করে দেখিয়েছেন মেয়েদের জন্ম শুধু রান্নাঘরে কাজ করার জন্য হয়নি। তাঁরা মা দুর্গার রূপ, এক হাতে তাঁরা সংসার সামলাতে পারে তো অপরদিকে রকেট চড়ে মহাকাশে পারি দিতেও পারে। ১৯৬২ সালের ১৭ মার্চ জন্ম হয় কল্পনা চাওলার (Kalpana Chawla)। ছোটবেলা থেকেই সৌরজগতের প্রতি একটা আলাদা টান ছিল তাঁর। ১৯৭৬ সালে পঞ্জাব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে স্নাতক হন।

১৯৮২-তে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য বিলেত গিয়েছেন তিনি। ১৯৮৪ সালে আমেরিকার টেক্সাস ইউনিভার্সিটি থেকে এরোস্পেস সাইন্সে মাস্টার ডিগ্রি লাভ করেন। এর পর ১৯৮৮-তে কোলরেডো ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি করেন। জীবনের লক্ষ্য ছিল, আমেরিকার মহাকাশ অনুসন্ধান কেন্দ্র নাসাতে প্রবেশ করা। Computational Fluid Dynamics Research on Vertical এবং Short Take-off and Landing Concept-এ নিজের গবেষণা তত্ত্ব ১৯৮৮-তে তুলে ধরেন কল্পনা। আগেই প্লেন ওড়ানোর জন্য পাইলটের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তিনি।

এরই মাঝে জিন-পিয়ের হ্যারিসন নামের এক বন্ধুর প্রেমে পড়েছিলেন তিনি। ১৯১১-তে তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়। ১৯৫৫ সালে প্রথমবার নাসার মহাকাশযাত্রায় একজন ভারতীয় মহিলা নভোচারী হিসেবে সুযোগ পান। এর পর এদিন Astronaut Crops গ্রুপে জয়েন করেন কল্পনা চাওলা। সেখানে তাঁর আকাশে ওড়ার স্বপ্ন ধীরে ধীরে বাস্তবে রূপান্তরিত হচ্ছিল। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নিজের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে মহাকাশ অভিযানের সুযোগ পান কল্পনা চাওলা। ১৯৯৬-এ প্রথম বার মহাকাশ অভিযানে নভোচারী হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৭-এর ১৯ নভেম্বর সাত জন নভোচারী সহ কলম্বিয়া মহাকাশ যানে চড়েন। আমেরিকার ক্যানাডিয়ান স্পেস সেন্টার থেকে মহাকাশ অভিযানের জন্য রওনা দেন তিনি। ওই যানটির এটা ছিল ২৪তম মহাকাশ যাত্রা। মহাকাশে গিয়ে কল্পনা ও তাঁর নভোচারী সঙ্গীরা পৃথিবীকে ২৫২ বার প্রদক্ষিণ করে। কাজ ছিল, মাইক্রো গ্রাভিটি লোডের ব্যবহার করে মহাকাশ সম্পর্কে অজানা তথ্য নাসার কন্ট্রোলরুমে প্রেরণ করা। মহাকাশ অভিযানে গিয়ে মোট ১৫ দিন ১৬ ঘন্টার বেশি সময় মহাকাশের বুকে কাটিয়ে এসে ১৯৯৭-এর ৫ ডিসেম্বর পৃথিবীতে ফিরে আসেন কল্পনা চাওলা। তবে মহাকাশ অভিযানে Spartain-২০১ মিশন ফেল হওয়ার জন্য অনেক বিজ্ঞানীরা প্রথমে কল্পনাকে দোষী মনে করেছিলেন। পরে যদিও নাসার বরিষ্ঠ বিজ্ঞানীরা জানান, মিশন ফেল হওয়ার পেছনে কল্পনার কোনও হাত নেই, ত্রুটি ছিল নাসার সফটওয়্যার সিস্টেমে।

ফের ২০০৩-এর ১৬ জানুয়ারি কলম্বিয়া স্পেস সাটলটি আমেরিকার ফ্লোরিডার স্পেস সেন্টার থেকে তার যাত্রা শুরু করে। মনে হয়, কলম্বিয়া স্পেস সেন্টার থেকে ওড়ার সময় সেই যানের এক্সটার্নাল ফিউল ট্যাংক থেকে একটি টুকরো কেটে বেরিয়ে যায়। আর তা গিয়ে লাগে মহাকাশ যানের বামদিকের ডানায়, এর ফলে অরবিটারের ইনসুলেশন কভারের উপর ছিদ্র হয়ে যায়। ২০১৩ সালে নাসার STS-১০৭ মিশনের ১০ বছরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার বেন হেল একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার কয়েক ঘন্টা পরেই নাসার কাছে স্যাটেলাইট ইমেজে কলম্বিয়ার বামদিকের ডানায় হওয়া ছিদ্রটি ধরা পড়ে। কিন্তু তখন নাসার কন্ট্রোলরুমে বসে থাকা বৈজ্ঞানিকদের হাতে কিছু করার ছিল না, সবকিছু ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছিল। তাছাড়া বড় রকমের ছিদ্র হয়ে থাকলে, ছিদ্র মেরামত করার মত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নভোচারীদের কাছে ছিল না। যা দিয়ে তাঁরা চেষ্টা করলেও ওই ছিদ্র মেরামত করতে পারত না। পাশাপাশি অনেকের মতে, যানে ছিদ্র হওয়ার ঘটনা কল্পনা চাওলা সহ আরও নভোচারীদের দেওয়া হলে তাতে তাঁরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়তেন। তাই কন্ট্রোল রুম থেকে কোনও আলাদা সতর্কবার্তা দেওয়া হয়নি।

২০০৩-এর ১ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় সময় সন্ধ্যে ০৭:৪৬ নাগাদ কলম্বিয়া-ক্যানাডীয় SLF রানওয়ে-৩৩-এ ল্যান্ড করার কথা ছিল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় গুনছিল ভারতবাসী। ১৫ দিন ২২ ঘন্টা ৩২ সেকেন্ড মহাশূন্যে কাটানোর পর যানটির এটমোস্ফিয়ারের পর্দা ভেদ করে পৃথিবীর কক্ষপথে ঢুকে নিরাপদে ল্যান্ড করার সময় ঘনিয়ে আসছিল। কিন্তু তা হয়নি। ডানায় ছিদ্র থাকার কারণে হু-হু করে হাওয়া ঢুকতে থাকে যানের ভেতর। গরম হাওয়ায় নভোচারীরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন, এর পর ইঞ্জিন কাজ করা বন্ধ করে দেয়। অবশেষে আগুনের গোলার মত বিস্ফোরিত হয়ে উল্কাপিন্ডের ন্যায় আমেরিকার টেক্সাস শহরের উপর ভেঙে পড়ে তা। কল্পনা চাওলার ইচ্ছানুযায়ী তাঁর দেহাবশেষ উটাহের জাতীয় উদ্যানে দাহ করা হয়েছিল এবং অস্থিভষ্ম ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। নাসার STS-১০৭ মিশন সফল না হলেও, বিশ্বব্যাপী কল্পনা চাওলা ও তাঁর সাথীদের কথা আজও মানুষ মনে রেখেছে। মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য কল্পনা চাওলাকে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version