China-US conflict: ছেড়ে দেবেনা চীন ! পুতিনের সফরেই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সামনে এলো বড় ষড়যন্ত্র

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

 

China-US conflict:  চীনের বাজিমাত, পুতিনের সফরে আতঙ্কে যুক্তরাষ্ট্র! নেপথ্যে বড় ষড়যন্ত্র। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চীনের। কূটনৈতিক স্বার্থে বেজিংয়ের কাছে এখন বড় অস্ত্র রাশিয়া আর উত্তর কোরিয়া। কিমের দেশের পর পুতিনের ভিয়েতনাম সফর কেন ভাবাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে? কিম-পুতিনের বন্ধুত্বের আসল মাস্টারমাইন্ড শি জিনপিং! যুক্তরাষ্ট্রকে জবাব দিতে কোন অস্ত্র শানাচ্ছে চীন? তৈরি করছে নতুন বন্ধুত্বের সমীকরণ। ভূ রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র একা হয়ে যাবে না তো? পাল্টি খাচ্ছে একের পর এক দেশ। কিম-পুতিনের দরকার চীনকে। শি জিনপিং সেই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। আতঙ্কে ওয়াশিংটন।

 

যখন গোটা বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের আশঙ্কা। চরম উত্তেজনায় ফুটছে আঞ্চলিক শক্তিগুলো। ঠিক সেই সময় কূটনৈতিক সফরে বেরিয়েছেন পুতিন। প্রথমে উত্তর কোরিয়া, তারপর ভিয়েতনাম। যার জেরে কাল ঘাম ছুটছে যুক্তরাষ্ট্রের। ইউক্রেন যুদ্ধ কিন্তু এখনো অব্যাহত। না ইউক্রেন হার মেনেছে, না রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা থামিয়েছে। এমত পরিস্থিতিতে, রাশিয়ার সাপোর্টের সত্যি প্রয়োজন ছিল। আর সেই সাপোর্টটাই কি দিচ্ছে উত্তর কোরিয়া আর ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো? নাকি নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জোট বাঁধতে পুতিন এতটা তৎপর? তাই হয়ত চিন্তায় পড়ে গিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওদিকে আবার বহু আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, এই যে পুতিনের একের পর এক দেশ সফর, কূটনৈতিক সম্পর্ক পোক্ত করার পিছনে বড় হাত রয়েছে চীনের। চীন প্রকাশ্যে কূটনৈতিক জোটটা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাঁধতে পারছে না। কৌশলে করতে চাইছে, পুতিনের আড়াল থেকে। কিন্তু চীন সামনেই বা আসছে না কেন? পুতিনের সফর যুক্তরাষ্ট্রের কোন পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিতে পারে?

 

ভিয়েতনামে পুতিন, সিদ্ধান্ত বদলালেই ধাক্কা খাবে যুক্তরাষ্ট্র

উত্তর কোরিয়ার পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভিয়েতনামে যেতেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পুতিনের এই সফরের মাধ্যমে মস্কো আর হ্যানয়ের মধ্যে যে নতুন সম্পর্ক স্থাপন হতে চলেছে তা বলাই বাহুল্য। পুতিন ভিয়েতনামে গিয়েছেন সঙ্গে কয়েকজন শীর্ষ মন্ত্রী আর ব্যবসায়ীসহ একটা বড় প্রতিনিধি দল নিয়ে। এই দেশটা কিন্তু সবসময়ের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে তাদের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে আলাদা চোখে দেখে। যদিও একটা সময় ছিল, এই সম্পর্ক ইউরোপ আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে কাজ করেছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি একদম উল্টো। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সমীকরণ বদলেছে। আর সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, ইউক্রেনে যুদ্ধ চলাকালীন পুতিনের সফর নিয়ে তীব্র সমালোচনায় নেমেছে যুক্তরাষ্ট্র।দাবি, পুতিনের সফর ইউক্রেনে যুদ্ধের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। ইতিমধ্যেই কিন্তু রাশিয়া আর উত্তর কোরিয়ার মধ্যে চুক্তি সই হয়ে গিয়েছে অংশীদারিত্ব চুক্তি। দুই দেশই রাজনৈতিক, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সংস্কৃতিক, নিরাপত্তা বিষয়ে একে অপরকে সাহায্য করবে। এই ধরনের চুক্তিকে যখন পুতিন বলছেন ‘ব্রেক থ্রু’ তো তখন কিম এটাকে বলছেন ‘সন্ধিক্ষণ’। তার ওপর ভিয়েতনাম সফর স্বাভাবিক ভাবেই শক্ত হচ্ছে পুতিনের হাত।

 

রাশিয়া আর ভিয়েতনামের সম্পর্ক সেই ১৯৫০ এর দশক থেকে। ভিয়েতনাম রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ককে আনুগত্য আর কৃতজ্ঞতায় পরিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। যদিও ভিয়েতনামের অর্থনীতি বিশ্ববাজারে একীভূত হওয়ার পর চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের তুলনায় রাশিয়া ভিয়েতনামের কাছে একটু কম উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য অংশীদার। তবে এখনো পর্যন্ত ভিয়েতনাম প্রাথমিক ভাবে রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ চীন সাগরের তেল অনুসন্ধানের জন্য অংশীদারিত্ব রয়েছে রাশিয়ার কোম্পানিগুলোর সঙ্গে। ভিয়েতনামের পররাষ্ট্রনীতি বলছে, আনুষ্ঠানিক জোট নয় বরং সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ নীতিতে চলা। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক শক্তির গতিশীলতার সঙ্গে নমনীয়ভাবে খাপ খাইয়ে নেওয়া। অতীতের দ্বন্দ্ব খুব একটা মনে রাখে না। একদিকে যেমন চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে চায়, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও সম্পর্ক জোরদার করতে চায়। আর সমস্যাটা তো এখানেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বহু ঐতিহাসিক জোট থাকা সত্ত্বেও কিন্তু থাইল্যান্ড রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখছে। সেই জায়গায় যদি ভিয়েতনামও হঠাৎ পাল্টি খায়, সেক্ষেত্রে চাপে পড়বে ওয়াশিংটন। কারণ ইতিমধ্যেই ভিয়েতনাম বিকল্প সামরিক সরবরাহকারী দরকার। তাই রাশিয়ার সরঞ্জামের উপর দেশটার নির্ভরতা আরো বাড়তে পারে।

 

কিম-পুতিনের বন্ধুত্বে চীনের কৌশল, মূল লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রকে থামানো

এই যে কিম পুতিনের বন্ধুত্বের এত রসায়ন, এখানেও কিন্তু বেশ চাপে রয়েছে চীন। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের বিরুদ্ধে কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের মোড়লগিরি রুখতে উত্তর কোরিয়া চীন রাশিয়ার মতো দেশগুলো একই নীতিতে চলছে। একে অপরকে সাপোর্ট করছে। কিন্তু তলে তলে এই রাষ্ট্রগুলোর বন্ধুত্বের রয়ে গিয়েছে ফাঁকফোকর। দীর্ঘ ২৪ বছর পর উত্তর কোরিয়ায় গিয়ে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন পুতিন। যেখানে এই দুই দেশের বিরুদ্ধে যে কোন আগ্রাসোনে তারা পরস্পরকে সাহায্য করবে। এই চুক্তি ইতিমধ্যেই উদ্বেগ তৈরি করেছে পশ্চিমাদের মধ্যে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হল, এই দুই নেতাই জানেন, তাদের পরস্পরকে ঠিক কতটা প্রয়োজন। যেমন পুতিনের যুদ্ধে চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন গোল বারুদ,তেমনি নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা উত্তর কোরিয়ার দরকার অর্থ। পুতিন ভালোভাবে জানেন, তারও একটা সীমা আছে। আর সেই সীমা হল, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

 

সম্প্রতি শি’য়ের কিছু কার্যকলাপ বোঝা যাচ্ছে, তিনি এই দুই সহযোগী অর্থাৎ রাশিয়া আর উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান সখ্যতায় খুব একটা সন্তুষ্ট নয়। এইতো গত মে মাসে, মস্কো বেজিং এর বৈঠকের পর পুতিনকে পিয়ংইয়ং সফরে না যেতে সরাসরি বলে দিয়েছিলেন শি জিনপিং। তাই তো কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, চীনা কর্মকর্তারা চীন রাশিয়ার বন্ধুত্বের মাঝে উত্তর কোরিয়াকে টেনে আনাটা যেন খুব একটা পছন্দ করছে না। আর এমনি থেকেই চীনা প্রেসিডেন্ট শি মস্কোকে সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রে আর ইউক্রেন যুদ্ধে সহায়তা হয় এমন কিছু বিক্রি না করতে যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপের মাঝে বিস্তর চাপে রয়েছে। আবার তিনি এই বিষয়গুলো পুরোপুরি উপেক্ষাও করতে পারছেন না। চীনের বিদেশি পর্যটক আর বিনিয়োগ দরকার। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে চীনের অবস্থানটা ধরে রাখার জন্য উত্তর কোরিয়াকে পাশে চাই। কারণ চীন সব সময় বৈশ্বিক পর্যায়ে নিজের বড় ভূমিকা ধরে রাখার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করতে চায়। অপরদিকে উত্তর কোরিয়ার চীনকে দরকার আরো বেশি। চীন একমাত্র দেশ যেখানে কিম সফর করেছেন। উত্তর কোরিয়ার এক চতুর্থাংশ থেকে অর্ধেক পর্যন্ত তেল আসে শুধুমাত্র রাশিয়া থেকে।

 

অপরদিকে দেশটার ৮০ ভাগ ব্যবসা চীনের সাথে। তাই যতই পুতিন আর কিম নিজেদের সহযোগী হিসেবে দেখান না কেন, চীনের সাথে তাদের সম্পর্ক আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রসঙ্গত বলে রাখি, যখন পশ্চিমাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল, তখন কিন্তু এই পুতিন উত্তর কোরিয়ার উপর দু দুবার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। উত্তর কোরিয়া যাতে মারাত্মক নিষিদ্ধ অস্ত্রের কর্মসূচি বন্ধ করে, সেজন্য একই সুরে সুর মিলিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র চীন দক্ষিণ কোরিয়া আর জাপান। বর্তমানে সেই সমস্ত ফাটলে প্রলেপ পড়েছে। এখন রাশিয়া আর উত্তর কোরিয়া দুজনেই চীনের সাহায্যপ্রার্থী। চীনকে ছাড়া সংকটে পড়বে। ফলে উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক বলুন, আর বহুপাক্ষিক সম্পর্ক, সেখানে কিন্তু চীনের বড় ভূমিকা রয়েছে। আর চীনও নিজের জায়গা ধরে রাখতে এই দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে। কিন্তু কিম আর পুতিনের বন্ধুত্বকে ভালো চোখে দেখছে না। কারণ ভবিষ্যতে এই দুই রাষ্ট্রের জোট বিপদে ফেলতে পারে চীনকেও। যদিও এখন ফার্স্ট টার্গেট যুক্তরাষ্ট্রকে থামানো। তাই চুপ করে রয়েছে শি জিনপিংয়ের দেশ।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version