পিঠে ৫০ কেজির বোঝা, দৌড়াচ্ছেন অলিতে গলিতে, এই ডেলিভারি গার্ল সমাজের অনুপ্রেরণা

।। প্রথম কলকাতা ।।

পিঠে প্রায় ৫০ কেজির ভারী বোঝা। লক্ষ্য, মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দেওয়া। মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন প্রয়োজনীয় জিনিস। মোটরবাইক নিয়ে রোদ বৃষ্টি ঝড়ে ডেলিভারি বয়ের কাজ অনেককে করতে দেখেছেন। কিন্তু ডেলিভারি গার্লকে দেখেছেন কখনো? সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যার পিঠে থাকে ভারী ব্যাগ। জীবন-সংগ্রামে ভরসা শুধুমাত্র একটা বাইকের উপর ঘুরে বেড়ান শহরের অলিতে গলিতে। ইনি সুপ্রীতি সিং। সংসার সামলাতে আর সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করতে বেছে নিয়েছেন এই কাজ।

সকাল হলেই সংসারের সমস্ত কাজ সামলে সকাল আটটার মধ্যে বেরিয়ে পড়েন। ফেরেন রাত্রে। রান্নাবান্না সেরে গরীব শিশুদের বিনামূল্যে পড়ান। শুধু তাই নয়, নিজের পরিবারের খরচ চালিয়ে যেটুকু হাতা টাকা পান সেটা দিয়েই কিনে দেন গরীব অনাথ বাচ্চাদের জামা কাপড়। সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে একটা ফেসবুক পোস্ট। সেখানেই সুপ্রীতি সিংয়ের ছবি দিয়ে তার জীবন সংগ্রামের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। যদিও এই জীবন সংগ্রামের বাস্তব গল্পটা গত বছরেও একই ভাবে ভাইরাল হয়েছিল। তখন লক্ষ লক্ষ মানুষ সুপ্রীতি সিংয়ের সংগ্রামকে স্যালুট জানিয়েছে। আসলে ইনি একদিকে যেমন বীরাঙ্গনা মা, তেমনি একজন মেয়ে যে সংসারে সমান অধিকারের সাথে সমান দায়িত্ব পালন করছেন। বাড়ি হুগলি জেলায়। খুব দরিদ্রতার মধ্যে দিয়ে বড় হয়েছেন। কিন্তু পড়াশোনা ছাড়েননি। তারপর বিয়ে হয়ে যায়। সংসারে রয়েছেন শ্বশুর-শাশুড়ি স্বামী একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে। সুপ্রীতি সিংয়ের স্বামীও বেসরকারি সংস্থায় গাড়ি চালান। কিন্তু একার আয়ে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। তাই স্বামীর পাশে দাঁড়িয়েছেন সুপ্রীতি।

এই কাজে সাধারণত পুরুষের দেখা গেলেও, পিঠের বিশাল বড় ব্যাগ নিয়ে ছুটে বেড়ান সুপ্রীতি। কোন বিশেষ অনুষ্ঠান বা পালা-পার্বণে ছুটি তো দূর, অন্যান্য দিনের তুলনায় কাজের চাপ অনেকটা বেশি। এই কাজ করে তিনি যা টাকা পান তার ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খরচেই চলে যায়। যদিও এই হাড়ভাঙা পরিশ্রম প্রথম নয়, এর আগে একটি ভাতের হোটেল ছিল। করোনা মহামারী এসে সবটা শেষ করে দেয়। তারপর বাড়িতে একটা মুদির দোকানও খোলে। কিন্তু সেটা ভালোভাবে চলেনি। তাই অবশেষে বেছে নেন ডেলিভারি গার্লের কাজ। তার এই জেদকে শুধু সাধারণ মানুষ নয়, কুর্নিশ জানিয়েছে গ্রাহক থেকে শুরু করে বহু সহকর্মী।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version