।। প্রথম কলকাতা ।।
বাংলাদেশের অগ্নিপরীক্ষা ব্রিকসে যোগ দেওয়ার অনুমতি পাবে ঢাকা? যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবে বড় ধস নামবে বাংলাদেশে কাল হতে পারে সেটাই। চিনের আরও কাছাকাছি পৌঁছে যাবে ঢাকা। ভারত কোন মাস্টারস্ট্রোক দিতে পারে! ব্রিকসে একবার ঢুকতে পারলে বাংলাদেশের লাভই লাভ, পাকিস্তান পারবে না। বড় কূটনৈতিক চাপ আসতে চলেছে বাংলাদেশের ওপর৷ পশ্চিমাদের বাইরে এমূহুর্তে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্লক ব্রিকস। অগস্টের মধ্যে বাংলাদেশ ব্রিকসে ঢুকে যাবে একপ্রকার নিশ্চিত এমনটাই বলছেন সে দেশের মন্ত্রীরা। কিন্তু বাংলাদেশের এত বড় পদক্ষেপে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না তো ভারত? বাংলাদেশ ব্রিকসে যোগ দিতে অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করছে এই মূহুর্তে দাঁড়িয়ে। তাতে আদতে ভারতের কূটনীতিক লাভ হবে তো? বাংলাদেশকে ব্রিকসে ঢোকার বুদ্ধিটা কি ভারতই দিয়েছিল? ব্রিকসে ঢুকে বাংলাদেশের লাভটা কি?
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ‘২০ ঘণ্টা প্লেনে জার্নি করে আটলান্টিক পার হয়ে মানুষ আমেরিকা না গেলে কিচ্ছু আসে-যায় না। পৃথিবীতে আরও অনেক মহাসাগর আছে, অনেক মহাদেশ আছে সেই মহাদেশে আমরা যাতায়াত করব আর বন্ধুত্ব করব।’ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যত জটিল হচ্ছে সম্পর্ক বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস বাড়ছে৷ আর সেই কনফিডেন্স আরও বেড়ে গেল ব্রিকস যোগের অফার পেয়ে কিন্তু মুখে বললেই কি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে পারে বাংলাদেশ?
একেবারেই নয় আসল খেলা সেখানেই বাংলাদেশ আরও ঝুঁকছে চিন ও রাশিয়ার দিকে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন জানিয়েছেন বিশ্বের বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোট ব্রিকসে যোগ দিতে চলেছে বাংলাদেশ। ব্রিকসে অলরেডি রয়েছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন ও দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে আগামী আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের সদস্য পদ চূড়ান্ত হতে পারে।
প্রথমেই জানুন এতে কত বড় লাভের মুখ দেখবে বাংলাদেশ৷ কূটনৈতিক মহল বলছে ব্রিকস জোটের সদস্য হওয়ার পর বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ ঋণ নেওয়ার সুবিধা পাবে। সবথেকে ইমপরটেন্ট পয়েন্ট ডলারের প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে পারে ঢাকা, যে ডলারের রিজার্ভ নিয়ে রীতিমত সঙ্কটে দিন কাটছে বাংলাদেশ। ব্রিকস জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভবিষ্যতে বিকল্প মুদ্রা বা বিকল্প বাণিজ্যিক ব্যবস্থা চালু করলে এক্ষেত্রে সুবিধা নিতে পারবে বাংলাদেশ। এছাড়াও ব্রিকস জোটের সদস্যদের সাথে সম্পর্ক বাড়বে। এ ক্ষেত্রে সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়বে। এছাড়াও জিওপলিটিক্সে আরও একাধিক সুবিধা তো পেতেই পারে বাংলাদেশ৷ কিন্তু প্রশ্ন হল বাংলাদেশকে ব্রিকসে ঢুকতে দেবে তো আমেরিকা? যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে ভিসা ইস্যু নিয়ে পরিস্থিতি জটিল হলেও বাংলাদেশের প্রধান যুক্তরাষ্ট্রকে একাধিক হুঁশিয়ারি দিলেও বাস্তবে গ্রাউন্ড লেভেলে সম্পর্ক বলছে অন্য কথা। বিশেষজ্ঞরা বলছে, বাংলাদেশ যদি ব্রিকসে যোগ দেয় তাতে নিসন্দেহে চিনের প্রভাব কয়েকগুণ বাড়বে বাংলাদেশে। এই পরিস্থিতি ভারতের জন্য রীতিমত অ্যালার্মিং। সেক্ষেত্রে আমেরিকা ভারতকে দিয়ে বাংলাদেশকে আটকানোর চেষ্টা করবে না তো?
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাংলাদেশকে মনে রাখতে হবে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্যের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, শুধু ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ৮৩০ কোটি ডলার মূল্যমানের পণ্য আমদানি করেছে। শুধু তা–ই নয়, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মার্কিন কোম্পানিগুলো রয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক উড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলার্সের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে প্রতিবাদী মন্তব্যকে বিভ্রান্তিকর বলেও ব্যখ্যা করেছেন। কিন্তু এখন প্রশ্ন হল ভারত কি অবস্থান নেবে বাংলাদেশে ব্রিকসে যোগ নিয়ে। ভারত এখনও কোনও মন্তব্য করেনি এবিষয়ে কিন্তু ব্রিকসের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ভারত দিল্লি না চাইলে আটকে যেতে পারে ঢাকার স্বপ্ন। তবে বাংলাদেশ ব্রিকসে যোগদান করলে পশ্চিমারা চটে যাবে না তো। বিশ্লেষকেরা বলছেন যদি ঢাকা সঠিকভাবে কার্ড খেলতে পারে তবে পশ্চিমের দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেও ব্রিকসে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজের লাভ তুলে আনতে পারবে। বাংলাদেশের সঙ্গে চীন ও রাশিয়া অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদার করেছে। এখন দেখার বিষয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার ক্রমবর্ধমান পশ্চিমা চাপ কীভাবে অগ্রাহ্য করতে পারে বা সামাল দিতে পারে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম