Bangladesh: বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে অস্বস্তি, দাওয়াই কি ভারতের হাতে?

।। প্রথম কলকাতা ।।

Bangladesh: বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সহজ করার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা কি? ভারত কি পারবে ঢাকা ওয়াশিংটনের সম্পর্কে নতুন অক্সিজেন জোগাতে? র‍্যাব আর রাশেদ নিয়ে ভারতের স্ট্যান্ড পয়েন্ট কি? দিল্লির কাছে কি এটা স্রেফ জল ভাত? বাংলাদেশ নিয়ে চীন যুক্তরাষ্ট্রের দড়ি টানাটানিতে ভারতের স্বার্থটা কি? লাভ টা কোথায়? কি বলছেন বিশ্লেষকরা?এটা খুব সেনসিটিভ একটা ইস্যু। সময়টাও বুঝে পা ফেলার মতো। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যেভাবে আমেরিকার কড়া সমালোচনা করেছেন, যেভাবে দুই দেশের সম্পর্কে নানান অস্বস্তিকর বিষয় দেখা যাচ্ছে, নিষেধাজ্ঞার বিষয়গুলো সামনে উঠে আসছে তাতে ভারতের ‘ভূমিকা’ বেশ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। প্রথমেই সরাসরি একটা পয়েন্টে হিট করছি, ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ এই মুহুর্তে উভয়েরই দারুণ কূটনৈতিক সম্পর্ক। কারণ ভারত খুব ভালোভাবে ব্যালেন্স করতে জানে।

সেক্ষেত্রে পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে কোনও অস্বস্তি তৈরি হলে সেটা নিরসনের জন্য ভারতের চেষ্টা চালানোটা অস্বাভাবিক কিছু না, যেটা বহুদিন ধরেই হয়ে আসছে। তা ছাড়া ভারত দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী শক্তি। তাই এই অঞ্চলের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দেশ বাংলাদেশকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে তারা ভারতের মতামতকে আমল দিয়ে থাকে, এটা লক্ষণীয়। যদিও ইদানীংকালে ভারতকে কিছুটা এড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি বাংলাদেশের সঙ্গে ‘ডিল’ করছে, এরকম একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তার পরেও ঢাকা ও ওয়াশিংটনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের একটা ছায়া বা প্রভাব যে আছেই, তা কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নেই বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।

সাম্প্রতিকালে বাংলাদেশ তাদের নিজস্ব কিছু সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় তৃতীয় পক্ষের ওপর প্রভাব খাটাতে ভারতের সাহায্য চেয়েছে আর সেটা প্রকাশ্যেই। যেমন? রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরার পথকে সুগম করতে ভারত যাতে ‘বন্ধু’ মিয়ানমারের ওপর প্রভাব খাটায়। সেক্ষেত্রে হোক কিংবা রুশ জাহাজ যখন বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়তে পারেনি, সেখানে মস্কোর সঙ্গে দিল্লির সুসম্পর্ককেও কাজে লাগানো হোক। তো এটাই আমেরিকার ক্ষেত্রেও না হওয়ার কোনো কারণ নেই। তাই বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে দিল্লি আর ঢাকার সম্পর্কটা এমনই যে শেখ হাসিনা যদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কোনও কঠিন অনুরোধও জানালেও, সেটা কিছুতেই ফেলা সম্ভব নয়। আর নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ব্যক্তিগত হৃদ্যতাও যে কতটা নিবিড়, সেটা নিশ্চয়ই নতুন করে বলে দিতে হবে না। ফলে জো বাইডেন ও হাসিনার মধ্যে কোনও বিষয়ে দূরত্ব তৈরি হলে, ব্যক্তিগতভাবে নরেন্দ্র মোদী সেখানে হস্তক্ষেপ করে ভুল বোঝাবুঝি দূর করার ক্ষমতা রাখেন, এটা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই। ভারত যে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে এমন উদাহরণ তো আছে।

মনে করে দেখুন, ২০১৪ ও ২০১৮ তে বাংলাদেশের প্রশ্নবিদ্ধ সাধারণ নির্বাচনকে যুক্তরাষ্ট্র যাতে মেনে নেয়, সে ব্যাপারেও ভারত যথেষ্ঠ ‘সক্রিয় ভূমিকা’ নিয়েছিল। এমন কি, বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন না তুলে সে দেশের জনগণের ‘ম্যান্ডেট’কে মেনে নিতেও আমেরিকাকে ভারত বহুবার পরামর্শ দিয়েছে। না এখানেই শেষ নয়, জেনে রাখুন এই যে বাংলাদেশে র‍্যাবের কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা। যে এলিট ফোর্স আমেরিকার পরামর্শেই তৈরি হয়েছিল, সেটা এখন কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রেরই চক্ষুশূল হয়ে উঠল, বাংলাদেশ সরকারের এই প্রশ্ন কিন্তু ভারতেরও প্রশ্ন।

তাছাড়া, বাংলাদেশের জাতির জনকের যিনি আত্মস্বীকৃত খুনী, ফাঁসির আসামি হওয়া সত্ত্বেও সেই রাশেদ চৌধুরীর আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে বহাল তবিয়তে থাকা এবং কেন তাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে না? এটাকেও কিন্তু ভারত বৈধ প্রশ্ন বলেই মনে করে। ফলে, এই দুটো ইস্যু নিয়ে ভারত বিভিন্ন পর্যায়ে আমেরিকার সঙ্গে একাধিকবার কিন্তু কথাবার্তা বলেছে। তাই এটা খুব পরিষ্কার একটা বিষয়। ঢাকা ও ওয়াশিংটনের সম্পর্কে কিছু ‘রাফ প্যাচ’ আছে, থাকবে। সেটা দূর করার জন্য ভারতের কিছু করণীয় থাকলে তারা সেটা করতে দ্বিধা করবে না মত বিশেষজ্ঞদের। হ্যাঁ, যদিও স্বার্থ ছাড়া ব্রত হয় না। সেক্ষেত্রে দিল্লি-ঢাকা-ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক ত্রিভুজে পারস্পরিক স্বার্থের অঙ্কটা যে প্রবলভাবে আছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কোনও ‘লাভ’ না-থাকলে তারা বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক সহজ করার চেষ্টায় ঢুকতেই যাবে না। কিরকম স্বার্থ? বাংলাদেশকে নিয়ে আমেরিকা ও চীনের মধ্যে ‘ভূ-রাজনৈতিক যুদ্ধ’ চললেও এই লড়াইতে আসলে কিন্তু ভারতেরই জয় হচ্ছে। কিভাবে? কারণ নিজেদের সম্পদ খরচ না করেও বেইজিং ও ওয়াশিংটনকে পরস্পরের বিরুদ্ধে খেলিয়ে দিতে পারছে ভারত। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভারত, বাংলাদেশকে গণতন্ত্র নিয়ে প্রচ্ছন্নভাবে চাপ দিতে যাচ্ছে না। দায়িত্ব নিয়ে সেই কাজ পালন করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মত পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো। বরং ভারত এমন সব পদক্ষেপ নিচ্ছে, যাতে শেখ হাসিনার সরকার কিছুতেই বিপর্যয়ের মুখে না পড়ে। কারণ পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, যতদিন আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকবে ততই দিল্লীর প্রত্যাশা পূরণের রাস্তা চওড়া হবে। আর এটা তো স্বাভাবিক, ভারত নিজের প্রয়োজনেই, দেশের জনগণের প্রয়োজনে প্রতিবেশী বাংলাদেশের পাশাপাশি নিজেদের স্বার্থটাও দেখবে। কে না চায় এটা? তাই ভারত যে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক সহজ করার জন্য সক্রিয় ও সচেষ্ট থাকবে, তা সহজেই বোঝা যায়।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version