Kukri: প্রয়োজন নেই গোলা বারুদের, হেরে যাওয়া যুদ্ধকে জেতাতে পারে খুকরি! কী এই ভয়ানক অস্ত্র?

।। প্রথম কলকাতা ।।

kukri: প্রয়োজন নেই গোলা বারুদের, জাস্ট একটা খুকরি (Kukri) হেরে যাওয়া যুদ্ধকে (War) জিতিয়ে দিতে পারে। এই দুর্ধর্ষ মারণাস্ত্রের ভয় পায় গোটা বিশ্ব (World)। এর জোরেই আজ এত শক্তিশালী গোর্খা। কথায় আছে, গোর্খারা মৃত্যুকে ভয় পায় না। কারণ গোর্খাদের হাতে রয়েছে খুকরি। এই ভয়ঙ্কর খুকরি হাতে নিয়ে সিংহের মত এক তরুণ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ৪০ জন ডাকাতের উপর। খুকরি দিয়ে চলেছিল একের পর এক মারণ কোপ, যার জন্য পিছু হটে ছিল দুর্ধর্ষ ডাকাতেরা। এই অস্ত্র সেই ব্রিটিশ আমলের আগে থেকেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে, আজও ভারতীয় গোর্খা সেনারা এই খুকরি ব্যবহার করেন।

পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী দুর্ধর্ষ সেনে হিসেবে পরিচিত গোর্খারা। বর্তমানে পরমাণু বোমা কিংবা উন্নত মানের রাইফেল গোর্খাদের কাছে কিছু না। ওদের হাতেই শুধুমাত্র দিতে হবে একটা খুকরি। এটা কোন গোলাবারুদের অস্ত্র নয়। জাস্ট ছুরির মত দেখতে একটা সামান্য অস্ত্র। যার মারণ ক্ষমতা ভয়ানক। সেই ১৯৪৮ থেকে ১৯৯৯ ভারতের যতগুলো বিদ্রোহ, আন্দোলন, যুদ্ধ হয়েছে সব কিছুতেই এই খুকরি কোন না কোন ভাবে ভূমিকা রেখেছে। বলা হয় একজন গোর্খা সেনার পরিচয় খুকরি ছাড়া এক্কেবারে অসম্পূর্ণ। বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে এর জনপ্রিয়তা ঝড়ের গতিতে বাড়তে থাকে। একে অনেকে বলেন গোর্খা ব্লেড বা গোর্খা নাইফ। যত সময়ের জল গড়িয়েছে ততই খুকরি বিভিন্ন নাম পেয়েছে। ইংলিশে রয়েছে নানান বানান। পশ্চিমে দেশে একে বলা হয় কুকরি, ভারতে বলা হয় খুকরি, আর নেপালে বলা হয় খুকুরি। বিনা গোলাবারুতে সৈন্যদলকে কাত করে দেওয়া খুকরির কাছে সামান্য ব্যাপার।

খুকরি বিভিন্ন আকৃতির হয়। এটি হাত দিয়ে বানানোর কারণে একটি খুকরি আরেকটি খুকরি থেকে আলাদা। খুকরির ব্লেডের তিনটি ভাগ রয়েছে। একদম মাথার অংশ দিয়ে অনায়াসে জানোয়ারের চামড়া ছাড়িয়ে ফেলা যায়। মূলত এই অংশ ব্যবহার করা হয় লড়াইয়ের সময় শত্রুকে আঘাত করার জন্য। এর মাঝের অংশ চপড করার জন্য। এর এক ঝটকায় দুশমনের মাথা দেহ থেকে আলাদা হয়ে যাবে। ব্লেডের সবথেকে নিচের অংশ স্লাইস করার কাজে ব্যবহার হয়। হ্যান্ডেল আর ব্লেডের একদম নিচে একটি খাঁচ কাটা অংশ রয়েছে। যেখানে হিন্দু ধর্মের ওম চিহ্ন কিংবা গরুর খুরের মত একটি চিহ্ন দেখতে পাবেন। যার কারণে নেপালে এই অস্ত্রের ধার্মিক মাহাত্ম্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অংশটি ডিজাইন করা হয়েছে যাতে দুশমনের রক্তও সেনার হাতে আসতে না পারে। কারণ লড়াইয়ের সময় রক্ত সেনার হাতে লাগলে অস্ত্র স্লিপ খেয়ে হাত থেকে পড়ে যেতে পারে। পশ্চিমী দেশের মানুষের জন্য বানানো খুকরিতে এই অংশ থাকে না। খুকরির হাতল বা বাঁট বানানো হয় হাতির দাঁত, পশুর শিং, লোহা, চামড়া, হাড় প্রভৃতি দিয়ে। খুকরি যে খাপের মধ্যে রাখা হয় তা বিভিন্ন দামের এবং বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। সব থেকে দামি খাপ হয় ইয়াকের শিং দিয়ে।

আজও ভারতীয় সেনাবাহিনী গোর্খা রেজিমেন্টের সৈন্যদের খুকরি নামক বাঁকানো ধারালো ছুরি দেওয়া হয়। এদের অসাধারণ বীরত্ব গোটা বিশ্বের কাছে বারংবার প্রশংসা কুড়িয়েছে। একবার এক তরুণীর সম্মান বাঁচাতে ৪০ জন ডাকাতের উপর এক গোর্খা জওয়ান ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তার হাতে অস্ত্র বলতে ছিল মাত্র একটা খুকরি। ঘন জঙ্গলে রাতের অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে ছুটে চলছিল একটি এক্সপ্রেস ট্রেন। সেখানেই জানালার ধারে সিটে বসেছিলেন বিষ্ণুর শ্রেষ্ঠা। তার সহযাত্রীরা অনেকেই ছিলেন ঘুমের ঘোরে। ৩৫ বছরের এই গোর্খা সৈনিক পাকাপাকি সংসার জীবনের গণ্ডিতে প্রবেশ করতে ট্রেনে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন। হঠাৎ জঙ্গল পেরোতেই ট্রেনটি থেমে যায়। মাঝপথে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে যাত্রীদের। ওই কামরায় হুড়মুড়িয়ে ওঠে একদল ডাকাত। তাদের কারোর হাতে তরোয়াল, কারো হাতে ভোজালি। তাদের সাথে পেরে উঠবে না বলে সবাই একে একে তাদের জিনিস দিয়ে দিতে থাকেন। গয়না, ল্যাপটপ, মানিব্যাগ আরো কত কি। তখনো কিন্তু বিষ্ণু টু শব্দ করেননি। বিষ্ণুর পাশের সিটে এক পরিবার ছিল। সেখানে ছিলেন একজন ১৮ বছরের তরুণী, তাদের দিকে ডাকাতদের কুদৃষ্টি পড়তেই চুপচাপ থাকতে পারেননি তিনি। একাই খুকরি নিয়ে ডাকাতদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। বিষ্ণুর হাতে ডাকাত দলের তিনজন প্রাণ হারায়, আর ঘায়েল হয় ৮ জন। সেদিন বিষ্ণু মারাত্মক চোট পেয়েছিলেন, তবে তার সাহসের কাছে পিছু হটে ছিল ডাকাত দল। তার খুকরির জোরে প্রাণ বেঁচে ছিল ট্রেন যাত্রীদের।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version