United States: বিশ্ব শক্তি হারাচ্ছে আমেরিকা ! চীন-সৌদি নিচ্ছে কী মহা-পরিকল্পনা ?

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

United States: গোটা বিশ্বে মোড়লগিরি করা দেশটার একি হাল? শুধু আস্থাই নয়, বন্ধু হারাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সৌদি আরব তার বড় ভরসার জায়গাটা যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং দিয়ে দিল চীনকে? ওদিকে ইউরোপে নিজের জায়গা শক্ত করছেন ভ্লাদিমির পুতিন। গ্যাস অস্ত্রেই মাত দেবেন বাইডেনকে! মধ্যপ্রাচ্য তো বটেই, গোটা ইউরোপে নিজের রাশ আর টেনে ধরে রাখতে পারছে না ওয়াশিংটন। যে ডলার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এত অহংকার, সেই অহংকারই কিনা ভেঙে দিল সৌদি আরব। তাও আবার বড় আঘাতটা পেল বন্ধু রাষ্ট্রের থেকেই। মধ্যপ্রাচ্যে অধিকাংশ দেশই কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রকে খুব একটা পাত্তা দেয় না। বরং সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বেশ মাখোমাখো। কিন্তু সেই সৌদি বন্ধুত্ব তো দূর, এখন চলছে নিজের স্বার্থের নীতিতে। লাভের অঙ্ক গুনতে ডলার নয়, ভরসা রাখছে ইউয়ানের উপর, মানে চীনের উপর। সৌদি তার একটা পদক্ষেপে বুঝিয়ে দিল, ডলারের রাজত্ব এবার শেষ। ডলার দিয়ে গোটা বিশ্বকে হয়ত আর কাবু করে রাখা যাবে না। কিন্তু হঠাৎ কি এমন হল? যার জেরে সৌদি যুক্তরাষ্ট্রকে আর বিশ্বাস করতে চাইছে না? বড় ভরসার জায়গাটা শেষে দিয়ে দিল কিনা চীনকে? এটা জো বাইডেনের পক্ষে মেনে নেওয়া বড্ড কষ্টকর। একে দেশটার সামনে প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন। আর তার উপর এত বড় ধাক্কা। কীভাবে সহ্য করবে ওয়াশিংটন? তাহলে কি, এভাবেই ধীরে ধীরে ফুরিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা? আশঙ্কাই সত্যি হবে। বিশ্বে আর মোড়লগিরি বা দাদাগিরি বলে কিছুই থাকবে না, গোটা বিশ্ব পরিচালনা করবে একজোট হয়ে কিছু শক্তিধর রাষ্ট্র। ভূরাজনৈতিক সমীকরণের অঙ্কটা কিন্তু সেই দিকেই এগোচ্ছে।

 

কূটনৈতিক খেলা ঘোরাচ্ছে সৌদির প্রিন্স, যুক্তরাষ্ট্রের শূন্যস্থানে চীনের বড় লাভ

ওয়াশিংটনের সঙ্গে রিয়াদের সম্পর্ক কয়েক দশকের। সম্পর্ক যে মাখোমাখো সেখানে এতদিন কোনো প্রশ্ন ছিল না। কিন্তু হঠাৎ করে সৌদির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতায় আসতেই কূটনৈতিক খেলাটা খেলছেন অন্যরকম ভাবে। চলতে চাইছেন সমস্ত শক্তিধর রাষ্ট্রকে নিয়ে। তরুণ এই যুবরাজ ক্ষমতা হাতে পেতেই যেমন তার দেশের ভিতরে ঝড় তুলেছিলেন, তেমনই আলোড়ন তুলছেন বহির্বিশ্বেও। পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রিয়াদের দূরত্ব বাড়ছে। আর সেই শূন্যস্থানটা দখল করে করতে এত দিন ওঁত পেতে ছিল চীন। পূরণ হতে চলেছে চীনের সেই স্বপ্ন। কিন্তু কি বলুন তো, একটা সময় যে সৌদি আরব দশকের পর দশক তেল বিক্রি করে কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার কামিয়েছে, হঠাৎ সেই ডলারের রাজত্ব থেকে দেশটা বেরিয়ে আসতে চাইছে। কূটনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, সৌদি আর শুধু তেল ব্যবসায় নয়, বরং অর্থনীতির উন্নয়ন খাতে বিভিন্ন ভাবে ব্যয় করতে চাইছে। কারণ সৌদির যুবরাজ ভালোভাবেই বুঝে গিয়েছে, তেল প্রাকৃতিক সম্পদ। একদিন না একদিন ঠিক শেষ হয়ে যাবে।

 

তাই ভবিষ্যতে বাঁচতে গেলে যুক্তরাষ্ট্র নয়, চলতে হবে সমস্ত দেশের সঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরে এসে এখন সৌদি আরব ঝুঁকছে পূর্ব এশিয়ার দিকে। সৌদি ভাবছে, ভবিষ্যতে বেজিংয়ের সঙ্গে কিছু লেনদেন করবে চীনা মুদ্রায়। অথচ ১৯৭৪ সাল থেকে সৌদি তেল রপ্তানি করেছে পুরোটাই ডলারে। তাই তো আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হয়ত বা সৌদি ধুঁকতে থাকা চীনা মুদ্রাকে সাহায্য করতে চাইছে। আর ওয়াশিংটনকে দিতে চাইছে একটা কড়া বার্তা। আর যদি সত্যি এমনটা হয়ে থাকে, অর্থাৎ সৌদির এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়, তাহলে কিন্তু এটা চীনের কাছে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বড় জয়। চীন কিন্তু এমনি থেকেই দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে কোনঠাসা করতে উঠেপড়ে লেগেছিল। আর সেখানেই বড় মাইল ফলকটা অর্জন করতে চলেছে সৌদির সাহায্য। ১৯৭৪ সালে করা ওয়াশিংটন রিয়াদের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল তার মেয়াদ শেষ হতেইই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছে সৌদি। বন্ধুত্ব নয় , কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সামলাতে চাইছে সমস্ত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। তাই ডলার বাদ দিয়ে ভিন্ন মুদ্রায় তেল বিক্রিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

 

পেট্রোডলারে ঘায়েল যুক্তরাষ্ট্র, সৌদির সাথে ভাঙছে বন্ধুত্ব?

পেট্রোডলার চুক্তি নতুন করে চালু না হওয়ায় অনেকেই মনে করছে, হয়তো বা বিশ্ব বাণিজ্য এবং অর্থনীতিতে তার একটা বড় প্রভাব পড়বে। শুধু তাই নয়, গোটা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ডলার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও এই চুক্তির ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পেট্রোর ডলার কিন্তু আলাদা কোন মুদ্রা নয়, মূলত খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়াম রপ্তানির জন্য ব্যবহৃত যুক্তরাষ্ট্রের ডলারকে বলা হয় পেট্রোডলার। একটা সময় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সোনা আদান-প্রদানের নীতি ছিল, তা বাতিল করার পর যুক্তরাষ্ট্র চালু করেছিল এই পেট্রোডলার নীতি। ১৯৭৩ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষ নেওয়ায় বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের উপর পশ্চিম এশিয়ার তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো বেশকিছু বিধি নিষেধ আরোপ করে। তেল ভান্ডারের এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে সৌদি আরবের সঙ্গে ওয়াশিংটন স্বাক্ষর করেছিল পেট্রোডলার চুক্তি। চুক্তির শর্ত ছিল, সৌদির কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্র তেল কিনবে, আর পরিবর্তে সৌদিকে দেবে সামরিক সহায়তা। আর এই চুক্তির মাধ্যমেই কিন্তু সৌদি আর ইসরায়েলের সংঘাতের আশঙ্কা অনেকটা কমেছিল। এই চুক্তির আরও শর্ত ছিল, সৌদি শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয় বরং অন্য যে কোন দেশে খনিজ তেল বিক্রির ক্ষেত্রে লেনদেন করবে ডলারে। আর এই পেট্রোডলার থেকে যে রাজস্ব আদায় হবে তা সৌদি পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্রে।

 

এখানেই রয়ে গিয়েছে বড় খটকা। এই পেট্রোডলার চুক্তির মাধ্যমেই কিন্তু বিগত ৫০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র আর সৌদি বন্ধুত্বের এক সুতোয় একে অপরের পাশে ছিল। অথচ দেখুন এই ৫০ বছরের মাঝে একবারও দুই দেশের মনে হয়নি এই চুক্তিটা রিনিউ করা দরকার। নতুন করে চুক্তিটা একবার ঝালিয়ে নেওয়া দরকার। হয়ত বা সৌদি এটা ইচ্ছাকৃতভাবেই করেনি। ভবিষ্যতে আগে থেকেই প্ল্যান করে রেখেছিল মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটা। সৌদি আরব এখন নির্দ্বিধায় ডলারের পাশাপাশি তেল বিক্রি করতে পারবে চীনা আরএমবি ইউরো ইয়েন এবং ইউওয়ান সহ বিভিন্ন মুদ্রায়। এই একটা চুক্তির মেয়াদ শেষ হতেই সৌদির সামনে খুলে গেল আরো বড় সুযোগ। যেখানে গুরুত্ব কমল যুক্তরাষ্ট্রের। এটা তো সবাই জানে, বাণিজ্যিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কিংবা অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক জ্বালানি ব্যবস্থা ঠিক কতটা ইম্পরট্যান্ট। আর সেটাকে হাতিয়ার করে যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে গ্লোবাল সাউথের দেশ গুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। তৈরি হচ্ছে শক্তিশালী একটা অর্থনৈতিক শক্তি। যেখানে চীন রাশিয়ার মতো দেশগুলোর ভূমিকা বড্ড বেশি। একের পর এক যোগ দিচ্ছে অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোও। যে যুক্তরাষ্ট্র ডলারের জোরে এতদিন মোড়লগিরি ফলাও করে এসেছে, সেই ডলারের গুরুত্ব কমাতে উঠে পড়ে লেগেছে এই শক্তি জোট। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতায় আসার পরেই কিন্তু চীন আর রাশিয়ার সাথে বিশেষভাবে ঘনিষ্ঠ হয়েছে। আর তার জেরে দূরত্ব বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে। এর ভিতরেও রয়েছে একটা বড় ঘোটালা। কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যখন ক্ষমতায় বসেন, তখনই তিনি সন্ত্রাসী তালিকা থেকে ইয়েমেনের হুতিদের বাদ দিয়েছিলেন, যা কখনোই মেনে নিতে পারেননি সৌদির যুবরাজ। ভিতরে ভিতরে চলছিল একটা অন্তর্দ্বন্দ্ব।

 

ইউরোপে মাটি হারাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, স্বপ্ন পূরণ পুতিনের

ওদিকে আবার হামাস ইসরায়েল আর ইরানের দ্বন্দ্বের মাঝে এমনি থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে একটু একটু করে নিজের জায়গা হারিয়ে ফেলছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলকে সমর্থনের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশ যুক্তরাষ্ট্রের নীতির বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে। আর যদি ইউরোপের কথা বলা হয়, সেখানেও কিন্তু দেশটা নিজের মাটি হারাতে বসেছে। ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের জোর কমছে। যে ইউরোপে এক সময় ত্রাতা বলে মনে করা হতো যুক্তরাষ্ট্রকে, এবার সেই জায়গাটা হয়তো ছিনিয়ে নেবে ভ্লাদিমির পুতিন। একসময় পুতিনকেই থামাতেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছিল পশ্চিমারা। কিন্তু এখন সেই ইউরোপে তার দিকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। পশ্চিমা নেতারা একটা সময় কি না করেনি। নিষেধাজ্ঞা থেকে শুরু করে সামরিক হামলার হুমকি, এমনকি রাশিয়াকে এক ঘরে করার জন্য সমস্ত রকম চেষ্টাই করেছিল। কিন্তু পুতিনকে কোন কিছুতেই টলাতে পারেনি। এবার সেই পুতিন উল্টে ইউরোপের যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যে থাবা বসাতে চলেছে।

 

সেই জায়গাটা হল গ্যাসের সরবরাহ। ইউরোপের দেশগুলো মূলত গ্যাসের জন্য রাশিয়ার উপরে নির্ভর ছিল। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সাময়িকভাবে বিকল্প খুঁজে নেয় ইউরোপ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, আবার রাশিয়ার অনুকূলে আসতে খুব বেশিদিন সময় লাগেনি। গত মে মাসে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে পিছনে ফেলে দিয়েছে রাশিয়া। অথচ এই রাশিয়ার ফসিল ফুয়েল রপ্তানি বন্ধে পশ্চিমারা কম নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউরোপে রাশিয়া গ্যাস সরবরাহের পাইপলাইন কেটে দেয়। অপরদিকে ইউরোপীয়রাও রাশিয়ার কাছ থেকে এলএনজি নেওয়া বন্ধ করে দেয়। এই সুযোগে কপাল খুলে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের। ২০২৩ সালে ইউরোপের মোট গ্যাস সরবরাহের এক পঞ্চমাংশ সরবরাহ করেছিল শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু রাশিয়া ধীরে ধীরে তার নিজের জায়গাটা ফিরে পাচ্ছে। ইউরোপ বুঝে গিয়েছে এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে আর দরকার নেই।

 

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version