বয়স ৮০, তাড়িয়ে দিয়েছে ছেলেরা! নিজের হাতে ছবি এঁকে স্বপ্ন বুনছেন এই বৃদ্ধ

।। প্রথম কলকাতা ।।

বয়স প্রায় ৮০। চোখে ভালোভাবে দেখতে পান না। ছেলেরা রোজগেরে কিন্তু বাবাকে বাড়িতে ঠাঁই দেয়নি। অসহায় বাবা আর অসুস্থ ভাইয়ের খোঁজও রাখে না। বহুদিন হল বৃদ্ধের স্ত্রী মারা গিয়েছেন। দিনশেষে এখনো তিনি দায়িত্বশীল বাবা। যেখানে বয়সটা নিমিত্র মাত্র। তাই নিজের এবং অসুস্থ ছেলের ভরণপোষণের জন্য বেছে নিয়েছেন তার দুটো হাতকে। যে বয়সে বিশ্রাম করার কথা, সেই বয়সে সারাদিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। একা হাতের সামলাচ্ছেন সংসার, অসুস্থ ছেলে এবং তার কাজ। তিনি ভিক্ষা নয়, পেট চালাতে নিজের হাতেই আঁকেন অসম্ভব সুন্দর সব ছবি। সেই ছবি তিনি নিজেই বিক্রি করেন। অনেক কম দামে। বড়জোর ৫০ থেকে ১০০ টাকা। এই শিল্পীর নাম সুনীল পাল। থাকেন গোল পার্কের একটা ঘুপচি ঘরে। সেখানেই সাজিয়েছেন বাবা ছেলের সংসার।

গোলপার্কের অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের কাছে প্রতি মঙ্গলবার আর শনিবার গেলে এই শিল্পীকে দেখতে পাবেন। দেখবেন তার হাতে প্রচুর ছবি। সবগুলোই তার হাতে আঁকা। তার সঙ্গে রয়েছে ঘর সাজানো প্রচুর জিনিস আর ফুলদানি। কোন দোকান না। তার এই সমস্ত জিনিস বিক্রির ঠিকানা ফুটপাত। অত্যন্ত সস্তা দরে বিকোয় তার হাতে আঁকা অসামান্য সব ছবি। যেখানে ফুটে উঠেছে ভারতীয় সংস্কৃতির কথা। যার মধ্যে অধিকাংশ থাকে রাজা রানী নৃত্যরত মানুষের ছবি। বয়সের ভারে চোখে আর আগের মতো ভালো দেখতে পান না। তাই দিনের বেলাতেই চলে শিল্পীর কাজ। প্রত্যেকটা ছবি খুব সুন্দর করে বাঁধানো। ব্যবহার করেন গ্রামীণ রং। কিন্তু এত সস্তা কেন? আসলে তিনি সকলের কাছে তার শিল্পের কাজ সহজলভ্য করে তুলতে চান। যাতে সবাই কিনতে পারেন। তিনি কিন্তু তার কাজের বিনিময়ে প্রচুর টাকা চান। তিনি চান, তার হাতের কাজ মানুষের কাছে মর্যাদা পাক, সম্মান পাক।

বাস্তব জীবন যে ঠিক কতটা কঠিন তা শিল্পী সুনীল পালকে দেখলে বোঝা যায়। তার অনেকগুলো ছেলে রয়েছে। কিন্তু তারা বৃদ্ধ বাবার আর অসুস্থ ভাইয়ের দায়িত্ব নেয়নি। অথচ এই বাবা একদিন তাদেরকে পৃথিবীর বুকে হাঁটতে শিখিয়েছিল। বৃদ্ধ বাবা আর অসুস্থ ছেলে সামান্য কটা টাকার উপর নির্ভর করে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার লড়াই লড়ছেন। সুনীল পাল প্রথাগতভাবে এই সমস্ত শিল্পকর্মের জন্য প্রশিক্ষণ নেননি। কিন্তু আঁকার প্রতি তার বরাবরই বেশ আগ্রহ ছিল। তিনি পট শিল্পীর দেখাদেখি এমন শিল্পকর্ম রপ্ত করেছেন। অভাবের কারণে পড়াশোনা বেশি দূর করতে পারেননি। তাই জীবনের এই বয়সে এসে জীবন জীবিকার তাগিদে নিজের হাতের শিল্পকর্মে ভরসা রাখছেন। নিজের হাতের শিল্পকর্মের উপর টিকে রয়েছেন জীবন সংগ্রাম।স্বপ্ন একটাই, তার কাজ, তার সৃষ্টিশীলতা মানুষের ঘরের কোনায় কোনায় পৌঁছে যাক। তার কাছে বয়সটা কোনো বয়স না। তার মাথায় সারাদিন চিন্তা ঘোরে, কিভাবে তিনি তার কাজ আরো ভালো করবেন আর ছেলেকে ভালো রাখবেন। তার একাকীত্বের জগত জুড়ে আছে শুধুই ব্যস্ততা। সারাদিনই তিনি কোন না কোন কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকেই বাবারা অসীম ক্ষমতার অধিকারী। সন্তানের কাছে বাবারাই সুপার হিরো। আজকের গল্পের এই সুপার হিরো ভিক্ষা নয়, খেটে খেতে চান। মর্যাদা চান নিজের শিল্পের। আগলে রাখতে চান তার ছেলেকে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version