এক সময়ের দৈন্য দশার রাশিয়া টক্কর দিচ্ছে আমেরিকাকে! পুতিনের দাপট দেখার মতো

।। প্রথম কলকাতা ।।

যুক্তরাষ্ট্রকে মুখোমুখি টক্কর দিচ্ছেন ভ্লাদিমির পুতিন। অথচ ভীষণ গরিব ছিল রাশিয়া। সাধারণ মানুষ খেতে পর্যন্ত পেত না। কোন সিক্রেটে আজ এত শক্তিশালী? কোন কিছুতেই ভয় পান না পুতিন। পাত্তা দেন না কোন নিষেধাজ্ঞা। সামলে চলেন জো বাইডেন। আসলে রাশিয়া বাজিমাত করেছে তার স্ট্র্যাটেজিতে। কারণটা জানলে অবাক হবেন।

আজ যে রাশিয়াকে দেখছেন, ধনসম্পত্তি ঐশ্বর্যে মোড়া, কারোর কাছে মাথা নত করে না। একদিন এই রাশিয়ার মানুষ খেতে পেত না। গ্রাস করেছিল মৃত্যু ভয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গনের মাত্র ৭ দিনের মধ্যেই ভেঙেচুরে যায় অর্থনীতি। তার আগে কিছুটা। হাল ধরেছিল লেনিন। দেশটা চলতে চাইছিল পুঁজিবাদের লক্ষ্যে, তাতেই নাগালের বাইরে চলে যায় জিনিসপত্রের দাম। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির পর সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির সংস্কার করতে অনেকেই এগিয়ে আসে। রাজনীতিতে যার অভিজ্ঞতাই ছিল না সেই আন্দ্রে নিচায়েভকে দেওয়া হয় অর্থনীতি ঠিক করার দায়িত্ব। স্বাভাবিক ভাবেই, সেটা যে কতটা করুণ পরিস্থিতি, তা মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পেতে থাকে। সেই সময় রাশিয়ায় কোন সিস্টেমই ছিল না। না ছিল কোন নিজস্ব সেনাবাহিনী, না কোন সীমান্ত, না কাস্টমস। এমনকি ছিল না কোন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা মুদ্রা। বহু পর্যবেক্ষকরা বুঝে গিয়েছিলেন, এইবার রাশিয়া ভেঙে পড়বে। আটকে দেওয়া হয় সব বিদেশি ঋণ। বৈদেশিক মুদ্রার নগদ তহবিল বলে কিচ্ছু ছিল না। রাশিয়ার মানুষ রাতারাতি দরিদ্র থেকে অতি দরিদ্রতে পরিণত হয়। জিনিসপত্র বিক্রি করতে শুরু করেন। ভেঙে পড়তে থাকে ছোটখাটো শিল্প থেকে শুরু করে সামরিক যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবসা। পুরো ৯০ এর দশকের প্রথম ভাগ জুড়ে রাশিয়া ডুবে ছিল মুদ্রাস্ফীতি আর বেকারত্বে।

আর আজ বিশ্ব জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ভ্লাদিমির পুতিন। এটা কিন্তু সহজে আসেনি। আজ তার একটা সিদ্ধান্তেই বিপর্যয় নেমে এসেছে ইউক্রেনে। গোটা বিশ্বে হয়ে উঠেছেন বিচ্ছিন্ন একনায়ক। খুব ছোটবেলা থেকেই মারকুটে ছিলেন। পছন্দ করতেন জুডো খেলতে। ছিলেন পরিশ্রমী। টার্গেট ছিল, রাশিয়ার সর্বোচ্চ সিংহাসন। সময়টা ১৯৯২ সাল। বিপর্যস্ত রাশিয়ার অর্থনীতি। পুতিনের কাঁধে পড়ে গুরুদায়িত্ব। তখন কাজ করছিলেন কেজিবির হয়ে। উত্তাল পরিস্থিতিতে নিজের কব্জায় নিয়ে নেন গ্যাংস্টারদের। নিজের অবস্থান আর ক্ষমতার ব্যবহার করেই ২০০০ সালে হাতে পান রাশিয়ার ক্ষমতা। বুঝতে পারেন, পশ্চিমারা হয়ত তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান করছে। রাশিয়াকে আলাদা করে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। যা সহ্য করতে পারছিলেন না। পুতিন ভীষণ একরোখা, কাউকে ভয় পান না। বুঝতে পেরেছিলেন, ক্ষমতার একমাত্র উৎস শক্তি। সেখানে পশ্চিমারা যতই পরিকল্পনা ফাঁদুক না কেন পিছিয়ে পড়তেই হবে।

স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তি হয়েছে বহুদিন হল কিন্তু তাও মুখোমুখি পাশ্চাত্য আর রাশিয়া। কেউ কারোর জায়গা থেকে এক চুলও পিছু হটছে না। না আদর্শগত জায়গায়, না ভূ-রাজনৈতিক ব্যাপারে। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের জিডিপি ছিল মাত্র ২.৫ হাজার বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে রাশিয়ার জিডিপি ১.৭১ ট্রিলিয়ন ডলার। ভাঁড়ারে জমা আছে প্রায় সাড়ে ছ হাজার নিউক্লিয়ার হাতিয়ার। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার কাছে অতি তুচ্ছ। টেকনোলজিতে জাপানের থেকেও এগিয়ে রাশিয়া। বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাস্ত্র সাপ্লাই করে। রপ্তানি বাড়াতে তৈরি করে চলেছে নতুন নতুন ইন্ডাস্ট্রি। এভাবেই রাশিয়ার মাটিতে পুতিন হয়ে উঠেছেন একজন ফিয়ারলেস নেতা। ভালো নেতৃত্ব যে কোন দেশকে মহাশক্তিতে পরিণত করতে পারে। বলা বাহুল্য, পুতিনের সিদ্ধান্ত নিয়ে যতই সমালোচনা হোক না কেন, তার নেতৃত্বে রাশিয়া পেয়েছে শক্ত মাটি। রাশিয়ার সাথে জোর গলায় কথা বলতে ভয় পায় অন্যান্য পরাশক্তি গুলো।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version