শ্রীলঙ্কায় চীনা এফেক্ট কমাবে হামবানটোটা ? ভারতের হাতে বড় অ`স্ত্র। একটা চালেই ফেইল করলো চীন

।। প্রথম কলকাতা ।।

চীনের বড় অ্যাসেট শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা! যখন তখন ভারতকে ঘিরে ফেলতে পারে চীন? কতটা রিস্কে ভারত? স্বার্থে হাত পড়লে বেজিং কিন্তু খতরনাক। হামবানটোটা নিয়ে কী সাধে আপত্তি ছিল নয়াদিল্লির? কোন টোটকা কোন মন্ত্র হামবানটোটাই হয়ে উঠছে ভারতের গেমচেঞ্জার? জানেন, কীভাবে ভারত শ্রীলঙ্কার সম্পর্ক ঘুরিয়ে দিল এই হামবানটোটা ইন্টারন্যাশনাল পোর্ট? মানতে হবে ক্ষমতা আছে, রিস্কে থেকেও উইনার ভারত। সত্যিই কি, ভারতের উপর নজরদারি চালাতে, স্পাইং করতে হামবানটোটার দায়িত্ব নিয়েছে চীন? কথায় বলে, যা রটে তা কিছু না কিছু বটে। তাই, এই জল্পনা নিয়ে ১০০% সিওর ছিল ভারত। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের মতে, চীনের স্বার্থে হাত পড়লে তারা হামবানটোটায় যখন তখন নৌসেনা মোতায়েন করতেই পারে।

শুধু তাই নয়। ভারতকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরতে বেজিংয়ের কাছে শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে বলেও দাবি নয়াদিল্লির। বুঝতে হবে এই বন্দর চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান করিডর’ প্রজেক্টের অঙ্গ। গোড়া থেকেই যে প্রজেক্টের বিরোধিতা করছে ভারতবর্ষ। আর দিল্লি যে ভুল নয় তা প্রমাণ করে দিয়েছিল ২০২২ এর এই ঘটনা। ২০২২ সালে হামবানটোটা নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়। অগস্টের শুরুতেই ওই বন্দরে চীনের উপগ্রহ এবং ক্ষেপণাস্ত্র নজরদারি জাহাজ ‘ইউয়ান ওয়াং ৫’ নোঙরের জন্য শ্রীলঙ্কার অনুমতি চায় চীন। প্রথমদিকে হামবানটোটা বন্দরে চীনা জাহাজটিকে ঠাঁই না দেওয়া হলেও, পরে শ্রীলঙ্কা পারমিশন দেয়। ১৬ অগস্ট হামবানটোটা বন্দরে ঢোকে ইউয়ান ওয়াং ৫। ভারতের আশঙ্কা ছিল, চীন এই জাহাজের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন সেনসিটিভ ইনফরমেশন, উপগ্রহের অবস্থান জেনে যেতে পারে চীনের পক্ষে কিছুই অসম্ভব নয়। যদিও, চীন আশ্বস্ত করে জানিয়েছিল, তেমন কোনও উদ্দেশ্য তাদের নেই। আর শ্রীলঙ্কা?

শ্রীলঙ্কা স্পষ্ট করে জানিয়েছিল, শুধুমাত্র ব্যবসায়িক কাজেই ওই বন্দর ব্যবহার করতে পারবে চীন। হামবানটোটা বন্দরে কোনও রকম সামরিক কার্যকলাপ চালানোর অনুমতি চীনকে দেবে না শ্রীলঙ্কা। তারপরেও, চীনের স্পাই জাহাজ ওই বন্দরে ভিরেছে। চিনের সঙ্গে ওই বন্দর নিয়ে চুক্তির কারণে ভারত শ্রীলঙ্কার সম্পর্কের সমীকরণেও চিড় ধরে। কিন্তু সেখান থেকেই পরিস্থিতি বদলেছে। ভারত কি ম্যাজিক জানে? অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে পড়ে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার বিদেশি মুদ্রার ভাঁড়ারও প্রায় শূন্য। চীনের ঋণের জালেই দ্বীপরাষ্ট্রটি অর্থনৈতিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে বলে মনে করেন সে দেশের মানুষই। তাই শ্রীলঙ্কায় চীনের প্রভাব নিয়ে বহু বার ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখা গিয়েছে শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষকে। এখানেই চীনের চাল ফেল করে গেছে? ভারত সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েছে।

শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক ভাবে দুঃস্থ হয়ে যাওয়ার পর সে দেশের পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত। ফলে শ্রীলঙ্কা এবং ভারতের সম্পর্ক এখন অনেকটাই পোক্ত বলে মনে করছেন কূটনীতিবিদরা। সম্পর্কের সাময়িক শীতলতা কাটিয়ে উষ্ণ হয়েছে দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক। যে সম্পর্ক হাম্বানটোটা তথা সারা শ্রীলঙ্কার উপর চীনের প্রভাব কমাতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। কিন্তু পুরো বিষয়টা কি এতই সোজা? মনে করিয়ে দিই হামবানটোটা আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর, কলম্বোর পরে এটাই ভারত মহাসাগর দিয়ে ঘেরা দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দর। ২০১০ সালে এই বন্দর চালু হয় এই বন্দরের আন্তর্জাতিক গুরুত্ব নিয়ে চর্চা তখন শুরু হয়, যখন চীন এই বন্দরকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেয়। বর্তমানে এশিয়া এবং ইউরোপের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার এই বন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম বলে মনে করা হয়। কিন্তু, আগে বিষয়টা মোটেও এমন ছিল না।

শ্রীলঙ্কার এই বন্দর অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক নয় বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। তারপরই শ্রীলঙ্কার তৎকালীন রনিল বিক্রমাসিঙ্ঘের সরকার দেশের অর্থনৈতিক ভান্ডারে বৈদেশিক মুদ্রা বৃদ্ধি করার তাগিদে এই বন্দর বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত নেয়। চীনের এক সংস্থাকে ১১২ কোটি ডলারের বিনিময়ে বন্দরটি লিজ় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শ্রীলঙ্কা। চুক্তি করা হয়, বন্দরটিকে ঢেলে সাজাতে এবং অত্যাধুনিক বানাতেও বিনিয়োগ করবে ওই চীনা সংস্থা। শ্রীলঙ্কার বন্দরে চীনের বিনিয়োগ দেখেই টনক নড়ে আন্তর্জাতিক মহলের। কিন্তু কেন অর্থনেতিক সঙ্কটের মুখে থাকা শ্রীলঙ্কার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এই বন্দরের দায়িত্ব নিল চীন? উঠতে শুরু করে সেই প্রশ্নও। চীনের এই ‘উদার’ মনোভাবে সন্দেহ তৈরি করেছিল ভারতের মনে। হামবানটোটা বন্দরের দায়িত্ব চীন নেওয়ার এই খবর দিল্লির জন্য ভাল নয় বলে সতর্ক করেছিলেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও। হামবানটোটা বন্দরে চীন শক্তপোক্ত নৌঘাঁটি গড়ে তুলে ভারতকে অস্বস্তিতে ফেলার কৌশল নিতে চায় বলেও মনে করে ভারত। আর ঠিক এই কারণেই ভারত শ্রীলঙ্কার সম্পর্ক জোরদার হলেই যে হাম্বানটোটা চীনা এফেক্ট থেকে বেরোতে পারবে। এমন কথা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যাচ্ছে না।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version