Cyclone Mocha: মোকার রিস্কজোনে বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চল? জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা, সাইক্লোনের এই স্টেজকেই ভয়

।। প্রথম কলকাতা ।।

Cyclone Mocha: ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোন স্টর্ম মোকা কতটা ভয়ঙ্কর? মোকার আঘাতে তছনছ হতে পারে বাংলাদেশের এই দ্বীপ, সেফ নয় পায়রা সমুদ্র বন্দরও। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে পাহাড় ধ্বসের বিরাট রিস্ক।‌ আর কোথায় কোথায় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখানোর নির্দেশ? কোন কোন উপজেলা রিস্ক জোনে? মোকা মোকাবিলায় কিভাবে তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশ? বাংলাদেশের সব উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা প্রকাশ আবহবিদদের। ফুঁসছে সাগর।

ঘূর্ণিঝড় মোকা সুপার সাইক্লোনে পরিণত হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার। হাওয়ার গতিবেগ হতে পারে ঘন্টায় ২২১ কিলোমিটার এরও বেশি, ইতিমধ্যেই সোশ্যাল সাইটের পোস্টে এ কথা জানিয়েছেন কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ। হ্যাঁ, আরও ভয়ঙ্কর, আরও শক্তি বাড়াচ্ছে “মোকা”। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর রীতিমতো ফুঁসছে। এর প্রভাব হতে পারে মারাত্মক। মোকার প্রভাবে বাংলাদেশের দেশের সব উপকূলীয় এলাকায় ১০ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আবহবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ। কক্সবাজারের টেকনাফ এবং মিয়ানমারের উপকূলে “মোকা” আঘাত হানবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে দু নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। কক্সবাজারের চারটে উপজেলা টেকনাফ, উখিয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী রয়েছে রিস্কজোনে।

মোকা মোকাবিলায় তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যেই, দুর্যোগ মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা কক্সবাজারে দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিলেও সেন্টমার্টিন দ্বীপের ক্ষেত্রে ছবিটা ব্যতিক্রমী। ওই দ্বীপে প্রচার বা মাইকিং হয় না। স্থানীয়রা নিজ দায়িত্বে প্রস্তুতি নেয়। সেই মতো, সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষ স্পিড বোট, মাছ ধরার নৌকায় করে টেকনাফের দিকে সরে যেতে শুরু করেছেন। বয়স্ক মানুষ বা যারা কাঁচা ঘরে থাকেন তাঁরা রিসর্টের বারান্দায় আশ্রয় নেন। পরিস্থিতির কথা জেনে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আবহবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ। ওই দ্বীপের মানুষগুলোর জন্য কি করা উচিৎ ছিল, প্রধানমন্ত্রী পদে থাকলে তিনি কি করতেন তা সোশ্যাল সাইটে পোস্ট করে জানিয়েছেন

অন্যদিকে, স্ট্যান্ডিং অর্ডার অন ডিজাস্টারের নির্দেশ অনুযায়ী জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, জল উন্নয়ন বোর্ড, রেড ক্রিসেন্ট সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সব কর্মকর্তাদের ছুটিতে যেতে বারণ করেছে। কক্সবাজার জেলা জুড়ে ৫৭৬টি সাইক্লোন সেন্টার খোলা হয়েছে। সময় মতো সবাইকে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। থাকছে জল, শুকনো ও রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা। আর, যারা ভিটেবাড়ি ছেড়ে সাইক্লোন সেন্টারে যেতে চায় না সেইসব রিস্কি এলাকায় থাকবে স্বেচ্ছাসেবক। উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় যারা থাকেন, তাদের জন্য কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই। তাদের ঘরবাড়ি বড় ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলারও উপযোগী নয়। এই পরিস্থিতিতে তারা কোথায় আশ্রয় নেবে? রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ইন চার্জের অফিস, হাসপাতাল, মসজিদ, ও সরকারি দফতরগুলোতে সাময়িক আশ্রয় দেওয়া হতে পারে বলে খবর।

এরপরও ভূমিধসপ্রবণ এলাকাগুলোর জন্য দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। সেখানকার লোকজনকে আগেভাগে সরিয়ে নেওয়ার ওপর বিশেষভাবে জোর দেওয়া হচ্ছে। কারণ, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে পাহাড় ধ্বসের বিরাট রিস্ক রয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় প্রতিটা ক্যাম্পে ১০০ জন করে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে, যারা রোহিঙ্গাদের বাড়িগুলোকে সাময়িকভাবে মজবুত করার কাজ করবে। একইসাথে, ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে কনক্রিটের কাঠামোয় রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিতে এই স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করবেন। পাশাপাশি, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় কক্সবাজারের প্রতিটি উপজেলায় রেড ক্রিসেন্টের আলাদা আলাদা দল গঠন করা হয়েছে। থাকছে কন্ট্রোল টিম যারা সার্বিক তত্ত্বাবধানে কাজ করবে। মোবাইল মাইকিং টিম, যারা আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় প্রচার চালাবে। দুর্যোগ চলাকালীন সময়ে উদ্ধারকাজ চালাতে মাঠে থাকবে-ইউনিয়ন ডিজাস্টার রেসকিউ টিম। আশ্রয় কেন্দ্রে আহত কেউ থাকলে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কাজ করবে ফাস্ট এইড টিম।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় উপকূলবর্তী জেলাগুলোর প্রায় ১৫০ ফায়ার স্টেশন প্রস্তুত রয়েছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, আনসার, কোস্টগার্ডও প্রস্তুত রয়েছে। তৈরি থাকছে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মেডিকেল টিম। খাবার স্যালাইন, জল বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট, প্রয়োজনীয় ওষুধ, সাপে কাপড় দেওয়া রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক অ্যান্টিভেনম, প্রয়োজনীয় জ্বালানি সহ অ্যাম্বুলেন্স এবং ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা থাকছে। এককথায়, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ার পর থেকে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ শূন্য পর্যায়ে রাখতে তৎপরতার সাথে একের পর এক পদক্ষেপ করে চলেছে বাংলাদেশ সরকার। বিভিন্ন গ্লোবাল মডেল বিশ্লেষণ করে আবহবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন “ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রভাগ ১৪ই মে রবিবার সকাল ৬ টার পর থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলে আঘাত করার আশঙ্কা থাকছে, ঘুর্ণিঝড় কেন্দ্র দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আর পিছনের অংশ সন্ধ্যা থেকে ১৫ই মে সোমবার ভোর পর্যন্ত উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে”।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version