।। প্রথম কলকাতা ।।
Police: পুলিশ (Police) মানে আমজনতার স্বস্তির নিঃশ্বাস, আর চোরেদের দীর্ঘশ্বাস। একবার ভাবুন তো, যদি পুলিশ না থাকতো তাহলে কি হত? গোটা পৃথিবী (World) জুড়ে হুলুস্থুল কান্ড বেঁধে যেত। যে যা পারত তাই করত। আইন-শৃঙ্খলা বলে কিছু থাকত না। পুলিশ আছে বলেই আমরা শান্তিতে ঘুমাতে পারেন। পৃথিবীর কমবেশি প্রত্যেকটা দেশেই এই পুলিশি ব্যবস্থা রয়েছে। যারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করে থাকেন। এই ‘ পুলিশ’ এর ধারণা কোথা থেকে এল? আইনশৃঙ্খলা বাঁচাতে এনারা কেমন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেন? পুলিশের সর্বোচ্চ পদে চাকরি করতে গেলে আপনাকে কি করতে হবে? রইল পুলিশ সম্পর্কিত নানান অজানা তথ্য।
সেই প্রাচীনকাল থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য শাসকরা বিশেষভাবে লোক নিয়োগ করত। পরবর্তীকালে সেখান থেকে পুলিশের ধারণা আসে। এই পুলিশ শব্দটি পাওয়া যায় সপ্তদশ শতকে প্রকাশিত দ্যা সেকেন্ড পার্ট অফ দা ইনস্টিটিউট অফ দ্যা লস অফ ইংল্যান্ড নামক বইতে। প্রাচীন কাল থেকে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক অঙ্গ হিসেবে পুলিশের মতো বিশেষ বাহিনী কাজ করে চলেছে। যাদের হাতে আইনসম্মত ভাবে গ্রেফতার করার ক্ষমতা রয়েছে। পুলিশ বাহিনী মূলত জনসেবায় নিয়োজিত এক প্রতিষ্ঠান। পুলিশের ইতিহাস আরো প্রাচীন। সেই খ্রিস্ট জন্মের বহুবছর আগে থেকেই নাকি পৃথিবীতে এই ব্যবস্থার প্রচলন ছিল। প্রাচীন চৈনিক সভ্যতায় ছিল পারফেক্টস নামক এক বিশেষ বাহিনী। যেখানে নারী-পুরুষ উভয় থাকত। এদের হাতেই ছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ। অপরদিকে প্রাচীন গ্রিসের দাসদের নিয়ে তৈরি ছিল রড বেয়ারার বা লাঠি বহনকারী বাহিনী। যারা পুলিশের কাজকর্ম করত। যত সময়ের জল গড়িয়েছে ততই এই পুলিশি ব্যবস্থার বিবর্তন দেখা গিয়েছে। মধ্যযুগের স্পেনে এদের বলা হত হলি ব্রাদারহুড, ফ্রান্সে বলা হত মার্শাল। আধুনিক যুগের শুরুতে যে পুলিশি ব্যবস্থার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে তার ধারণা এসেছে প্যারিসের ১৬৬৭ সালে তৈরি পুলিশ বাহিনী থেকে। একটা সময় পুলিশকে মানুষ রাবণের চোখে দেখত। ভয় পেত। যদিও পুলিশ মানেই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। প্রাচীন বা মধ্যযুগের অত্যাচারী সেই পুলিশ আর নেই। এখন তাদের ঝুলিতে রয়েছে অগুনতি ভালো কাজের নিদর্শন। মানবতার সেবায় নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করতে তাঁর দুবার ভাবেন না।
পশ্চিমবঙ্গে পুলিশের অস্ত্র বিবর্তন
বারংবার বদলেছে পুলিশের হাতের অস্ত্র। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সময়ের তাগিদে বিভিন্ন অস্ত্রের উপর ভরসা রেখেছে পুলিশ। ১৮ শতকে ব্রিটিশ প্রশাসক লর্ড ময়রার সময়ে কলকাতা পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের হাতে থাকত ম্যাচ লক নামক অস্ত্র। এই বন্দুকে একবার ট্রিগার টিপলেই জ্বলন্ত সলতে লাগানো একটি অংশের মাধ্যমে আগুন লাগতো নলের গোড়ায় থাকা বারুদে। তারপর থেকে ধীরে ধীরে এই অস্ত্রের ভোল বদলাতে থাকে। ১৮ শতকের শেষে পুলিশ হাতে তুলে নেয় ব্রাউন বেস মাসকেট। কিছুদিন পর আসে এনফিল্ড ৫৩ প্যাটার্ন স্মুথ বোর মাস্কেট। এখানে আর সলতে জ্বলত না, তার পরিবর্তে বন্দুকের গোড়ায় ছিল এক পাথর। যেখান থেকে তীব্র গতিতে আগুনের স্ফুলিঙ্গ বেরিয়ে আসত। উনিশ শতকে বিপ্লবীদের জব্দ করতে পুলিশে বেতের পরিবর্তে হাতে তুলে নেয় ওয়েবলি রয়্যাল আইরিস কনস্টাবুলারি নামক এক রিভালবার। একদিকে বিপ্লবী সংগঠন মজবুত হতে থাকে অপরদিকে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে আসে উন্নত রাইফেল থ্রি নট থ্রি। এই বিশেষ রাইফেল তখন বিপ্লবীরাও, বিশেষ করে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা ব্যবহার করেছিল। এরপর একের পর এক বিবর্তনের ফলে এখন কলকাতা পুলিশের হাতে রয়েছে নানান অস্ত্রের সম্ভার।
বিভিন্ন পদ ও নিয়োগ
পুলিশ এই শব্দটার মধ্যে রয়েছে প্রচুর দায়িত্ববোধ। পদ অনুযায়ী দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া থাকে, শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই রয়েছে বিভিন্ন পুলিশ জোন। পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ সার্ভিসের গুরুত্বপূর্ণ পদ গুলি হল ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ, অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ, ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ, ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ, সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ, সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ, অ্যাডিশনাল সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ, সাব ডিভিশনাল পুলিশ, অফিসার অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ, পুলিশ ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর, অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর, কনস্টেবল প্রভৃতি। প্রত্যেকটি পদের জন্য আলাদাভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বেরোয়। পরীক্ষার ধরন আলাদা এবং ট্রেনিংও আলাদা হয়ে থাকে। মূলত একটি থানার দায়িত্ব থাকে এস পি অর্থাৎ সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশের কাছে। তার অধীনে থাকে এসআই এবং কনস্টেবলরা। যদি কেউ ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ হতে চান সেক্ষেত্রে ইউপিএসসির সিভিল সার্ভিস দিয়ে এই পদে নিযুক্ত হতে পারেন। এছাড়াও ডব্লিউবিসিএস এর গ্রুপ বি পরীক্ষার মাধ্যমে এই পদে নিয়োগ করা হয়।
পুলিশে নিয়োগ মানেই লিখিত এবং শারীরিক পরীক্ষা যেখানে যেখানে নির্বাচিত হওয়ার পর কঠোর ট্রেনিংয়ে থাকতে হয়। ভারতের যে কোনো রাজ্য পুলিশ বিভাগের সব থেকে উঁচু পদ হলো ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ বা ডিজিপি। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার মাধ্যমে ডিজিপি নিয়োগ করা হয়। প্রার্থীদের বয়স হতে হয় ২১ থেকে ৩২ বছর বয়সের মধ্যে, তবে সংরক্ষিত প্রার্থীদের সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বয়সের কিছু ছাড় রয়েছে। সিভিল সার্ভিসের এই পরীক্ষা হয় মোট তিনটি পর্যায়ে। প্রথমটি প্রিলিমিনারি, তারপর মেন্স এবং শেষে থাকে ইন্টারভিউ। ইন্টারভিউতে উত্তীর্ণ হলে তবেই সেই প্রার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয় একজন যোগ্য পুলিশ অফিসার হিসেবে। সাধারণত এই অফিসারদের বেতন হয় প্রায় ৫৬ হাজার থেকে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এই পরীক্ষাকে হালকা ছলে নেবেন না, কারণ সারা দেশ জুড়ে লক্ষ লক্ষ প্রার্থী এই পরীক্ষায় বসলেও পরীক্ষার সবকটা ধাপে পাস করে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় মাত্র কয়েকশো প্রার্থী।
কলকাতা পুলিশের পোশাক সাদা কেন?
মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে কলকাতা পুলিশের পোশাক সাদা রঙের কেন? ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশের পোশাক দেখা গিয়েছে খাকি রঙের। যদিও শুধু কলকাতা পুলিশ নয় পশ্চিমবঙ্গের যতগুলি পুলিশ কমিশনারেট আছে সেখানে পুলিশদের সাদা পোশাক পরতে দেখা গিয়েছে। ১৮৪৫ সালে ব্রিটিশ শাসনকালে তৈরি হয়েছিল কলকাতা পুলিশ। তখনই ব্রিটিশ অফিসার আলোচনার মাধ্যমে কলকাতা পুলিশের ইউনিফর্ম সাদা রঙের করা হয়। কলকাতা পুলিশ বাদ দিয়ে রাজ্য পুলিশের পোশাক খাকি রংয়ের। তারপরে ১৮৬১ সালে তৈরি হয় বেঙ্গল পুলিশ। ১৮৪৭ সালে ব্রিটিশ সরকারের একজন কর্মকর্তা কলকাতা পুলিশের সাদা পোশাক বদলে খাকি ইউনিফর্ম পরার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন কলকাতা পুলিশ। কারণ হিসেবে জানিয়েছিল কলকাতার পরিবেশ খুব আর্দ্র। আবহাওয়ার দিক থেকে সাদা রং উত্তম হবে। সেখান থেকে আজ পর্যন্ত তিলোত্তমার পুলিশের পোশাক সাদাই রয়ে গিয়েছে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম