India-Bangladesh Relationship: ভারত-বাংলাদেশ আগামী ৫ বছর, কী পাবে? কী হারাবে ঢাকা?

।। প্রথম কলকাতা ।।

India-Bangladesh Relationship: ঢাকা দিল্লি সম্পর্ক আগামী ৫ বছরে ঠিক কি কি বিষয়ের উপর নির্ভর করবে? তিস্তা জট কাটবে? দুটো দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের মাঝে থার্ড পার্টি চীন একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের যে টেমপ্লেট বা কাঠামো, সেটা পরিবর্তনের চান্স কতটা? মাতারবাড়ি প্রজেক্ট কিভাবে ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কে এফেক্ট ফেলবে? আর কোন কোন ইস্যু এই দুটো দেশের কাছে গুরুত্ব পেতে পারে?

দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদী ও ঢাকায় শেখ হাসিনার সরকার বিগত এক দশকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের যে টেমপ্লেট বা কাঠামো গড়ে তুলেছেন, একটা দেশের আরেকটা দেশের প্রতি যে নীতি, সেইসব কিছু আরও অন্তত পাঁচ বছর যে অক্ষুণ্ণ থাকবে সেটা জোর গলায় বলতে দ্বিধা করছেননা বিশ্লেষকরা। কিন্তু, টেমপ্লেট অপরিবর্তিত থাকলেও দু’দেশের আলোচনার এজেন্ডায় যে পরিবর্তন আসবে সেটাই এক্সপেক্টেড।

সেদিক থেকে দেখতে গেলে দুটো দেশের মধ্যে এখনো কিছু জট রয়েছে। যার সবথেকে বড় উদাহরণ তিস্তা চুক্তি। এবং কিছু নতুন ইস্যু তৈরি হচ্ছে বা হয়েছে যেগুলো ভারত বাংলাদেশকে কাছাকাছি আনতে বড়সড় ভূমিকা পালন করবে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গঙ্গা চুক্তির নবায়ন। না-হওয়া তিস্তা চুক্তিকে ছাপিয়ে পরবর্তী অন্তত তিন বছর যে নদীটাকে ঘিরে আলোচনা ঘুরপাক খেতে পারে, সেটা গঙ্গা।

কারণ, ভারত বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গা নিয়ে যে ডিল হয়েছিল তার ডেডলাইন শেষ হচ্ছে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে। তবে সমস্যাটা তৈরি হতে যাচ্ছে অন্য জায়গায়। নতুন করে যে চুক্তি সই হবে, তাতে জল ভাগাভাগির ফর্মুলা একই থাকবে না কি সেটাতে পরিবর্তন আনা হবে তা নিয়ে ভেতরে ভেতরে মৃদু দর কষাকষিও চলছে, বলছে বিবিসির রিপোর্ট।

 

যদিও এখনও হাতে আড়াই বছর সময় রয়েছে। রাজনীতিতে যেটা দীর্ঘ সময়। এরমধ্যে ভারতে লোকসভা নির্বাচন আছে। ২০২৬র মে মাসে, চুক্তি নবায়নের আগেই পশ্চিমবঙ্গে পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলায় কিনা, পশ্চিমবঙ্গ সরকারই বা বাংলাদেশকে নিয়ে ঠিক কি নীতি নেয়? সেগুলো এক্ষেত্রে ভাববার বিষয়। ১৯৯৬ সালের ১২ই ডিসেম্বর যখন দুই দেশের মধ্যে এই চুক্তি হয়েছিল, তখন আর এখনকার বাংলাদেশের মধ্যে বিস্তর ফারাক। এই বিষয়টা বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন নতুন গঙ্গা চুক্তিতে বাংলাদেশ যে অতিরিক্ত কিছু ফায়দার দাবি জানাবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু তার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত কতটুকু কি মানতে রাজি হয়? কোন ফর্মুলায় শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য হয়? সেটা দুটো দেশের জন্যই খুব ইম্পরট্যান্ট ফ্যাক্টর।

আবার মাতারবাড়ি প্রজেক্ট এই দুটো দেশের সম্পর্ককে একেবারে একটা অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেবে বলেই আশা রাখছেন বিশ্লেষকরা। কারণ, দীর্ঘ দশ বছর ধরে প্রধানত জাপানের ঋণে মাতারবাড়ি প্রজেক্ট গড়ে তোলা হলেও ভারতেরও এখানে বিরাট ‘স্টেক’ আছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। যেখানে চীন কিন্তু বিশেষ জায়গা করতে পারেনি। বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, বাংলাদেশের সোনাদিয়াতে গভীর সমুদ্র বন্দর গড়ার ব্যাপারে চীন অত্যন্ত উৎসাহী থাকলেও বাংলাদেশ সরকার যে শেষ পর্যন্ত সেই প্রস্তাব নাকচ করে জাপানের পেশ করা মাতারবাড়ি প্রকল্পেই সায় দিয়েছে, তার নেপথ্যে ভারতের একটা বড় ভূমিকা আছে। কিন্তু কিভাবে মাতারবাড়ি হয়ে উঠতে পারে গেমচেঞ্জার? দেখুন মাতারবাড়ি থেকে সড়কপথে ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারেরও কম। সেক্ষেত্রে ত্রিপুরা রুট দিয়ে বাণিজ্য ভারত বাংলাদেশের মধ্যে বড় পজিটিভ প্রভাব ফেলবে। আগামী দিনে মাতারবাড়িই হয়তো হয়ে উঠবে প্রধান বাণিজ্যিক হাব। আর ঠিক সেই কারণেই পরবর্তী পাঁচ বছরে ভারত বাংলাদেশের যাবতীয় দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় এই প্রজেক্টটা ঘুরেফিরে আসবে। যেটা অস্বীকারের কোনো জায়গা নেই।

আরেকটা বিষয়কে দুটো দেশ এড়িয়ে যেতে পারবেনা। ভারত বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে একটা ‘এলিফ্যান্ট ইন দ্য রুম’ আছে। এই ফ্রেজটা কেন ব্যবহার করলাম? বলছি। একটা জটিল সমস্যা বা কঠিন পরিস্থিতির কথা সবাই জানে, অথচ চট করে বা প্রকাশ্যে সেটা নিয়ে কেউ কথা বলতে চায় না। ভারত বাংলাদেশের মাঝে এরকম একটা পজিশনে বসে আছে চীন। যে চীনা ফ্যাক্টর নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। ঘরের পাশে বাংলাদেশে চীন কতটা আর কীভাবে প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে, অথবা বেইজিং কীভাবে ঢাকাকে কাছে টানার চেষ্টা করছে সে দিকে ভারত সব সময় সতর্ক নজর রাখে রাখবেও। হ্যাঁ হয়তো সেটা নিয়ে প্রকাশ্যে কখনোই মন্তব্য করা হয় না। কারণ, ভারত বেসিক্যালি বন্ধু বাংলাদেশের আপদে-বিপদে পাশে থাকে। কিন্তু কোনো আভ্যন্তরীণ বিষয়ে জোর খাটায় না। এটাই ভারত।

এমনকি বাংলাদেশকে যে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেই চলতে হবে এটা ভারত খুব ভালভাবেই উপলব্ধি করে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো করে ভাবেনা দিল্লি। কিন্তু বাংলাদেশে যদি চীন এমন কিছু করতে যায় যেটা ভারতের স্ট্র্যাটেজিক বা অর্থনৈতিক স্বার্থকে সরাসরি হুমকিতে ফেলবে, ভারত অবশ্যই সেটা অ্যাড্রেস করতে চাইবে, তেমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আবার যেহেতু বাংলাদেশ ভারতের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাই সম্প্রতি ভারত মহাসাগরের মালদ্বীপে যেভাবে ভারত-বিরোধী সেন্টিমেন্টে ভর করে একটি চীন-পন্থী সরকার ক্ষমতায় এসেছে, ভারত কিছুতেই চাইবে না বাংলাদেশেও তার পুনরাবৃত্তি হোক। ফলে বাংলাদেশের মাটিতে চীনের রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক প্রভাব খর্ব করার একটা চেষ্টা ভারতের দিক থেকে থাকবেই।

একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রও যদি বাংলাদেশের দিকে কোনো ক্ষেত্রে কড়া নজর রাখে, সেটাতেও বাংলাদেশ ভারতকে যে পাশে পাবে সেটা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা। যদিও মিয়ানমার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র আপাতত বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। এমনকি বাংলাদেশের নির্বাচনের পরে যুক্তরাষ্ট্রের সুর ঢাকার প্রতি অনেকটাই নরম হয়েছে। কিন্তু, তারপরেও ভারত নজর সরাচ্ছে না চীন বা যুক্তরাষ্ট্রের উপর থেকে।

কারণ, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত তিনটে সরকারের আমলে যে দেশটার সঙ্গে তাঁরা সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে এগোচ্ছে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে যারা সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে পাচ্ছে, সেটা আর কেউ নয়, ভারত। উল্টোদিকে আমাদের দেশ একবার নয় একাধিকবার বলেছে দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশই সব চেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই তিস্তা চুক্তির জটকে যদি বাপাশে সরিয়ে রেখে দেখি, তাহলে কোন কোন চুক্তির সফল বাস্তবায়ন হয়েছে দুটো দেশের মধ্যে সেই পাল্লা অবশ্যই ভারী হবে। যেমন

• ১০০ কোটি ডলার ঋণ সহ ১৪ প্রকল্প

• বন্দী বিনিময়

• নদীর জল বন্টন

• ছিটমহল বিনিময়

• দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি

• উন্নয়ন সহযোগিতার কাঠামো চুক্তি

• সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে বিজিবি বিএসএফ চুক্তি

• দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধি

পণ্য পরিবহন

• রেল চুক্তি

• সাব্রুমের মানুষের জন্য ফেনীর জল

• জ্বালানি

• কৃষি

• সামরিক চুক্তি

 

বিভিন্ন ঋণচুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে কোটি কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তা সহ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল রুট-সম্পর্কিত প্রটোকল, ঢাকা-গুয়াহাটি-শিলং এবং কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা বাস সার্ভিস, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার-সম্পর্কিত সমঝোতা স্মারকের মতো একাধিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে দুটো দেশের মধ্যে। আর এরপরের প্রত্যাশা? যুদ্ধের কারণে বিশ্ব যে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে সেখান থেকে উত্তরণের জন্য বিশ্বস্ত প্রতিবেশী হিসাবে বাংলাদেশ এবং ভারতের একে অপরের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

তাছাড়াও বাংলাদেশ ও ভারতের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে নিরপেক্ষ নীতি দুই দেশের সৌহার্দপূর্ণ ভবিষ্যতের জন্য অপরিমেয় ভূমিকা রাখতে পারে। যা বৈশ্বিক সংকটময় পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি পারস্পরিক উন্নয়ন, আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তাকে আরো সুসংহত করবে। একে অপরের পাশে থাকবে। সাথে থাকবে। এবং প্রধানমন্ত্রী হাসিনার নতুন মেয়াদেও সেই ধারা বজায় থাকার সম্ভাবনা থাকবে ষোলো আনা। https://www.facebook.com/100071607861801/posts/408131868250405/?mibextid=NTRm0r7WZyOdZZsz

Exit mobile version