Israel-US: ইরানের ভবিষ্যত কোন দিকে? ওঁত পেতেছে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র, বড় বিপদের আশঙ্কা

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

Israel-US: ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর ইরানের ভবিষ্যৎ এখন কোন দিকে? ভালো না খারাপ? চারিদিকে ছেয়ে আছে শত্রুরা। যে কোন মুহূর্তে ঘিরে ধরবে ইরানকে। এক খামেনি সবটা সামলাতে পারবেন তো? রাইসির অবর্তমানে বড় বিপদে মাঝে ফেঁসে গেল ইরান, দেশটার ভিতরেই বিদ্রোহের গন্ধ। নতুন প্রেসিডেন্ট রাইসির জায়গা আদৌ কি নিতে পারবে? মধ্যপ্রাচ্যে তিলে তিলে ইরান যে ক্ষমতা তৈরি করেছে, সেখানেই এবার বড় আশঙ্কা। ছেড়ে কথা বলবে না ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্র। নতুন চালে ফাঁসিয়ে দিতে পারে রাইসির শত্রুরা।

 

ইরানের অভ্যন্তরে ঘুন, রাইসির অবর্তমানে বিপদে দেশটা

ইরানের কাছে যে মানুষটা ছিলেন প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রতীক, বলছি ইব্রাহিম রাইসির কথা। তিনি কিন্তু আর নেই। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পর এখন ইরানকে কে সামলাবে? ইরানের ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তিত দেশটার বন্ধু প্রতিম রাষ্ট্রগুলো। কারণ গোটা বিশ্ব আন্দাজ করেছিল, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পর ইব্রাহিম রাইসি আসবেন ইরানের সর্বোচ্চ ক্ষমতায়। কিন্তু সমস্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই সবটা শেষ। ইব্রাহিম রাইসি দাঁড়িয়েছিলেন ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের ক্ষমতার চূড়ার একদম খুব কাছাকাছি। কিন্তু হঠাৎ যেন একটা নাটকীয় মোড় ওলট-পালট করে দিও সাজানো অঙ্কটা। খামেনির পর ইরানের শীর্ষ ক্ষমতায় কে আসবেন, সেই জল্পনার অবসান ঘটালো রাইসির মৃত্যু। এখন শোকে বিধ্বস্ত গোটা ইরান। কিন্তু দেশটার দায়িত্ব তো সামলাতে হবে। বহুদিন ধরেই ৮৫ বছর বয়সী খামেনির শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। এই মুহূর্তে ইরানের একজন দক্ষ এবং দায়িত্বশীল নেতা দরকার। কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, ইরানের কট্টরপন্থী প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন রাইসি।

 

যে নীতিতে অথবা ইসলামিক প্রজাতন্ত্রে ইরান চলতো, সেখানে কিন্তু একটা বড় ধাক্কা খেতে পারে দেশটা। কারণ রাইসির সময়কালে ইরানের অভ্যন্তরীণ বিরোধিতা কম ছিল না। তাকে কম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়নি। সেই বিরোধীপক্ষ কিন্তু আবার নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করবে রাইসির নীতির বিপক্ষে। একটা সোজা হিসাব দেখুন, যিনি যে নিয়মে একটা দেশ শাসন করতেন কিংবা যে নিয়মে ইরানকে বেঁধে রেখেছিলেন, সেই ব্যক্তি যদি না থাকেন, সেই বাঁধন কিন্তু একটু না একটু আলগা হবেই। একটা বৃহত্তর দেশের ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি ছাড়া আগের নিয়মে চলাটা একটু মুশকিল। যদিও ইরানের ক্ষেত্রে, সমস্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন আয়াতুল্লাহু আলি খামেনি। কিন্তু রাইসির শূন্যস্থান পূরণ করা বেশ দুষ্কর। যদিও ইরান এখন সাংবিধানিক পদ্ধতি মেনেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে। পাশাপাশি এমন একজনকে প্রেসিডেন্টের সিংহাসনে বসাবে, যিনি খামেনির প্রতি আনুগত্য দেখাবে এবং পাশাপাশি তাদের রক্ষণশীল ঐক্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। কিন্তু হয়ত ব্যাপারটা অতটা সোজা নাও হতে পারে। কারণ বিরোধীরা ওঁত পেতে রয়েছে, তারা ইব্রাহিম রাইসির শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটাতে তৎপর। তারপর সাম্প্রতিক সময়ে, ইরান চলছিল আঘাতের বদলে আঘাতের নীতিতে। যা ইরানের শত্রু সংখ্যা অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। তৈরি করেছে একটা বিপ্পজনক পরিস্থিতি।

 

এই মুহূর্তে তেহেরান রয়েছে একটা তীব্র বিপদের আশঙ্কায়। রাইসির নীতির কারণেই কিন্তু ইরানের ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হয়েছে দেশটার সাধারণ মানুষকে। পাশাপাশি অব্যবস্থাপনা আর দুর্নীতির কারণে তীব্র অর্থ কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে ইরানের বহু আমজনতাকে। যদি মুদ্রাস্ফীতির কথা বলেন, তাহলে ইরানের মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে প্রায় ৪০% এর বেশি, মান কমেছে রিয়ালের। ইরানের তরুণ প্রজন্মের অনেকেই রাইসির নিয়ম-কানুনের বিরুদ্ধে ছিল। শুধু নাই নয়, তাদের উপর আরোপ করা বিধি নিষেধের বিরুদ্ধে আন্দোলনও শুরু করে। ইরানে ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সবচেয়ে কম ভোট পড়ার নজির সৃষ্টি হয়েছিল রাইসির নির্বাচনের সময়। রাইসি নির্বাচনে জিতেছিলেন ঠিকই, কিন্তু তার পূর্বসূরী রুহানির মত অতটা জনপ্রিয়তা পাননি। রুহানি মূলত জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে কেন্দ্র করে। অথচ ডোনাল্ড ট্রাম্প সেখান থেকে পিছু উঠে যাওয়ায় সেই চুক্তি শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। আর রাইসির সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সেই আলোচনার খুব একটা অগ্রগতিও হয়নি। দেখুন, সব দেশেই কিন্তু সরকারবিরোধী একটা বিপক্ষ দল থাকে। আর ইরানের অভ্যন্তরে এই সুযোগে তারা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। সোজা কথায়, ইরানকে এখন দক্ষ হাতে সামলাতে হবে ঘর এবং বাইরের শত্রুকে।

 

যুক্তরাষ্ট্রের উস্কানি, তেতে উঠবে ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি!

যদি অন্যান্য দেশের সঙ্গে বিশেষ করে ইসরায়েল আর পশ্চিমে দুনিয়ার সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের কথা বলেন, সেখানেও রয়ে গিয়েছে একটা বড় দুর্বল পয়েন্ট। রাইসির মৃত্যুর পরেই, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের শোকবার্তায় বলা হয়, ইরান এখন বেছে নিচ্ছে নতুন প্রেসিডেন্ট। আর এই অবস্থায় ইরানের জনগণ তাদের মানবাধিকার আর মৌলিক স্বাধীনতার পক্ষে আছে। যুক্তরাষ্ট্র সেই পক্ষকেই সমর্থন করবে। যুক্তরাষ্ট্রের শোকবার্তা রেওয়াজমাফিক। এক্ষেত্রে রাইসির প্রতি কোন রকম সমর্থন প্রকাশ করছেন না মার্কিন প্রশাসন। কারণ রাইসি সেই ব্যক্তি, যিনি বিচারক থাকা কালীনগণহারে রাজবন্দীদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। কঠোরভাবে দমন করেছেন নারী গণ আন্দোলন। এমনটাই অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অর্থাৎ ইরানের অভ্যন্তরে রাইসির যে বিরোধীপক্ষ রয়েছে, তাকেই সমর্থন করে উস্কে দিচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। মোটামুটি ভাবে, ভূ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে শোরগোল ফেলা পরপর কয়েকটি ঘটনায় চর্চিত হয়ে রইল রাইসির জীবনের শেষ অধ্যায়টা। তিনি শেষ দিন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু যে পাকিস্তানের সঙ্গে চলতি বছরের প্রথম দিকে ইরানের যুদ্ধ বাধার উপক্রম হয়েছিল, শাহবাজ শরীফ সরকার গঠন করতেই সেই শত্রুতা মিটিয়ে এসেছিলেন রাইসি। এমনকি ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়েও কড়া দর কষাকষির পক্ষপাতী ছিলেন তিনি। অনেকটা চলছিলেন মেপে মেপে, ছকে বাধা অঙ্কের হিসেব করে। সেখানেই এবার গুলিয়ে গেল ইরানের সমস্ত হিসেব।

 

চারিদিকে ওঁত পেতেছে শত্রুরা, বিপদে ইরান!

রাইসির মৃত্যুতে অস্থির হয়ে উঠতে পারে ইরান। এটা কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। কারণ ইরান যে মুহূর্তে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটা কঠোর পন্থা বেছে নিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্য কে নিয়ে গিয়েছে আঞ্চলিক যুদ্ধের কিনারে, ঠিক সেই সময় রাইসির মৃত্যু ইরানকে ফেলে দিল একটা বড় ঝুঁকিতে। গত তিন বছরে ক্ষমতাকালে রাইসি ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি থেকে সামাজিক নীতি, সবকিছুকেই নিয়ে গিয়েছেন আগের থেকে বেশি কট্টর জায়গায়। গদিতে বসেই তিনি ক্রমাগত বাড়ি গিয়েছিলেন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের গতি। ইরান চুক্তি নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে আলোচনাও কমিয়ে দিয়েছিলেন। অপরদিকে ইউক্রেন যুদ্ধে সমর্থন করে গিয়েছে রাশিয়াকে। মস্কোকে দিয়েছে শাহেদ ড্রোন সহ প্রচুর গোলা বারুদ। যার জেরে পশ্চিমি দুনিয়ার কাছে রীতিমত চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিল ইরান। তারপর ইসরায়েল আর হামাসের হামলার পর থেকে রাইসি যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েলের বিভিন্ন কৌশলগত স্বার্থে বারংবার ঘা দিয়েছেন। আঞ্চলিক প্রক্সি যোদ্ধাদের দিয়ে হামলা চালিয়েছেন।

 

বুঝতে পারছেন, এই মুহূর্তে ইরানের শত্রু সংখ্যাটা ঠিক কতটা? রাইসি যেভাবে পশ্চিমাদের সম্পর্কে ইরানের গ্রহণ করা একটা নীতি ঠিক করেছে, কিংবা একটা পোক্ত কৌশল অবলম্বন করে চলছিল, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে যে কেউ রাইসির জায়গায় নিয়ে নিতে পারবে না। সামান্য ডিস ব্যালেন্স হলেই দেশটা মুহূর্তে জড়িয়ে পড়তে পারে বড়সড় যুদ্ধে। ইতিমধ্যেই দেশটাতে প্রধান ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা আগামী ২৮ শে জুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে দিয়েছে। প্রার্থীদের নিবন্ধন করা হবে ৩০ শে মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত। ইরানের সংবিধানের ১৩১ নং অনুচ্ছেদ বলছে, প্রেসিডেন্টের পদ শূন্য হওয়ার পরবর্তী ৫০ দিনের মধ্যেই নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। তাই আপাতত দেশটার নির্বাচন অনুষ্ঠান আগামী ২৯ জুনের মধ্যে করার কিছুটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই জায়গা থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে তোড়জোড়।

 

তবে যাই হয়ে যাক, নতুন প্রেসিডেন্ট এলেও ইরান ইসরায়েলের যে গভীর শত্রুতা রয়েছে, তা এখনই শেষ হওয়ার নয়। ইরান যেমন তার নীতি পরিবর্তন করবে না, তেমন ইসরায়েলও বলে দিয়েছে, তারা রয়েছে আগের অবস্থানে। শুধু তাই নয়, রাইসির অবর্তমানে ইরানের পররাষ্ট্র নীতি এবং পরমাণু কর্মসূচিতেও কোনো পরিবর্তন আসবে না বলেই মনে করছে ইসরায়েল। আপাতত নতুন প্রেসিডেন্ট এলে ভূ রাজনৈতিক সমীকরণে ইরানের প্রভাব ঠিক কতটা পড়বে, সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে ইসরায়েল সহ তার মিত্র দেশগুলো। অপরদিকে ইরানের পাশে রয়েছে রাশিয়া, চীন, তুরস্কের মতো দেশ। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে যে উত্তেজনাটা জারি ছিল, সেটাই অব্যাহত থাকবে। ক্ষমতার হাত বদল হবে মাত্র। তবে ইরান কীভাবে আগের অবস্থান ধরে রাখতে পারে, সেটাই দেখার। কারণ রাইসি যেভাবে ইরানকে সামলাচ্ছিলেন, সেই জায়গায় তার বিকল্প পাওয়া দুষ্কর ব্যাপার। আর ইরানের ক্ষমতা কমা মানে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা আরো বাড়বে বৈ কমবে না। যে কোন মুহূর্তে বেজে যেতে পারে যুদ্ধের দামামা।

 

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version