মহালয়ার দিন মনে আঘাত পেয়েছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, কেন জানেন?

।। প্রথম কলকাতা ।।

মহালয়ায় একসঙ্গে উচ্চারিত হয় তাঁর নাম। তিনি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। মহালয়ার ভোরে আমবাঙালির ঘুম ভাঙে শাঁখের ধ্বনি, আর বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চন্ডীপাঠে।আধো ঘুমে রেডিওতে কান পাতা বাঙালির এক শাশ্বত অধ্যায় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। সেই অনুষ্ঠান শুনে বাঙালির মনে আজও বেজে ওঠে আগমনীর সুর। বীরেন্দ্রকৃষ্ণের স্তোত্রপাঠের গাম্ভীর্যে মুখরিত হয়ে ওঠেন সকলেই। হাজারো লড়াই ছাপিয়ে এখানে বাঙালির কোনো বিভেদ নেই। আমরা সকলেই জানি মহালয়া হলো তিথি। অথচ আপামর বাঙালি চিরকালই রেডিওর ভোরের এই অনুষ্ঠানকেই ‘মহালয়া’ বলে থাকেন। এমনই এই বেতার অনুষ্ঠানের মাহাত্ম্য। সেই মহালয়ার ভোরে একবার মনে বড্ড আঘাত পেয়েছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। কাদের ব্যবহার ব্যথিত করেছিল তাঁকে? চলুন সেই অজানা কথা জেনে নেওয়া যাক এই প্রতিবেদনে।

মহালয়া, পিতৃপক্ষের শেষ, দেবীপক্ষের শুরু। আর এই দেবীপক্ষের আগমনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। তিনি ছিলেন আকাশবাণী কলকাতার অন্যতম প্রাণপুরুষ। ১৯৭২ সালের পর থেকে নিজেই নিজের রেকর্ড শুনতেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ। নাতি সায়ন ভদ্র সংবাদমাধ্যমের কাছে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, স্তোত্রপাঠের সময় আবেগে তাঁর গলা বুজে আসত। দাদুর চোখ দিয়ে অঝোরে জল পড়ত। শুনতে শুনতেই দাদু আবেগাচ্ছন্ন হয়ে পড়তেন। দাদু বাঙালির কাছে যে ঠিক কী, তখন অনুভব করতে পারি নি। পরবর্তীকালে বুঝতে পারি, আপামর বাঙালির কাছে দাদুর পরিচয়। এককালে ভাবতাম, আস্তে আস্তে হারিয়ে যাবে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানটি। কিন্তু তা হয় নি। যত দিন গেছে, কদর বেড়েছে মহিষাসুরমর্দিনীর।

প্রথম দিকে রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা ছিল না তখন লাইভ অনুষ্ঠান হত। শুরুটা ১৯৩২-এর ষষ্ঠীর ভোরে। অনেকেই মনে করেন, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র যেহেতু স্তোত্রপাঠ করতেন সেহেতু তিনি পুজো অর্চনা করেই দিন কাটাতেন। এটি একেবারেই ভুল ধারণা। শুধু মহালয়ার দিন রেডিওতেই চন্ডীপাঠ করতেন তিনি। চিরকাল নতুনের পক্ষে ছিলেন তিনি। ১৯৭৬ সালে অভিনেতা উত্তম কুমার ‘দুর্গা দুর্গতিহারিনী’ করায় একটুও দুঃখ পাননি তিনি। কারণ তিনি মনে করতেন, সবাইকে জায়গা দেওয়া উচিত। নতুন প্রজন্মকে সুযোগ করে দেওয়া উচিত। সায়ন বলেন, “সেবছর, মহালয়ার রাতে উত্তমকুমার হাতিবাগানের বাড়িতে দাদুর কাছে এসে ক্ষমা চেয়ে অনুমতি নিয়ে যান।দাদু এক সেকেন্ডের জন্যও দ্বিমত করেন নি। কিন্তু আঘাত পেয়েছিলেন আকাশবাণী কর্তৃপক্ষের ব্যবহারে।

নায়কের চাহিদা তখন তুঙ্গে। অল ইন্ডিয়া রেডিও কর্তৃপক্ষ ভাবলেন এতে রেডিওর জনপ্রিয়তা বাড়বে। আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে কিছুই জানান নি দাদুকে। আমরা কানাঘুষো শুনে জানতে পারি, ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ আর বাজবে না। নতুনভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ‘দুর্গা দুর্গতিহারিণী’ অনুষ্ঠান সম্প্রচারের পর বারবার ফোন আসতে থাকে ভদ্র পরিবারের কাছে। সবার প্রশ্ন ছিল, কেন অনুমতি দিলেন? বীরেন্দ্রকৃষ্ণ একটাই কথা বলেন, সবাইকে জায়গা করে দেওয়া উচিত। একটা সময়ের পর ফোনের রিসিভার পাশে নামিয়ে রাখা হয়। শ্রোতাদের দাবি মেনে পুনরায় বাজানো হয় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version