মার্কিনমুক্ত পারস্য উপসাগর? যুক্তরাষ্ট্রকে জব্দ করতে ইরান সৌদির জবরদস্ত প্ল্যান, মাস্টারমাইন্ড চীন

।। প্রথম কলকাতা ।।

পারস্য উপসাগর থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে তাড়াতে, জাঁকিয়ে বসার স্ট্র্যাটেজি সৌদি, ইরানের। ভারত কে নিয়ে বড় প্ল্যানিং ইরানের। রিস্ক বাড়ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। অশান্তির আগুন জ্বালাচ্ছে সেই তেল। পারস্য উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের ফায়ার পাওয়ারের ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারবে তো সৌদি, ইরান? চীনের হাত ধরে সদ্য জোড়া লাগা সৌদি ইরানের সম্পর্ক নিয়ে কোন ধারণা পোষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র? হালকা চালে দেখলে বড় ভুল হবে। পারস্য উপসাগর থেকে কী যুক্তরাষ্ট্রের পাততাড়ি গোটানোর সময় হয়ে এসেছে? মুনাফা লুটবে চীন। ইরান আর সৌদির হাত শক্ত করছে বেইজিং। একাট্টা হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো, কী আছে যুক্তরাষ্ট্রের কপালে। যৌথ নৌবাহিনী গঠন করতে যাচ্ছে ইরান, সৌদি আরব। সঙ্গ দিচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, কাতার, ওমান সহ মধ্যপ্রাচ্যের আরও কয়েকটি দেশ। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কী নেওয়া হয়ে গেছে? কী জানা যাচ্ছে?

সব থেকে বড় কথা ইরান, সৌদি যা ঘটাতে চলেছে তাতে নাকি পৃষ্ঠপোষকতা করছে চীন। আর, এই বাহিনী গঠনের লক্ষ্য একটাই পারস্য উপসাগরের নিরাপত্তা জোরদার করা। পুরো ব্যাপারটা থেকে একটা জীনিস পরিষ্কার। এক, ইরান আর সৌদির বন্ধুত্ব গভীর ও গাঢ় হচ্ছে দুই, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো পারস্য উপসাগরে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি আর সহ্য করতে পারছে না। তাই, ভাবতে হচ্ছে‌ যদি সত্যিই ইরান, সৌদি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, কাতার মিলে এই যৌথ নৌবাহিনী গঠন করে তাহলে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে? এই পারস্য উপসাগরীয় তীরবর্তী দেশগুলোই পৃথিবীর প্রধান জ্বালানি তেল উত্তোলক দেশ। আর পারস্য উপসাগর হলো বিশ্বজুড়ে তেল সরবরাহের মেইন রুট। কিন্তু, প্রশ্ন হলো ইরান, সৌদিদের নিজস্ব যৌথ প্রতিরক্ষা জোট যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কতটা রিস্ক ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে?

বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এখনও পর্যন্ত পারস্য উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী সবথেকে শক্তিশালী নৌশক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরব ইরান। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সময়ে পশ্চিমারা একাধিক নিষেধাজ্ঞায় ইরানকে জর্জরিত করেছে। সুযোগ বুঝে ইরানও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গলা তুলছে। ইরান স্পষ্টভাবে বলেই দিয়েছে যৌথ নৌবাহিনী গঠন হলে তারা পারস্য উপসাগরে আর কোন বিদেশী শক্তিকে সহ্য করবে না, আর কোন বিদেশি শক্তির উপস্থিতি মেনেই নেবে না। এই যৌথ প্রয়াসে ভারত, ইরাক সহ পাকিস্তানকেও সঙ্গে নিতে চাইছে ইরান। অলরেডি প্ল্যান সাজানো হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পরিস্থিতি মোটেই সুবিধার ঠেকছে না। জানিয়ে রাখি, এই রুটে ইরানের তেলবাহী জাহাজ মার্কিনিরা জব্দ করে নিষেধাজ্ঞার দোহাই দিয়ে। একইভাবে জবাব দেয় ইরান। সেক্ষেত্রে যৌথ নৌবাহিনী গঠনের বিষয়টা এখনো আলোচনার টেবিলে থাকলেও, যুক্তরাষ্ট্রের ঘুম ছুটে গেছে। কারণ বিপরীত দিকে শুধু ইরান দাঁড়িয়ে নেই সঙ্গে রয়েছে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত যাদের সঙ্গে খুব একটা ভালো সম্পর্ক নেই যুক্তরাষ্ট্রের। তবে এখানে একটা কথা বলতেই হচ্ছে পারস্য উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের একারই যে পরিমাণ সামরিক শক্তি, তার ধারে কাছেও পারস্য উপসাগরীয় তীরবর্তী দেশগুলোর সম্মিলিত শক্তি পৌঁছতে পারেনি। তবে এটাও ভাবার বিষয় যে সম্প্রতি চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব এবং ইরানের মধ্যেকার সম্পর্ক জোড়া লেগেছে। ৪০ বছরের শত্রুতা ভুলে একে অপরের কাছে আসা শুরু করেছে। দুটো দেশের মধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা বেড়েছে।

সেক্ষেত্রে যৌথ নৌবাহিনী যে গঠন হওয়ার চান্স বাড়ছে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি অনেকটাই কমে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু, পরিস্থিতি যদি এভাবেই এগোতে থাকে সেক্ষেত্রে পারস্য উপসাগরীয় তীরবর্তী দেশগুলোর যৌথ নৌ বাহিনী গঠনের পর যুক্তরাষ্ট্রের পরিণতি কী হবে? যুক্তরাষ্ট্রকে কি ওই রুট ছেড়ে নৌবহর নিয়ে চলে যেতে হবে? এটাই যেন এখন কোটি টাকার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ নয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র পারস্য উপসাগরে জ্বালানি তেল সরবরাহের রুটে মাতব্বরি চালিয়ে আসছে। যে তেলের একটা বড় অংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রেই। তাহলে কি এবার দেশটার সুখের দিন শেষ হয়ে এলো? আসলে হিসাবটা বুঝতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র এখন আর খুব বেশি তেল কেনে না। পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর এখন মূল ক্রেতা চীন। সেক্ষেত্রে চিনে তেল যাওয়ায় বাধা দিতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্র হরমুজ প্রণালী আটকে দিতেই পারে। যেটা চীনের জন্য মোটেই ভালো হবেনা। ফলে ইরান, সৌদি যৌথ নৌবাহিনী গঠন করলে আর যুক্তরাষ্ট্রকে পারস্য উপসাগর থেকে তাড়াতে পারলে সব থেকে বেশি লাভবান হবে বেইজিং। তাই নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে, আপাতত ইরান আর সৌদির হাত শক্ত করছে চীন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলো বেইজিংয়ের মধ্যস্থতা মেনে নিতে যে রাজি হয়েছে, তাতেই স্পষ্ট ওই অঞ্চলে আমেরিকার ক্ষয়িষ্ণু প্রভাবের বিপরীতে দিন দিন বাড়ছে চীনা প্রভাব। তাই, ৪০ বছরের ও বেশি সময় ধরে পারস্য উপসাগর থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের যে দাবি জানিয়ে আসছে তেহরান, দেশটা এবার তাতে সফল হলেও হতে পারে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version