Israel-United States relations: দুমুখো সাপ যুক্তরাষ্ট্র ! রাফা হামলায় ইসরায়েলকে সাপোর্ট করছে আমেরিকা ?

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

 

Israel-United States relations: অল আইজ অন রাফা, সবার চোখ এখন গাজার রাফার দিকে। গোটা বিশ্বজুড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এটা ট্রেন্ডিং হ্যাশট্যাগ। রাফায় হচ্ছেটা কী? বিগত প্রায় ৮ মাস হয়ে গেল, হামাস আর ইসরায়েলের যুদ্ধ হচ্ছে। এতদিন তো রাফা নিয়ে বিশ্ববাসী এত মাতামাতি করেনি। তবে হ্যাঁ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে শুরু করে বহু দেশ গাজার রাফায় বেসামরিক মানুষদের হয়ে কথা বলেছে। ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদ করেছে, কিন্তু এবার যেন তার মাত্রাটা ছাড়িয়ে গেল। এমনকি ভারতের সেলিব্রিটিরাও পর্যন্ত এটা নিয়ে লেখালেখি করছেন। তাহলে কি সত্যি রাফায় হামলা করে মারাত্মক ভুল করে ফেলল ইসরায়েল? গোটা বিশ্বের কাছে ভেঙে চুর চুর হয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলের ইমেজ। যুক্তরাষ্ট্র চলছে দু নৌকায় পা দিয়ে, এখনই থামছে না রাফা হামলা। ইসরায়েলের মারাত্মক প্ল্যান।

 

‘অল আইজ অন রাফা ‘ ট্রেন্ডে আদৌ কি সুরাহা মিলবে?

আসল ঘটনাটা শুনুন, সম্প্রতি গাজার রাফায় শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৪৫ জনের। আর এই হামলা যেন মেনে নিতে পারছে না গোটা বিশ্ব। সবাই যেন একজোট হয়ে কথা বলছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। এমনকি রাফার সাধারণ নাগরিকদের মৃত্যুতে রীতিমত ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই তো, গত সপ্তাতেই ইসরায়েলকে রাফায় হামলা বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক আদালত নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু কে শোনে কার কথা। ইসরায়েলের টার্গেট শুধু হামাস নির্মূল করা। রাফার সাধারণ মানুষের কি হবে, কোথায় যাবে, তাদের প্রাণ ঠিক কতটা সংকটে রয়েছে, সে সব দিকে বিন্দুমাত্র ভেবেই দেখছেন না নেতানিয়াহু। যখনই ইসরায়েলকে গাজার বেসামরিক মানুষদের কথা ভাবতে বলা হয়েছে, তখনই কিন্তু ইসরায়েল বারংবার যুক্তি দিয়েছে, সে দিকটা তারা বিবেচনা করছে। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে সেটা লক্ষ্য করা যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই, এখন ইসরায়েল পড়েছে আন্তর্জাতিক ক্ষোভের মুখে। ইসরায়েলের ভূমিকা আরো গভীর করে তুলেছে বিশ্বব্যাপী বিচ্ছিন্নতাকে।

 

সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, উল্টে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর যুক্তি, তারা নাকি হামলা চালিয়েছে হামাস জঙ্গিদের একটি ঘাঁটিতে। যেখানে নিহত হয়েছেন দুই শীর্ষস্থানীয় জঙ্গি। এই ঘটনার জন্য আবার ইসরায়েলি সেনা কৃতিত্ব দিয়েছে তাদের গোয়েন্দা সংস্থাকে। কিন্তু প্রথম থেকেই ফিলিস্তিন দাবি করে এসেছে, এই হামলা চালানো হয়েছে তাদের শরণার্থী শিবিরে। ইতিমধ্যেই গাজায় হামলার কারণে, এ পর্যন্ত গত সাত মাসের যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৩৭ হাজার বেসামরিক নাগরিক। যখন গোটা বিশ্ব নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করছে, তখন বাধ্য হয়ে ইসরায়েলের পার্লামেন্টে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি বলেন, নিরীহ নাগরিকদের ক্ষতি না করার জন্য ইসরায়েল নাকি সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করছে। কিন্তু তার সত্বেও একটা দুঃখজনক ভুল হয়েছে। এই ঘটনা তদন্ত করছে ইসরায়েল। তার পরে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নেতানিয়াহুর মুখে এই ‘দুঃখজনক ভুল’ কথাটা শোনার পর থেকেই আগুনে ঘি ঢালার মতো আরো ফুঁসে উঠেছে ইসরায়েল বিরোধী সশস্ত্র সংগঠন এবং দেশগুলো। গাজার এখন করুণ অবস্থা। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, গাজায় মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আর সেটাই স্বাভাবিক। কারণ রাফার কোন হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ নেই, নেই ভালো পরিকাঠামো। অধিকাংশ চিকিৎসক আর স্বাস্থ্যকর্মী যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। তাহলে চিকিৎসাটা করবে কে? চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর মুখে পড়ছে গুরুতর আহতরা।

 

দুমুখো যুক্তরাষ্ট্র, রাফা হামলায় ইসরায়েলকে সাপোর্ট করছে না তো?

এখানে আবার যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা বেশ বিতর্কিত। একবার প্রকাশ্যে এসে ইসরায়েলের নিন্দা করছে, আবার কখনো শক্ত করে ধরে রেখেছে ইসরায়েলের হাত। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্র বলে দিয়েছে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে ইসরায়েল যে হামলা চালাচ্ছে তা নাকি রেড লাইন ক্রস করেনি। হঠাৎ এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এটাই বলতে চাইল, যে ইসরায়েল এখনো রাফায় পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরু করেনি। এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই বলেছেন হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জন কিরবি। অথচ কিছুদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কথায়, যদি রাফায় ইসরায়েল পূর্ণমাত্রায় হামলা চালায় তাহলে কিন্তু তা রেড লাইন অতিক্রম করবে। গত কয়েক মাসে, রাফাতে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ১৫ লক্ষেরও বেশি ফিলিস্তিনি। যাদের বেশিরভাগই যুদ্ধ থেকে বাঁচতে নিজেদের বাড়িঘর ফেলে এই এলাকায় রীতিমত বাস্তুচ্যুত জীবন যাপন করছেন। তারা জানেন না, তাদের ভাগ্যে কী আছে। প্রতিমুহূর্তে তাদেরকে লড়াই করতে হচ্ছে মৃত্যুর সঙ্গে।

 

এই যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘অল আইজ অন রাফা’ পোস্টের ঝড় উঠেছে , বিশ্বব্যাপী এই আন্দোলনের জবাবে পাল্টা প্রচারণা শুরু করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েল সরকারের অফিসিয়াল পেজ থেকে একটি ছবি শেয়ার করা হয়, যেখানে রয়েছে একটি শিশুর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে বন্দুক হাতে হামাস যোদ্ধা। যার ক্যাপশনে লেখা, ইসরায়েল কখনোই ৭ ই অক্টোবরের বিষয়ে কথা বলা বন্ধ করবে না। যতক্ষণ না পর্যন্ত জিম্মিদের মুক্তি করা হবে, ততক্ষণ এই যুদ্ধ চলবে। ইসরায়েলের সোজা কথা, যখন ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে হামাস হামলা চালিয়েছিল, তখন কোথায় ছিল বিশ্ববাসীর চোখ? গোটা বিশ্ব যখন রাফার শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা করছে, তখন নেতানিয়াহুর দাবি, এই হামলা নাকি ছিল একটা মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। অর্থাৎ কোন পরিকল্পিতভাবে এমন ঘটনা ঘটানো হয়নি। তারপর থেকেই গোটা বিশ্বজুড়ে উঠেছে নিন্দার ঝড়। সাম্প্রতিক মাস গুলোতে একটু খেয়াল করলে বুঝতে পারবে, ফিলিস্তিনি সাংবাদিক থেকে শুরু করে ফিলিস্তিনের সমর্থকদের কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে সোস্যাল মিডিয়া। যখন সোশ্যাল মিডিয়া ঝুড়ে অল আইজ অন রাফার ছবিটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, ঠিক তখনই রাফা থেকে পোস্ট করা ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের বহু ভিডিও সহ ইসরায়েলি হামলার গ্রাফিক্যাল ছবি ভায়োলেন্স কিংবা সংবেদনশীল দেখিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

 

এখনই থামবে না গাজা যুদ্ধ, ইসরায়েলের আরো ভয়ঙ্কর প্ল্যান

হিসাব অনুযায়ী দেখতে দেখতে প্রায় ৮ মাস কেটে গিয়েছে। এখনো জারি হামাস ইসরায়েলের দ্বন্দ্ব। এর মাঝে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়ে দিয়েছে, কতদিন ফিলিস্তিনে এই যুদ্ধ তারা চালাবে। ইতিমধ্যেই কিন্তু রাফায় ঢুকে গিয়েছে ইসরায়েলের ট্যাঙ্ক। আশঙ্কা করা হচ্ছে, গাজায় চলতি বছর জুড়ে হামলা চালাবে ইসরায়েল। এই প্রথমবারের মতো, ইসরায়েলি ট্যাংক গুলো প্রবেশ করেছে রাফা শহরের একদম কেন্দ্রস্থলে। সোজা কথায়, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের আদেশ অমান্য করে ইসরায়েল এখন চলছে তার নিজের মর্জিতে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের বক্তব্য, ইসরায়েল যে কিভাবে রাফা থেকে উচ্ছেদ হওয়া ফিলিস্তিনিদের নিরাপদে রাখবে কিংবা তাদের খাবার জল ওষুধ সরবরাহ করবে, সেই সম্পর্কে কিছু জানায়নি। ওদিকে হামাসকেও এই আদালত ইসরায়েলি জিম্মিদের অবিলম্বে এবং নিঃশর্তে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। হামাসও কিন্তু এখনো পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো রকম সমঝোতায় আসেনি। উল্টে রাফাতে পাল্টা হামলা করতে শুরু করেছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। ইসরায়েলের দাবি, হামাস সদস্যরা নাকি লুকিয়ে রয়েছে রাফার বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে। যদিও এই দাবি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে হামাস। এমত পরিস্থিতিতে, ইসরায়েলের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাচি হানেগবি এক বিবৃতিতে জানান, ২০২৪ সাল জুড়ে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ চালাবে ইসরায়েল। বন্দী বিনিময় চুক্তি ছাড়া হামাসের ইচ্ছা অনুযায়ী ইসরায়েল কখনোই এ যুদ্ধ বন্ধ করবে না।

 

এসবের মধ্যে আবার গাজা-মিশর সীমান্তের দখল নিয়ে নিয়েছে ইসরায়েলি সেনা। সেখানকার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এখন নেতানিয়াহুর হাতে । তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ থামার বদলে আরো বেশ কিছু মাস চলবে, আর এটাই স্বাভাবিক। রাফার ভবিষ্যৎ নিয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলো প্রতিদিন গুনছে আশঙ্কার প্রহর। ইতিমধ্যেই রাফায় আক্রমণ চালিয়ে ইজরায়েলি বাহিনী গাজা মিশর বর্ডারের প্রায় ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ করিডোরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। যে করিডোর পরিচিত ফিলাডেলফি করিডোর নামে । ইসরায়েলের দাবি, এই পথেই নাকি গাজায় অস্ত্র পাচার করত হামাস জঙ্গিরা। কিন্তু অপরদিকে তৈরি হয়েছে একটা বড় সমস্যা। এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল এখন ইসরায়েলের দখলে যাওয়ায়, গাজায় ত্রাণ পৌঁছানো দিয়ে দেখা দিয়েছে বিস্তর সংশয়।

 

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version