।। প্রথম কলকাতা ।।
তিনি এক টাকার মাস্টারমশাই। এলাকার গরিব পড়ুয়াদের ভরসা জোগাচ্ছে তাঁর ষোল আনার পাঠশালা।এমন অভিনব পাঠশালা কোথায় রয়েছে জানেন? চারদিকে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় আমাদের অনেককেই ক্লান্ত করে, ব্যথিত করে। ঠিক তখন নতুন দিশা দেখাচ্ছেন এই সমাজ গড়ার কারিগর। শিক্ষাদানই যেন তাঁর ধ্যানজ্ঞান। অবসরের পরও এতো উদ্যম তিনি কোথা থেকে পান। চলুন সেই শিক্ষকের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করানো যাক।
বয়স ৬২৷ নাম সমীরণ প্রসাদ চক্রবর্তী৷ তিনি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক৷ সরকারি কর্মজীবনে ইতি পড়লেও এখনও তিনি সমানভাবেই মানুষ গড়ার কারিগর৷ পড়ুয়াদের মাত্র ১ টাকার বিনিময়ে শিক্ষা প্রদান করে আসছেন সমীরণবাবু।নিজের পাঠশালার নাম রেখেছেন ১৬ আনার পাঠশালা৷ সমীরণবাবু পূর্ব বর্ধমানের কালনা ২ নম্বর ব্লকের বাদলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর তিনি অবসর গ্রহণ করেন। সেই অবসরগ্রহণ কালের এক দগদগে স্মৃতি এখনও তাঁকে কষ্ট দেয়৷ সেই যন্ত্রণারই ফসল এই পাঠশালা। পিছন ফিরে তাকালে চোখে ভাসে শুরুর সেই দিনগুলি।
যেদিন তিনি প্রথম স্কুলে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেছিলেন, সারা স্কুল হইহই করছিল৷ ছাত্রদের কলকাকলি, হইহুল্লোড়, ভরা ক্লাসরুম৷ যেন প্রাণময় একটি জগৎ৷ কিন্তু, তাঁর অবসরের দিনটা ছিল শুনসান, খাঁ খাঁ৷ কারণ তখন করোনা কাল৷ এই নিস্তব্ধতা খুব খারাপ লেগেছিল সমীরণ বাবুর৷ কষ্টও পেয়েছিলেন। তখন স্কুল বন্ধ। ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে পড়ুয়ারা৷ ঠিকমতো শিক্ষকও নেই আশপাশে৷ প্রাণহীন সেই পরিবেশে অবসর নিতে হয়েছিল তাঁকে। ঠিক করেন, বাঁচবেন প্রাণবন্ত পরিবেশেই। সিদ্ধান্ত নেন, ফের পড়ানো শুরু করবেন৷
সেই তাগিদেই ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে পাড়ার কিছু ছেলেকে নিয়ে শুরু করেন ১৬ আনার পাঠশালা।এখন রোজ বিকেল পৌনে ৪টে থেকে শুরু করে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলে এই পাঠশালা। প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। গুরুদক্ষিণা বা বেতন হিসেবে সমীরণবাবু নেন মাত্র এক টাকা। তা-ও কিন্তু নিজের হাতে গ্রহণ করেন না। পাঠশালার মধ্যে একটা মাটির ভাঁড় রয়েছে। সেই ভাঁড়ের মধ্যে ছাত্রছাত্রীরা তাদের বেতন দেয়।
প্রথমদিকে ৫-৭ জন নিয়ে শুরু করেছিলেন। বর্তমানে সমীরণবাবুর পাঠশালায় ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৫০ এরও বেশি। অনেকেরই মোটা টাকা খরচ করে ছেলেমেয়েদের টিউশন পড়ানোর সামর্থ নেই। তাঁদের কাছে আশার আলো সমীরণবাবু। শুধু পড়ানো নয়, সব সময় সন্তানসম পড়ুয়াদের ভালো মন্দের খোঁজ রাখেন এক টাকার মাস্টারমশাই।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম