ডোকলামে গুপ্তধন, ভুটান-চীন গলায় গলায়! কোন টোটকায় রিস্ক এড়াবে ভারত ?

।। প্রথম কলকাতা ।।

ডোকলামের নীচে লুকোনো কোন গুপ্তধন? চীনের বিষদৃষ্টির আঁচে পুড়ছে ভুটানের এই দামী সম্পদ। গলায় গলায় থিম্পু-বেজিং, ভেটে যাবে ডোকলাম?ওই মালভূমির অতলেই ভারতের টেনশনের বীজ?ভুটানের কানে কোন মন্ত্র ঢালছেন শি জিনপিং?ডোকালামকে হাত করার জন্যই ভুটানের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর ছক? অসময়ের বন্ধুকে ভুলে যাবে ভুটান? কাকে পাশে চায়? চীন নাকি ভারত?ইন্টারেস্ট কোথায়? ভারত, ভুটান ও চীন—এই তিনটি দেশের সীমান্তের একটা সরু মালভূমি ডোকলামে কীসের টান? কীসের মোহ? ডোকালাম ঘিরে লাভার মতো ফুটছে ৩ দেশের সম্পর্ক।চীন নাকি ভুটানের সঙ্গে সীমান্ত বিবাদ মেটাতে চাইছে?ভারতে সায়েস্তা করার নয়া প্ল্যান নাকি এটা? দিল্লির কড়া নজর ডোকলামের দিকে। বিশ্লেষকেরা বলছেন এর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে বড়সড় ইস্যু। ভারত আসলে তাকিয়ে ডোকলামের দিকে। ভারত ও ভুটান দাবি করে, মালভূমিটি ভূটানের অংশ। কিন্তু, চীন?

এই অঞ্চল নিয়ে ১৯৬২ সালের আগে কোনো বিতর্ক ছিল না। ভুটানের বলেই মনে করত সবাই কিন্তু ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধের পর হিসাবনিকাশ পাল্টে যায়। তখন থেকেই চীন দাবি করে আসছে, ডোকলাম তাদের এলাকা। এটাই চীনের স্বভাব। সে ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে ভুটানের সম্পর্ক গভীর হলে ডোকলাম ছিনিয়ে নিতে চীনের একটুও সময় লাগবেনা। বিশ্লেষকরা বলছেন ডোকলাম মালভূমি নিরাপত্তার দিক থেকে ভারতের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে যদি চীনের আধিপত্য তৈরি হয় তাহলে বিষয়টি ভারতের শিলিগুড়ি করিডোরের জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে। কারণ, আগেও চীন কি করেছে সেটা গোটা বিশ্ব জানে। ডোকলামকে শুধু দাবি করেই তো ক্ষান্ত থাকেনি চীন। ২০১৭ সালে এই অঞ্চলে একটি রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করে। তখনই ভুটানের রাজকীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা চীনা বাহিনীকে বাধা দেয়। এর দুদিন পর ভুটানের অনুরোধে সাড়া দিয়ে ভারতীয় বাহিনী অস্ত্র ও বুলডোজার নিয়ে সেখানে হাজির হয়। ভুটানের পাশে দাঁড়ায়।

দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে ডোকলাম নিয়ে চীনের সঙ্গে ভুটান আর ভারতের এই বিবাদ চলেছিল। ৭৩ দিন। পরে বিরোধ থামলেও নীরব দ্বন্দ্ব থেকেই গেছে। ২০২১ সালে এসে সীমান্ত আলোচনা নতুন করে শুরু করে চীন ও ভুটান। সীমান্ত বিরোধ মেটাতে ২৫ বার আলোচনায় বসেছে চীন এবং ভুটান। আর ২৫তম আলোচনতেই বড় সম্ভাবনা দেখছে দুই দেশ। যা ভারতের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের কারণ।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরির জন্য ভুটান ডোকলাম চীনকে দিয়ে দিলে চীনা হস্তক্ষেপের ফলে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের যোগাযোগ সংকটে পড়ে যাবে। ‘চিকেন নেক’ নামের যে অঞ্চল রয়েছে, তার অনেক কাছাকাছি এসে পড়বে চীনা বাহিনী। চিকেন নেক ভারতের সামরিক বাহিনীর কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মাত্র ২৭ কিলোমিটার চওড়া জায়গাটি দিয়েই উত্তরপূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখা হয়। এখন ভুটান কাকে পাশে চায় সেটা কোটি টাকার প্রশ্ন। বুঝতে হবে, ভুটানের থেকে অনেক বেশি ক্ষমতাধর দুই প্রতিবেশীদের চীন এবং ভারত। তাই, আন্তর্জাতিক অঙ্গণেও কোনো কথা বলতে চাইলে অনেক হিসাব করে বলতে হয় ভুটানকে। এমনকি দেশের ভেতরে কোনো সিদ্ধান্তও নিতে হয় এই দুই দেশের কথা ভেবেই।

আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভুটানে জাতীয় নির্বাচন। এই কারণে কূটনৈতিক এই সম্পর্ক রক্ষা দেশটির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেছে নিতে হবে ভুটানকে ভারত নাকি চীন। আর বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছে, থিম্পু বেজিং এর সীমান্ত বিবাদ মিটতে হলে ভারতকে দরকার। ভারতকে বাদ দিয়ে ভুটান চীনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়াবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। ভুটানিরাই বলেছে, এটি তিন পক্ষের ব্যাপার। তাই এখনই পুরো বিষয়টাকে নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা করার জন্য ভারতের হাতে সুযোগ রয়েছে। আর ভারতের পক্ষেই ভুটানের থাকার ইঙ্গিত মিলছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাছাড়া ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পুরো বিষয়টাকে কোন স্ট্র্যাটেজিতে হ্যান্ডেল করবে সেটাও একটা ফ্যাক্টর। ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বৈদেশিক বাণিজ্যমন্ত্রী টান্ডি দোর্জিও কী এমনি বলছেন, এ নিয়ে যারা কথা বলছেন, তাঁরা আসলে না বুঝেই বলছেন। এই আলোচনায় ভারতের কোনো ক্ষতি হবে না, এতে ভারতের নিরাপত্তা আরও ভালোর দিকেই যাবে। এদিকে চীন ভূটানের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। যাতে ভূটানই মালামাল হবে, কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠবে বলেও মত বিশ্লেষকদের। এবার দেখার এই জল কোনদিকে গড়ায়।

 

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version