পুরুলিয়ার এই প্রাচীন দুর্গা ভীষণ জাগ্রত , ভারতের সব পুজোর থেকে আলাদা নিয়ম

।। প্রথম কলকাতা ।।

পুরুলিয়ার কাশীপুর রাজ পরিবারের ১৬ দিনের দুর্গাপুজো শুরু হয়ে গেল। দেবী দুর্গা এখানে চতুর্ভুজা। দুহাজার বছরের প্রাচীন পুজোতে ইতিহাস যেন কথা বলে। ভারতের কোনও দুর্গাপুজোর সাথে এই রাজ পরিবারের রীতিনীতি মিলবে না। কীভাবে এখানে মায়ের আরাধনা হয়? সেই মুহূর্তের সাক্ষী হন আপনিও। এক সময়ে জাঁকজমক ভাবে পুজো হতো। কিন্তু এখন রাজ পরিবারে আনাচে-কানাচে শুধুই হাহাকার। তবুও এই জীর্ণ বাড়িতে মা আসেন পুজো নিতে। সব দুর্গাপূজার থেকে এখানকার পুজোর নিয়ম নীতি অনেকটাই আলাদা।

মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত দেবী রাজ রাজেশ্বরী। পুরুলিয়ায় পঞ্চকোটের এই দেবীর মাহাত্মের কথা এখানে লোকের মুখে মুখে ফেরে। দেবী এখানে দশভুজা নন, অষ্টধাতুর মূর্তিতে দেবীর হাত চারটি। বছরের প্রতিটা দিন মন্দিরে দেবীর পুজো হয়ে থাকে। বংশ পরম্পরায় এখানে দেবীর আরাধনা করছেন পুরোহিতরা। এই রাজপরিবারের পুজোয় এমননিয়ম রয়েছে যা সারা ভারতে আর কোথাও মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। ইতিমধ্যেই দেবের পুজো শুরু হয়ে গিয়েছে। রবিবার থেকেই সাত দিন অর্থাৎ মহালায়া পর্যন্ত চলবে বিশেষ পূজো। এর পর সাধারণ পূজো চলবে পরের অমাবস্যা থেকে ৯ দিন ধরে। মোট ১৬ দিন বিশেষ পূজো হবে। কৃষ্ণা নবমী থেকে মোট ষোল দিন বিশেষ পুজো চলে। মহাসপ্তমী ও মহাষ্টমিতে বিশেষ স্নান পর্ব। এখানে একটি পাত্রে জল রাখা থাকে তার ভিতরে একটি ছোট্ট ছিদ্র যুক্ত পাত্র থাকে ওই ফুটো দিয়ে একবার জল ভর্তি হয়ে গেলে ওটাকে একপাট বলে। প্রাচীন নিয়ম মেনে এভাবেই অষ্টমীর সন্ধিক্ষণের নির্ঘণ্ট ঠিক হয়।

কাশীপুর রাজ বংশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় দুই হাজার বছর আগের ঘটনা। তত্‍কালীন জঙ্গলমহলের রাজা গুলেল সিংহকে পরাজিত করে চাকলা পঞ্চকোট নামে রাজত্ব স্থাপন করেছিলেন দামোদর শেখর সিং দেও। তাঁর রাজত্ব কালে অষ্টধাতু দিয়ে নির্মিত চতুর্ভূজা দেবী রাজরাজেশ্বরী দেবীর আরাধনা শুরু করেন। রামচন্দ্র অকালবোধন করেছিলেন দামোদর শেখরও শ্রী রাম চন্দ্রের ষোলো কল্প ক্ষত্রিয় রীতি মেনে পুজোর সূচনা করেন।‌ পদ্মফুলের উপর বসে থাকা রাজরাজেশ্বরী মূর্তির দুর্গা ষোলো দিন ধরে পুজো পায়। তাই ষোলো কল্পের পুজো বলে।

একটা সময় গমগম করত রাজবাড়ি। দাস-দাসী, আত্মীয়স্বজনে ভরপুর থাকত বাড়ি। সব সময় লোকের আনাগোনা লেগেই থাকত। সে সময় এখন অতীত। পুরোনো দিনের সেই কথা শুনলে এখন গল্প বলেই মনে হয়। আজ আর রাজ পরিবারের সেই জাঁকজমক, জৌলুস কিছুই নেই। কিন্তু, ঐতিহ্য আর সাবেকিয়ানা পুরোপুরি থেকে গিয়েছে। দু’হাজার বছরের সেই ঐতিহ্য। দামোদরশেখরের নামানুসারে এই বিস্তীর্ণ জঙ্গলমহলের নাম শেখরভূম বা শিখরভূম নামকরণ হয়। তাই এই দুর্গার নামও হয় শিখরবাসিনী দুর্গা। রাজপরিবারের সদস্যরা বলেন, রাজরাজেশ্বরী দেবীই হলেন কল্যানেশ্বরী দেবীর প্রতিমূর্তি। যিনি মাইথনের কাছে সবনপুরে প্রতিষ্ঠিত। মহাঅষ্টমীর সন্ধিক্ষনে এই শিখরভূমে মা দুর্গার পায়ের ছাপ দেখা যায়।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version