সৌদির পথের কাঁটা যুক্তরাষ্ট্র, এইভাবে নিচ্ছে প্রতিশোধ ? পশ্চিমাদের ভুলের মাশুল গুণবে বিশ্ব

।। প্রথম কলকাতা ।।

কেন যুক্তরাষ্ট্রকে তেল দিচ্ছে না সৌদি আরব? পারমানবিক অস্ত্র তৈরীর অনুমতি না পাওয়ার প্রতিশোধ নিচ্ছে সৌদি? দাবি আদায়ে ঘুরিয়ে কান ধরার নীতি, সৌদির সিদ্ধান্তে কতটা বিপদে যুক্তরাষ্ট্র? কোন সঙ্কটে বিশ্ব? ৩ রা জুলাই থেকে ক্রুড অয়েল উত্তোলন প্রতিদিন এক মিলিয়ন ব্যারেল কমিয়েছে সৌদি। এই তেল উত্তোলন হ্রাস অগাস্ট পর্যন্ত বাড়িয়েছে দেশটা। আর এশিয়া যেহেতু দেশটির অপরিশোধিত তেলের প্রধান ক্রেতা, তাই সৌদির এই প্ল্যানের ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে তেল সরবরাহ কমবে।

এখন প্রশ্ন হল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সৌদির বাঁকা নজর কেন? কেন সৌদি যুক্তরাষ্ট্রের সাথেই এমনটা করছে? বড় প্রশ্ন।‌ শোনা যাচ্ছে, সৌদি শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একরকম অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু, দেশটি সৌদি আরবকে এমন অনুমতি দিতে চাইছে না। মার্কিন মিত্র ইসরাইলও সৌদি আরবের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কাজ করার ইচ্ছার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। পারমানবিক কর্মসূচি শুরুর অনুমতি না দিয়ে, উল্টে ইসরাইলের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে যুক্তরাষ্ট্র এখন চাপ দিচ্ছে সৌদি আরবকে। তাহলে, এই দরকষাকষি, আর অন্যায় আব্দারই কি কোনও অচল অবস্থা তৈরি করছে?

দেখুন, গোটা বিশ্ব খালি চোখে দেখে এসছে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি ঘটনায় মার্কিন তেলের বাজারকে ছোট করে আনার চেষ্টা করেছে সৌদি আরব। সেক্ষেত্রে তারই অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ হতেই পারে। অথচ, চীন এবং ভারতের বেলায় সৌদি আরব কিন্তু এমন কিছু করেনি তবে, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে যেন একটু বেশিই কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে। ওপেক প্লাস, অর্থাৎ বিশ্বের খনিজ তেল রপ্তানিকারক দেশসমূহ এবং তাদের মিত্রদের সংগঠন, ২০২২ সালের অক্টোবর থেকেই দৈনিক দুই মিলিয়ন ব্যারেল তেলের উৎপাদন কমিয়েছে, যা বিশ্ব ব্যাপী তেলের মোট চাহিদার প্রায় দুই শতাংশ! ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত তেল উত্তোলন, আগেকার সীমাতে রাখার সিদ্ধান্ত ও নেওয়া হয়েছে।

তেল রপ্তানিকারক দেশসমূহের জোটের নেতৃত্বে থাকা এবং বৃহত্তম রপ্তানিকারক হিসাবে, সৌদি আরব স্বেচ্ছায় আগস্ট মাস থেকে ক্রুড অয়েলের উত্তোলন প্রতিদিন এক মিলিয়ন ব্যারেল কমিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করেছে। আর, ওই ঘোষণার পরপরই রাশিয়াও বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে তারাও প্রতিদিনের জ্বালানি তেলের উত্তোলন ৫ লক্ষ ব্যারেল কমাবে। ২০১১ সালের পর সৌদি আরব তার তেল উত্তোলন এবার এতোটা কমিয়ে আনলো। এর আগে অবশ্য ২০২০ সালে কোভিড মহামারীর পর এই সীমা নামিয়ে আনা হয়েছিল। আর ২০১৯ সালে আরামকোর স্থাপনায় হামলার সময় এমন করেছিল দেশটি।
সৌদি আরব তেল উত্তোলন কমানোর ঘোষণা দিলেও, এশিয়ার বাজারে তেল সরবরাহকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সৌদি আরব। কিন্তু আরামকো যুক্তরাষ্ট্রে তেলের চালান কমাতে পারে। এতে তেলের বাজার ছোট হতে বাধ্য।

আর তাতেই তো বিপদ। সৌদি আরবের এই পদক্ষেপ সামনের মাসগুলোয় জ্বালানি চাহিদার অনিশ্চিত পরিস্থিতির শঙ্কা তৈরি করেছে। বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে মন্দার আশঙ্কা অপরিশোধিত তেলের দামের উপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী আবারো অস্থির হয়ে উঠবে তেলের বাজার যার কারণে জ্বালাধি নির্ভর অর্থনীতির দেশগুলো রিস্কে পড়তে পারে। চান্স রয়েছে। জানিয়ে রাখি, ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পর সৌদি আরব ও মিত্র দেশগুলোকে তেলের উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে বাইডেনের আহবানে পাতা দেয়নি সৌদি। বরং রাশিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে তেলের উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব সহ ওপেক প্লাস ভুক্ত দেশগুলো।এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমার পাশাপাশি রাশিয়ার দাপট বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version