বর্ধমানে মা পটেশ্বরী দুর্গাপুজোর রাজ-ঐতিহ্য আজও অম্লান।

।। প্রথম কলকাতা ।।

না কোনও মূর্তি নয়, পুজিত হয় পট। তাই নাম ‘পটেশ্বরী দুর্গা’। বর্ধমানের মা পটেশ্বরী দুর্গাপুজোর রাজ-ঐতিহ্য আজও অম্লান। বর্ধমান রাজবাড়ীর এই পুজোয় পরতে পরতে জড়িয়ে আছে নানান ইতিহাস আর ঐতিহ্য। পটেশ্বরীর পুজো হয় একদম অন্যভাবে। এই পুজোর পেছনে রয়েছে রাজবাড়ীর ইতিহাস। রাজা নেই, নেই রাজত্বও। তবু রাজ পরিবারের ঐতিহ্য আছে। আছে রাজ-ঐতিহ্যের শেষ চিহ্ন, ভগ্নদশাপ্রাপ্ত এক মন্দির। রাজ পরিবারের মন্দিরের মূল ফটকও ভেঙে পড়ছে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজ পরিবারের পটেশ্বরী দুর্গাপুজোর জৌলুসও কমেছে। তবে কমেনি রীতি-আচারের রাজ-ঐতিহ্য।

বর্ধমান মহারাজের আমলে ধুমধাম করে পটেশ্বরী দুর্গাপুজো হত বর্ধমান রাজবাড়িতে। এখন তা কিছুটা হলেও মলিন হয়েছে। কমেছে জৌলুস। আগে বহু মানুষের আগমন হত বর্ধমান মহারাজের তৈরি লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ ঠাকুর বাড়িতে। দামোদর নদীর ওপার থেকেও অনেক মানুষজন পায়ে হেঁটে, গরুর গাড়িতে করে আসতেন এই মন্দিরে পুজো দেখতে। জাঁকজমকপূর্ণ ভাবেই হত পুজো। প্রায় ৩৫০ বছর আগে বর্ধমানের রাজা মহাতাব চাঁদ এই পুজো শুরু করেছিলেন৷ রাজবাড়িতে আগে দুর্গাপুজোর চল ছিল না৷ রাজবাড়ির কুলদেবতা দেবী চণ্ডীকা৷ শোনা যায়, রাজা মহাতাব চাঁদের ইচ্ছে হয়েছিল দুর্গাপুজো করার৷ তিনি সেকথা কুল পুরোহিতকে জানিয়েছিলেন৷ যেহেতু, রাজবাড়িতে নারায়ণ শিলা প্রতিষ্ঠিত আছে, তাই রাজ পুরোহিত নিদান দিয়েছিলেন দুর্গাপুজো করা যেতে পারে৷ কিন্তু, মূর্তি পুজো করা যাবে না৷ তাই পটচিত্রে আঁকা দুর্গার পুজো শুরু করেন রাজা মহাতাব চাঁদ৷ সেই সময় থেকেই বর্ধমান রাজবাড়িতে শুরু হয় ‘পটেশ্বরী দুর্গা’র আরাধনা৷

দেবী দুর্গা এখানে শালকাঠের কাঠামোর উপর প্রতিষ্ঠিত। কাঠের কাঠামোর উপর নানা রং দিয়ে নিপুণ তুলির টানে তৈরি দশভুজার পরিবার। তবে পটে নেই গণেশের উপস্থিতি। রয়েছেন লক্ষ্মী, সরস্বতী ও কার্তিক। সিংহ নয়, এখানে দেবীর বাহন ঘোড়া। মহিষাসুরের পুঙ্খানুপুঙ্খ অভিব্যক্তি আরও বেশি জীবন্ত করে তুলেছে দেবীর অসুর বধের কাহিনী। পটের চারিদিকে রয়েছে শিবপাবর্তীর লোকগাঁথা। সেই একই নকশায় আজও পূজিত হচ্ছে পটেশ্বরী দুর্গা। ১২ বছর অন্তর পটকে নতুন করে আঁকা হয়। প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের প্রাচীন এই পটেশ্বরী দুর্গা পুজো শুরু হয় প্রতিপদ থেকে, চলে নবমী তিথি পর্যন্ত ৷

অষ্ঠমীর দিনে সেখানে নবকুমারী পুজোর আয়োজন করা হয়। তাছাড়া কয়েক বছর ধরে নবমীর রাতে এই মন্দিরের স্থানীয় গুজরাতি সম্প্রদায়ের মানুষ ডান্ডিয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। রাজ অট্টালিকার ছত্রে ছত্রে মলিন দশা। ভগ্নপ্রায় নাট মন্দির, তবুও নিষ্ঠার সঙ্গে পূজিত হন দেবী। জৌলুস হারালেও এই পুজো ঘিরে মানুষের উন্মাদনায় ভাটা পড়েনি এক ফোঁটাও। দেবী আরাধনার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে বর্ধমান রাজবাড়ির লক্ষ্মীনারায়ণ জিউর ঠাকুরদালানে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version