।। প্রথম কলকাতা ।।
দশর্ভুজা নয়, দেবী এখানে চতুর্ভুজা। দেবীর রূপ একেবারেই অন্যরকম। দরিদ্র ব্রাহ্মণের হাত ধরেই সদর বাড়িতে শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজো, ভোগ দেওয়া হত রুটি ও গুড়ের পায়েস। পূজোর সাথে যুক্ত প্রত্যেকেই বংশপরম্পরায় একই রকম কাজ করে চলেছে ৪০০ বছর ধরে। পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার কেতুগ্রাম দুই নম্বর ব্লকের অন্তর্গত নিরোল গ্ৰামের সদর বাড়ির দুর্গাপুজো প্রায় ৪০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন। মা দুর্গা এখানে চতুর্ভুজা মৃন্ময়ী রূপে পূজিত হন প্রতি বছর।
সপ্তমীর সকালে চার ব্রাহ্মণ বালকের কাঁধে করে দোলায় চাপিয়ে নবপত্রিকা স্নানে নিয়ে যাওয়া হয় ঢোল ও সানাই বাজিয়ে। কথিত আছে ৪০০ বছর পূর্বর সেই গ্রামেরই একটি পুকুর খননের সময় সাত পুতুলের একটি চতুর্ভুজা শিলামূর্তি উঠে আসে। তারপর সেই রাত্রে মা দুর্গার স্বপ্নাদেশ পেয়ে দরিদ্র ব্রাহ্মণ গোরাচাঁদ ঘোষাল ওই চতুর্ভুজা শিলামূর্তিটিকে মা দুর্গা রূপে পুজো করতে শুরু করেন। পরবর্তী কালে কোনও এক অজানা কারণে সেই চতুর্ভুজা শিলামূর্তিটি ভেঙে গেলে সেই মূর্তি বিসর্জন দেওয়া হয়।তারপর সেই সাত পুতুলের চতুর্ভুজা শিলামূর্তিটির আদলেই মাটির মূর্তি গড়ে প্রতি বছর মা দুর্গার পুজো হতে থাকে এখানে।
গ্রামের গরিব ব্রাহ্মণ গোরাচাঁদ ঘোষালের তখন সেইরকম ভাবে আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় সেই সময় তিনি মা দুর্গাকে হাতে গড়া রুটি এবং গুড়ের পায়েস দিয়ে ভোগ দিতেন। তাই তখন ভোগরাগের সেরকম বাহুল্য ছিল না। তবে বর্তমানে এখন বিভিন্ন ফলমূল, মিষ্টি, লুচি, পায়েস, হাতে গড়া রকমারি নাড়ু সহ প্রভৃতি হরেক রকমের পদের সহযোগে মাকে ভোগ নিবেদন করা হয় পূজার সময়। সদর বাড়ির মা দুর্গা শাক্ত মতে পূজিতা হন এখানে। তাই এখানে বলিদান প্রথাও রয়েছে। দুর্গার পূজার সপ্তমী ও নবমীতে আখ ও চালকুমড়ো বলি দেওয়া হলেও। মহাষ্টমী তে ছাগ বলির রীতি রয়েছে।
সদর বাড়ির পুজোয় অন্যতম বিশেষত্ব হলো, এই পূজার সাথে যুক্ত পুরোহিত, মৃৎশিল্পী, পুস্প সরবরাহকারী নাপিত, বলিদান করার কামার এবং ঢোল ও সানাই বাদক সহ সকলেই এই দুর্গাপূজার সাথে বছরের পর বছর ধরে বংশ পরম্পরায় যুক্ত রয়েছেন এখনো পর্যন্ত। এখনও প্রতিবছরই খুব জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে, নিষ্ঠার সাথে পূজিত হন দেবীর চতুর্ভূজা রূপ। পূজোর সাথে যুক্ত সকলেই মেতে ওঠেন মহাসমারোহে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম