।। প্রথম কলকাতা ।।
বাবা সামান্য রাজমিস্ত্রি ছেলে ইউপিএসসি -তে গোটা দেশে দ্বিতীয়। ভাঙা বাড়িতে বৃষ্টির জল পড়ে দুবেলা। খাবার জোগাতে হিমশিম খেতে হত। মা-বাবার কষ্ট মুখ বুজে সহ্য করতে পারেনি বাংলার এই ছেলে। নিজের কাছে শপথ নিয়েছিলেন ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। আজ বাংলার সেই ছেলে দেশের গর্ব। অভাবী ঘর থেকে উঠে আসা থেকে ইউপিএসসি-তে দ্বিতীয় হওয়ার লড়াই জানলে চোখে জল আসবে। বাবা রাজমিস্ত্রি হলে কী হবে। নিজেদের বাড়ি ভাঙাচোড়া। আসলে বাড়ি সারানোর জন্য যে রোজগার প্রয়োজন তাই নেই।
বাবার মার কষ্ট দিনের পর দিন দেখেছেন আলিপুরদুয়ারের বাপ্পা সাহা। বরাবরই মেধাবী ছাত্র। আসলে বাপ্পার জেদ চেপে গিয়েছিল এমন কিছু করতে হবে যাতে পরিবারের এই অভাব চিরদিনের মতো ঘুচে যায়। যাতে বাবা-মাকে ভালো রাখা যায়। তাই করে দেখিয়েছেন আলিপুরদুয়ারের বাপ্পা। একটা সময় ছিল টিউশন ফি দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। সংসারে অভাব নিত্যসঙ্গী। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। সেকেন্ড হ্যান্ড একটা পুরনো সাইকেল ছিল সম্বল। তা দিয়েই কয়েক কিলোমিটার দূরের স্কুলে যেত বাপ্পা। অনেক দিন গিয়েছে শুধু ডাল-ভাত খেয়ে পায়ে হেঁটে স্কুলে গিয়েছে সে। টিফিনের টাকাও জোগাড় হয়নি তা-ও মন দিয়ে পড়াশোনা করেছে। সেখান থেকে আজ তিনি দেশের গর্ব।
বাবা সামান্য রাজমিস্ত্রির কাজ করায় ছোটবেলা থেকে খুব বেশি বইপত্র হয়তো কিনে দিতে পারেননি। তবে শিক্ষকেরা খুব সাহায্য করেছেন। অনেকেই বিনা পয়সায় টিউশন পড়িয়েছেন। বই-পত্রও কিনে দিয়েছেন। ছোটবেলায় আলিপুরদুয়ার শহরের দুর্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন বাপ্পা। পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন গোবিন্দ হাই স্কুলে। সেখান থেকেই ৯১শতাংশ নম্বর পান মাধ্যমিকে। এরপর উচ্চমাধ্যমিক। ৯৪.৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন। দুর্দান্ত রেজাল্ট! কলেজে সুযোগ পেতে অসুবিধা হয়নি। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে ভর্তি হন। তাতে গোল্ড মেডেল পান বাপ্পা। এগ্রিকালচারে বিএসসি করার সময় স্কলারশিপ পান বাপ্পা। তা দিয়ে এমএসসি-র পাশাপাশি আইএসএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন।
এরপর ইউপিএসসি পরীক্ষায় ২০২২ সালে সর্বভারতীয় স্তরে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন বাপ্পা সাহা। মাত্র ২৩ বছর বয়সে প্রথমবার পরীক্ষায় বসেই এই সাফল্য এখন তিনি আইএএস অফিসার। আগে বাড়িতে বিদুৎও ছিল না। কয়েক বছর হল, বাড়িতে বিদুৎ এসেছে, ঘরটিও কোনরকমে পাকা বানিয়েছেন বাপ্পার বাবা। চরম দারিদ্র্যতার মধ্যেও বাপ্পা নিজের চেষ্টায় পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে। একমাত্র মেধা আর জেদের জন্যই ওর এই সাফল্য। এলাকার দরিদ্র শিশুদের জন্য তিনি কাজ করতে চান বাপ্পা। বাংলা মাধ্যমে পড়েও মেধা দিয়ে সর্বভারতীয় স্তরে সাফল্য অর্জন করা যায় তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন বাপ্পা। তাই তিনিও অভাবে পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়ে পথ দেখাতে চান।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম