।। প্রথম কলকাতা ।।
The Clockman: ‘সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়’ এটি যোগীন্দ্রনাথ সরকারের একটি কবিতার লাইন। সময়কে সত্যিই ধরে বেঁধে রাখা মানুষের কর্ম নয়। সময় কারও জন্য থেমে থাকে না। কিন্তু শহর কলকাতার বুকে এমন একজনের অস্তিত্ব এখনও রয়েছে যে মহানগরের সময়কে বছরের পর বছর ধরে রক্ষা করে চলেছেন। তাঁর হাতে রয়েছে গুরু দায়িত্ব। কারণ শহর জুড়ে যত ক্লক টাওয়ার রয়েছে তার সব কটা ঘড়ির রক্ষণাবেক্ষণ করা তো তাঁরই কাজ। তাই আজ সময়ের রক্ষক বরং বলা ভালো তিনি তিলোত্তমার সময়ের রক্ষক। তিনি ‘ঘড়ি বাবু’।
আজকের প্রতিবেদনে রইল কলেজ স্ট্রিটের স্বপন দত্তের কথা। তিনি দায়িত্ব নিয়ে এখনও পর্যন্ত শহর কলকাতার আনাচে-কানাচে থাকা ক্লক টাওয়ারের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে থাকেন। শহরের বিভিন্ন জায়গায় মাথা উঁচু করে যে গম্বুজ গুলি দাঁড়িয়ে রয়েছে তাঁর গায়েই লাগানো রয়েছে এই ঘড়ি গুলি। তাঁরা তো ইতিহাসের সাক্ষী । তাদেরকে কোনোভাবেই থেমে যেতে দেওয়া যাবে না। তাঁরাই তো শহর কলকাতার অগ্রগতির সাক্ষী। তাই সেই ক্লক টাওয়ারের ঘড়ি গুলি ঠিক করার দায়িত্ব এখন স্বপন বাবুর। যদিও এই দায়িত্ব তাঁর শখের মধ্যেই পড়ে। বংশানুক্রমে সখটি পেয়েছিলেন। আর বংশ-পরম্পরায় পালন করে যাচ্ছেন দায়িত্ব।
গির্জার ঘড়ির, ডাক ঘরের ঘড়ি, মানিকতলা বাজারের ঘড়ি, এইসব কটাকে তিনি একেবারে নিয়ম করে দম দিয়ে আসেন। সে কাজে কিন্তু কখনও ভুল হয় না। হবেই বা কী করে ? প্রায় ৫০ বছর হতে চলল এই ঘড়ির সঙ্গেই তো বন্ধুত্ব তাঁর। বাবা পতিতপাবন দত্ত নিজেও ছিলেন একজন ঘড়ি বিশেষজ্ঞ। স্বপন বাবুর বাবা দাদু সকলেই ঘড়ির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । সেই থেকেই ঘড়ি নিয়ে কাটাছেঁড়া করার অভ্যাস তাঁর । কলকাতার কত অর্ধমৃত ঘড়ি তাঁর হাতে জীবন ফিরে পেয়েছে তা গুনতে বসলে হাতের কর শেষ হয়ে যাবে। হয়তো হিসেবে আপনি গুলিয়েও ফেলতে পারেন।
বর্তমানে নিউমার্কেটের দুরন্ত ওয়েস্ট মিনিস্টার ক্লক, মানিকতলা বাজারে জার্মান ক্লাব, ধর্মতলা চার্জের ডিং ডং কোয়ার্টার টাইমিং ক্লক, জোড়া গির্জা, জিপিওর ঘড়ি সহ আরও বহু ঘড়ি দেখে শুনে রাখার কাজটা নিজেই করেন স্বপনবাবু। তিনি জানান, একসময় তাঁর বাবা ঠাকুরদার আমলে বিভিন্ন বিলিতি কোম্পানির ঘড়ি সারাইয়ের কাজ করতেন তাঁরা। কুক অ্যান্ড কেলভি, হামিল্টন প্রভৃতি কম্পানির চিফ টেকনিশিয়ান পদে ছিলেন তাঁরই পরিবারের কেউ না কেউ। তাঁর সংগ্রহে রয়েছে বহু অ্যান্টিক ঘড়ি।
শুধুমাত্র শহরের মধ্যে নয় শহরের বাইরেও বহু ঘড়ি নিজের তত্ত্বাবধানে রেখেছেন তিনি। ইংরেজ শাসন কিংবা তাঁর আগে থেকে যে সমস্ত ঘড়ি গুলি শহর কলকাতায় নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রেখেছে সেই ঘড়ি গুলিকে আরও বেশ কিছু বছর সচল রাখার চেষ্টাই করে চলেছেন স্বপন বাবু। ঘড়ি তৈরি করা থেকে ঘড়ি দেখভাল করা সবকিছুতেই তিনি পটু। তাই তাঁর হাতে যে কলকাতার সময় একেবারে সুরক্ষিত তা বলাই বাহুল্য।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম