পুতিনের শেষের শুরু ? পথের কাঁটা খতম, ভয়ঙ্কর পরিণতির পথে রাশিয়া

।। প্রথম কলকাতা ।।

পুতিনের ‘পথের কাঁটা’ প্রিগোজিনের মৃত্যু কি নিছক দুর্ঘটনা? প্রশ্নের মাঝেই উত্তর। প্রিগোজিন ‘হত্যা’ ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিনকে কতটা এগিয়ে রাখবে? নাকি পরাজয় শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। চালে বড় ভুল হয়ে গেছে?ভয়ঙ্কর মেসেজ লুকিয়ে আছে পুরো ঘটনায়। কয়েক হাজার যুদ্ধবাজ ওয়াগনার সেনা পুতিনের জন্য কতটা রিস্কের? চারিদিকে ঢিঢি পড়ে গেছে। প্রিগোজিন মৃত্যু কি পুতিনের শেষের শুরুর ইঙ্গিত? নীরবতা ভাঙলেন পুতিন, জেনেটিক টেস্টিং এর পর কী বললো রাশিয়া? পুতিন আগেই বলেছিলেন বিশ্বাসঘাতক কে তিনি ক্ষমা করেন না। পুতিনের বিরুদ্ধে হঠকারী ও ক্ষণস্থায়ী বিদ্রোহের দুমাসের মাথায় বিমান দুর্ঘটনায় প্রিগোজিনের মৃত্যু – আজীবনকালের জন্য রহস্যই রয়ে গেল। সঙ্গে বেশ কতগুলো প্রশ্ন তুলে দিল।

 

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করাই কি কাল হলো? সেই কারণেই কী প্রাণ খোয়াতে হল ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিনকে? গোটা বিশ্ব বলছে, বিদ্রোহী কমান্ডারকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা খুবই সুপরিকল্পিত বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু তাতে কী পুতিনের আদৌ কিছু এসে যাচ্ছে? রাশিয়া এখনও কতটা পাওয়ারফুল, পুরো ঘটনার মধ্য দিয়ে সেই মেসেজটা গোটা বিশ্বকে দিতে চেয়েছেন পুতিন কিন্তু প্রিগোজিনের মৃত্যু, কোন দিকে ঠেলে দিতে পারে গোটা ইউক্রেন যুদ্ধকে? সেটা নিয়ে কী ভেবেছে মস্কো? অথচ, এটাতেই এখন রাশিয়ার ফোকাশ করা উচিৎ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। বুঝতে হবে ওয়াগনার গ্রুপকে এখন কারা নেতৃত্ব দেবে? যুদ্ধের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কয়েক হাজার ওয়াগনার সেনা, আদর্শের চেয়ে টাকার প্রতিই যাঁদের আনুগত্য বেশি, তাঁদের কিন্তু এখন যে কেউ যেকোনো কাজে ব্যবহার করতে পারবে। যারা তাঁদের সর্বোচ্চ টাকা দেবে, তারাই শেষ পর্যন্ত তাঁদের কমান্ডার হবে। তাই, এদের নিয়ে পুতিনের রিস্ক আছে। যদিও ক্রেমলিন এখন চেষ্টা করবে যত বেশিসংখ্যক ওয়াগনার সেনাকে নিজেদের বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত করে নিতে। তবে তাতেও ওয়াগনার সেনারা যে রাশিয়ার বাহিনীর ওপর অনুগত থাকবেন, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না।

ওয়াগনার বস প্রিগোজিনের মৃত্যু পুতিনের যুদ্ধপ্রচেষ্টাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সেনাবাহিনীর একটি অংশ পুতিনের বিরুদ্ধে চলে যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্তরে প্রিগোশিন অনেক বড় সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি করে গেছেন। নির্ভীকতা ও সত্যি কথা বলার সাহসিকতার জন্য অনেকেই তাঁকে শ্রদ্ধা করেন। তিনি সব সময়ই রাশিয়ান জেনারেলদের দুর্নীতি ও তাঁদের গোঁড়ামিপূর্ণ কমান্ড কাঠামোর সমালোচনা করতেন। প্রিগোজিন মনে করতেন জেনারেলদের দুর্নীতি আর গোঁড়া মানসিকতার কারণেই ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া সাফল্য পাচ্ছে না। তাছাড়া, দৃশ্যপট থেকে প্রিগোজিনের সরে যাওয়া রাশিয়ার জনমতকেও পুতিনের বিরুদ্ধে নিয়ে যেতে পারে। পুতিন সব সময়ই তাঁর কথা দিয়ে জনসাধারণকে মোহিত করে রাখতেন। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে জয় তো নিয়ে এসেছিলেন প্রিগোজিন। ভাড়াটে বাহিনীর ক্যারিশম্যাটিক নেতা প্রিগোজিনের মৃত্যুর পর রুশ সমাজে ইউক্রেন আগ্রাসনের অগ্রগতি কী হলো তা নিয়েও চূড়ান্ত অসন্তোষ দেখা দিতে পারে।

পুতিনের বলিষ্ঠ ক্ষমতার মুঠি আলগা হয়ে যেতে পারে। পুতিন বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ভিন্নমত বরদাশত করা হবে না। ইউক্রেন যুদ্ধ তিনি যেভাবে পরিচালনা করুন না কেন, তাতে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না প্রিগোজিন নেই। সত্যি বলার লোক আর নেই। তাই ইমিডিয়েটলি রাশিয়ার বিপর্যস্ত সেনাবাহিনীকে পুনর্গঠন করা প্রয়োজন কারণ, সত্যিকারের চৌকস কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে নিছক ব্যক্তিগত আনুগত্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ জেনারেলের পদে বসানো হলে নিঃসন্দেহে একের পর যুদ্ধে রাশিয়ান বাহিনীকে হেরে যেতে হবে। হতাহত সেনাদের জায়গায় নতুন নিয়োগ দিতে হবে। আর মৃত্যুপুরী হয়ে ওঠা ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রই হবে তাদের জীবনের শেষ ঠিকানা।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে এরকম চলতে থাকলে ইউক্রেনে দীর্ঘদিন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা রাশিয়ার সেনাবাহিনীর থাকবে না। খুব ভুল না হলে, রহস্যময় বিমান দুর্ঘটনায় ভাগনার গ্রুপের প্রধান প্রিগোজিনের মৃত্যুর ঘটনা একদিন পুতিনের ইউক্রেন আগ্রাসনের ট্র্যাজিক পরিণতির শীর্ষ মুহূর্ত হয়ে উঠে আসবে তবে, রুশ সরকার ও প্রশাসনের মদতেই এই বিমান দুর্ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক মহলে অভিযোগ উঠলেও এই দাবি নস্যাৎ করেছে ক্রেমলিন। সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্রিগোজিনের মৃত্যু নিয়ে নীরবতা ভেঙে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভাড়াটে সেনা প্রধানের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version