।। প্রথম কলকাতা ।।
Russia China: রাশিয়াকে বিপদে ফেলতে চাইছে চীন? সত্যিই কী নিখাদ বন্ধুত্বে জড়াচ্ছে দুই দেশ? বেইজিং এর ট্র্যাপে পড়ে যাচ্ছেন না তো পুতিন? আগুন নিয়ে খেলছে রাশিয়া। দু দেশের সম্পর্কে শো অফ বাড়ছে। চীন রাশিয়া যেন একাত্মা, এক প্রাণ। বাঁধ ভাঙা গতিতে বেড়ে যাচ্ছে ইউরেশিয়ায় রাশিয়া চীনের সাম্রাজ্য। জ্বালানি আর স্বার্থই জুড়ে রেখেছে বেজিং মস্কোকে? ৫০ সালেই গোল সেট শি এর, ঠ্যালা সামলাবে রাশিয়া। চীন রাশিয়া, পরস্পরের সঙ্গে গড়ে তুলছে গভীর, গাঢ় বন্ধুত্ব। দেশ দুটোর মধ্যে ১৬৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়ে গেছে। জ্বালানি তেলের পাইপলাইন আর বাণিজ্যিক করিডোরের মতো ৮০টি দ্বিপাক্ষিক প্রকল্পের পরিকল্পনা চুক্তির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে।
২০২৪ সাল নাগাদ দুই দেশের মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্য ২০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ঠিক হয়ে গেছে, রাশিয়ার ৭ মিলিয়ন টন শস্য প্রতিবছর চীনে যাবে। মার্কিন আর অস্ট্রেলিয়ান শস্যের উপর চীন নির্ভরতা কমাবে। এদিকে রাশিয়ায় মোটর ভ্যান রপ্তানি করবে চীন। এয়ারক্রাফ্ট থেকে সায়েন্স প্রজেক্ট, একসাথে কাজ করবে দুই দেশ। তবে, চীন রাশিয়া সম্পর্কের মূল মেরুদণ্ড যে জ্বালানি নীতি, সেটা একপ্রকার স্পষ্ট। এই মুহূর্তে রাশিয়ার গ্যাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম তৈরি করেছে পাওয়ার অফ সাইবেরিয়া পাইপলাইন যা দিয়ে রাশিয়ার গ্যাস বেইজিং হয়ে সাংহাই যাচ্ছে। ঠিক হয়ে আছে আগামী বছরগুলোতে কি হবে। ২৪ সালে ইয়ামান পেনিনসুলা থেকে মঙ্গোলিয়া হয়ে চীনে গ্যাস পৌঁছে দিতে পাওয়ার অফ সাইবেরিয়া টু পাইপলাইন নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ৩০ সালে চীনের রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ পরিমাণ দাঁড়াবে ৯৮ বিলিয়ন ঘনমিটার, সঙ্গে থাকবে ১০০ মিলিয়ন টন এলএনজি। ডিডলারাইজেশন নিয়ে অনেক দিনের পরিকল্পনা রাশিয়া চীনের। মনে করা হচ্ছে খুব শীঘ্রই রুবেল ইউয়ান বাণিজ্য, ডলারের কপালে শনি ডেকে আনবে।
এর মধ্যে আরও একটা বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রুশ প্রভাব বলয়ের দেশ বলে পরিচিত মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতেও চীনা রপ্তানি বাড়ছে। খনি, জ্বালানি আর রেল যোগাযোগে বিনিয়োগ হচ্ছে। সেন্ট্রাল এশিয়ার পাঁচটি দেশের প্রেসিডেন্টের কাছে একটি আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনা পেশ করেছে চীনের প্রেসিডেন্ট। এখান দিয়েও কাস্পিয়ান সাগর পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন তৈরি করতে চায় চীন! কাজাকস্থান, তুর্কমেনিস্থানের সঙ্গেও চীন বাণিজ্য একশ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। সবটাই হচ্ছে রাশিয়ার সম্মতিতে। রাশিয়াকে ধরে চললে চীনের যে বিরাট লাভ সেটা সি চিনপিং সরকার বুঝে গেছে। তাই, ২০৫০ এর টার্গেট ও সেট করে ফেলেছে বেইজিং। উত্তর মেরুতে ভাগ বসাতে চাইছে চীন। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর ফলে ২০৫০ সালে উত্তর মেরুতে আর বরফ থাকবে না! সেখানকার মূল্যবান খনিজ সম্পদ তুলে আনা তখন আরো সহজ হবে। তবে, এতে বড় বাধা যুক্তরাষ্ট্র! এই পরিস্থিতিতে সেখানে আধিপত্য বিস্তার করতে চীনের প্রয়োজন রাশিয়াকে! এখানেও তারা পাশাপাশি বন্ধুর মতো।
কিন্তু আদতেই কি নিখাদ বন্ধুত্ব রয়েছে দু’দেশের মধ্যে? বড় প্রশ্ন। তবে, দুদেশের মধ্যে যে সমীকরণ তৈরি হচ্ছে তাতে যে ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে ইউরেশিয়ার ভূরাজনীতি সেটা বুঝতে বাকি নেই। এশিয়া এবং ইউরোপ দুটি মহাদেশকে একত্রে ইউরেশিয়া বলা হয়। তাহলে কী ১৯৯৭ সালের স্বপ্নপূরণ হতে যাচ্ছে চীন আর রাশিয়ার? সেই সময়, দুটো দেশ বহু মেরুময় বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কারো একক আধিপত্য থাকবে না। কিন্তু সময়টা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্যের। তাই, এতোদিন ধরে চীন এবং রাশিয়া নিজেদের উন্নয়নেই মনোযোগী ছিল। চীন এতদিন রপ্তানি নির্ভর উৎপাদনে ব্যস্ত থেকেছে। রাশিয়া তার প্রাকৃতিক সম্পদ বিশেষ করে জ্বালানি তেল গ্যাস কয়লা ইউরোপে রপ্তানি করে লাভবান হয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের জন্য গড়া হয়েছে অনেকগুলো পাইপ লাইন। ২০১১ থেকে ইউরোপের চাহিদার অর্ধেক গ্যাস এসেছে রাশিয়া থেকে। কিন্তু জ্বালানি ভিত্তিক এই রাশিয়া ইউরোপ সম্পর্ক, সম্প্রতি ইউক্রেন ইস্যুতে ভেস্তে গেছে। তাই ইউরোপ থেকে মুখ ফিরিয়ে রাশিয়ার দিকে তাকাতে হচ্ছে চীনের দিকে। আর চিনি ঠিক এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে। তবে এই ট্র্যাপ এ পা ফেললে পুতিনের বিপদ কতটা সেটা বলবে সময়।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম