।। প্রথম কলকাতা ।।
ভারতে সমুদ্রের নীচে এ কোন রহস্যময় সম্পদ? বাংলাদেশ ও এর হদিশ জানে। তবে কী আগাছা বিক্রি করেই কোটি কোটি টাকা ঢুকবে মোদীর দেশে? টন টন সি-উইড চাষ করলেই ঘটবে কামাল। স্বাস্থ্য-শিল্প সমৃদ্ধ হবে। বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার উপচে পড়বে। হীরের চেয়েও দামী সম্পদ এবার ভারতের হাতে? সার্ভে রিপোর্টে চমকে দেওয়া তথ্য। একটা শ্যাওলার দাম কোটি কোটি টাকা? আপনার ধারণা নেই ভারতের সমুদ্রের নিচে কত কোটি টাকার সম্পদ লুকিয়ে আছে। এমনকি প্রতিবেশী বাংলাদেশও এই সম্পদে ঠাসা। জলের নীচে বিছিয়ে আছে লাল, বাদামি, সবুজ সি উইড। সি-উইড আসলে ‘সামুদ্রিক আগাছা’ – এক ধরণের শ্যাওলা।
২০২২ এর বিবিসির রিপোর্ট বলছে বাংলাদেশে পাঁচ হাজার টন সামুদ্রিক শ্যাওলা উৎপাদন হয়। সেখানে ভারতে প্রতি বছর ৩৩ হাজার ৩৪৫ টন সিউইড প্রাকৃতিক ভাবেই পাওয়া যায়। তথ্য বলছে দেশে ৮১১৮ কিলোমিটার কোস্টলাইন থাকায়, ১ কোটি টন পর্যন্ত সিউইড উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে ভারতে। বলছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ এবং সেন্ট্রাল মেরিন ফিশারিজ় ইনস্টিটিউট এর সার্ভে রিপোর্ট। বড় তফাৎ কিন্তু যে সিউইড আলোচনার হট টপিক তার বেনিফিট জানেন? সিউইডের দুর্দিন্ত পুষ্টিগুণ, তাই বিভিন্ন দেশে খাদ্য ও শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে এটা ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে না হলেও জাপান, চীন এবং কোরিয়ায় সি-উইড খাওয়া হয়। তিন ধরণের সি-উইডের মধ্যে সবুজটা সাধারণত খাওয়া হয়। আর লালটি হাইড্রোকলোয়েড উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। বাদামি সি-উইড খাবার ও হাইড্রোকলয়েড উৎপাদন দুই কাজেই ব্যবহার হয়। এছাড়াও প্রসাধনী, ওষুধ, টেক্সটাইল, কাগজ শিল্প এবং জেল জাতীয় খাবারে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় সি-উইড। জমিতে সার, প্রাণী খাদ্য ও লবণ উৎপাদনেও সি-উইড ব্যবহার করা যায়।
সামুদ্রিক শ্যাওলা হতে পারে, উপকারিতা অনেক। বিশ্বখ্যাত কনসালটেন্সি ফার্ম বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ এর রিপোর্ট বলছে, দেদার গাছ কাটার জেরে বিশ্বে উষ্ণায়ন নিয়ে পরিবেশ দূষণজনিত যে সমস্যা ক্রমশ ঘোরাল হচ্ছে, তার দুর্দান্ত সমাধান হতে পারে সিউইড। এক একর জমিতে যে পরিমাণ সিউইড থাকতে পারে, তা সমপরিমাণ জমিতে থাকা পূর্ণ বয়স্ক গাছের তুলনায় ২০ গুণ বেশি পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারে। ফলে নামমাত্র খরচে পাওয়া সিউইড থেকে পরিবেশ দূষণ কমাতে যে পরিমাণ সাহায্য হতে পারে, তা অন্য কিছু থেকে চিন্তাও করা যায় না। তাহলে বিশ্বের একাধিক দেশে যদি এই সিউইড রপ্তানি করা যায়, তাহলে কত পরিমাণ আর্থিক লাভ হতে পারে ভারতের? কোনো আন্দাজ আছে? বিশেষজ্ঞদের দাবি, বর্তমান পরিকাঠামোতে বিশেষ কিছু বদল না করেও অনায়াসে এই সামুদ্রিক মহামূল্যবান সম্পদ থেকে ৭৫০ কোটি ডলার আয় করতে পারে ভারত। আর একদিকে খাবার হিসেবে, অন্যদিকে শিল্প উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে সি-উইড রপ্তানির ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের ও। সরকারি উদ্যোগে বর্তমানে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, কুয়াকাটাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ হচ্ছে এই সামুদ্রিক শৈবাল। অলরেডি পটুয়াখালীতে একটি ল্যাবও বসানো হয়েছে।
মোদ্দা কথা, সিউইড থেকে বড় লাভের সম্ভাবনা দেখছে দুই দেশ ভারত এবং ওপার বাংলা জানিয়ে রাখি, ছোট দেশ হলেও ইন্দোনেশিয়া ২৫ লক্ষ টন সিউইড রফতানি করে বিশ্ববাজারে। ভারত সেখানে বর্তমানে বিশ্বের মোট উৎপাদনের মাত্র ১% বা ২০০ কোটি টাকার সমান সিউইড রফতানি করে ফলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বিপুলয়সম্ভাবনা রয়েছে ভারতের সামনে, সিউইড রফতানির মাধ্যমে। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, বিশ্বের অন্তত ১০ টি দেশে আগামী ৭ বছরে বার্ষিক ১১.৬৪% চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে সিউইড মার্কেট। যা প্রতিটি দেশেই ১১০ কোটি ডলারে পৌঁছে যেতে পারে। ফলে সহজেই অনুমান করা যায়, যে কত পরিমাণ সিউইড বাণিজ্য সম্ভাবনা ভারতের জন্য অপেক্ষা করছে। এটা একদম দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। ২০২২ এর বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের সরকার জানিয়েছিল বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের একান্ত সমুদ্র এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির বেশ কিছু মূল্যবান উদ্ভিদজাত এবং প্রাণীজ সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রায় দু বছরের গবেষণায় ২২০ প্রজাতির সি-উইড চিহ্নিত করা হয়েছে এবার ভারতের পালা। যে, সিউইডের যথাযথ ব্যবহার দু দেশের জন্যই ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্ভাবনা তৈরি করবে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম