Dacres Lane: খাদ্যপ্রেমীদের রসনা মানচিত্রে স্থায়ী, শুধু খাওয়ার নয়, খাওয়ানোর জায়গা ডেকার্স লেন

।। প্রথম কলকাতা ।।

Dacres Lane: শহর কলকাতার রাজপথ অতীতেও ছিল যেমন ব্যস্ত এখনও সেই ব্যস্ততার পরিমাণ ঠিক একই রকম। বরং বলা যায় আরও খানিকটা বেড়ে গিয়েছে। এই শহরের অলিতে গলিতে ঘুরলে এমন অনেক জায়গায় চোখে পড়বে যা আপনার পায়ের গতি কয়েক মিনিটের জন্য হলেও কমিয়ে দেবে। সেই তালিকায় রয়েছে কলকাতার এই সরু এক ফালি রাস্তা। যা সকলের কাছে পরিচিত অফিস পাড়ার ক্যান্টিন বা ডেকার্স লেন নামে। সকালের জলখাবার বলুন কিংবা দুপুরের পেট পুরে খাওয়ার ব্যবস্থা, এমনকি চাইলে বিকালের টিফিনটাও এখানে হয়ে যাবে অনায়াসে। মহানগরীর বুকে এখনও পর্যন্ত রাজত্ব করে চলেছে ডেকার্স লেন।

চিকেন স্টু থেকে শুরু করে ডিম টোস্ট, মোমো। চাউমিন থেকে শুরু করে ফিশ ফ্রাই, বাদ যাবে না বাসন্তী পোলাও, মাটন কষা এমনকি বিরিয়ানিও। আরও কত খাবারের পদ যা হাতে গুনে প্রায় শেষ করা যায় না। এই ডেকার্স লছনে এসে পৌঁছানোর জন্য যে বিশাল পাহাড় পর্বত ডিঙিয়ে আসতে হবে তেমন কোন ব্যাপারও নয়। ধর্মতলার মোড় থেকে সোজা চলে আসুন রাজভবনের দিকে। মিনিট দুয়েকের মত মনের আনন্দে আপনার সহ পথচারীদের সঙ্গী করে এগোতে থাকলেই ডান হাতে দেখতে পাবেন একটি তার জড়ানো ফলক। যেখানে লেখা রয়েছে জেমস হিকি সরণি। আর নিচে লেখা রয়েছে ডেকার্স লেন।

এই রাস্তার ইতিহাস সম্পর্কে জানেন ?

কলকাতার কালেক্টর ফিলিপ মাইনার ডেকার্সের নাম অনুযায়ী নাকি এই সরু এক ফালি গলির নামকরণ করা হয়েছিল ডেকার্স লেন। ডেকার সাহেব সেই সময়ে এই রাস্তাতেই নাবিকদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতেন এখানেই চলত কথাবার্তা, আবার মাঝে মধ্যে খাবারদাবারের ব্যবস্থাও করা হতো এই গলিতেই। পরবর্তী সময়ে ভারতীয় সংবাদপত্র বেঙ্গল গেজেটের প্রবক্তা জেমস অগাস্টাস হিকির নামেই রাস্তার নামকরণ করা হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত জনসাধারণের কাছে এই রাস্তা ডেকার্স লেন নামেই প্রসিদ্ধ।

সকালের দিকে এই ডেকার্স লেনে আসলেই আপনি দেখতে পাবেন প্রত্যেক দোকানের কর্মচারীরা বিরাট বড় বড় হাঁড়ি, কড়াই, গামলা নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে নেমে পড়েছে। কোথাও ময়দা মেখে লেচি করতে ব্যস্ত কেউ, কোথাও আবার চলছে সবজি কাটার কাজ, কেউ আবার বিরাট কড়াইতে তেল চাপিয়েছেন। মোট কথা খদ্দের আসার আগেই উপাদান সমস্ত রেডি করে রাখতে হবে । আর তার সাথেই রেডি করে রাখতে হবে শসা পেঁয়াজ কুচি সঙ্গে লেবু।

একে একে খদ্দের আসা শুরু হবে আর একেবারে রকেটের গতিতে দোকানের কর্মচারীরা প্লেটে প্লেটে সাজিয়ে খাবার তুলে দেবেন প্রত্যেকের হাতে। সঙ্গে অবশ্যই দিয়ে যাবেন শসা পেঁয়াজ কুচি। এর মধ্যেই প্রায় ৭০ বছর ধরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে চিত্তদার আদি দোকান। ডেকার্স লেন যতটা জনপ্রিয় ঠিক ততটাই জনপ্রিয় চিত্তদার এই দোকান । এখানে ফিশ ফ্রাই , ডিমের ডেভিল, চিকেন স্টু সহ আরো অনেক কিছুই রয়েছে রসনা তৃপ্তির জন্য। আর তার সাথে পেয়ে যাবেন কর্মচারীদের ঝড়ের গতিতে সার্ভিস এবং আন্তরিকতা।

কত মানুষের প্রতিদিনের ব্রেকফাস্টের জায়গা এই ডেকার্স লেনের কালো বেঞ্চগুলি। নিজেদের মন মত খাবার পেট ভরে খেয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে আবার কেউ কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যান। এই গলি বছরের পর বছর মানুষের খিদে মেটায়। মালাই টোস্ট, ডিম টোস্ট, কিমা পরোটা হাতে নিয়ে কর্মচারীদের গলির এপাশ থেকে ওপাশ ছুটে যেতে দেখা যায় রোজ। প্রতিদিন এখানে সকাল হলেই জ্বলে উনুনের আগুন। তাই বলাই যায়, এই গলি শুধু খাওয়ার জন্য নয় এই গলি বেঁচে থাকবে খাওয়ানোর জন্য। এত সহজে এখানে নিভবে না উনুনের আগুন।

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version