।। প্রথম কলকাতা ।।
সমুদ্রের অতল গহ্বরে তেলের স্রোত বইছে। হু হু করে এতো দামী সম্পদটা ছড়িয়ে পড়বে ভারতে। রাশিয়া সৌদি ডাহা ফেইল? কৃষ্ণা গোদাবরী বেসিনে লুকোনো কোন গুপ্তধন? শুধু বাংলাদেশ নয়, বঙ্গোপসাগরের বেনিফিট পাবে আমাদের দেশও? ডিপ সি প্রজেক্ট কিভাবে টাকায় ভরাবে ভারতকে। ওএনজিসি’র হাতে এলো আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ। সাগরের নীচের এই খনিই বড় রহস্যের আধার। ভরসা করা ছেড়ে দিলো? গভীর সমুদ্রের তেল খনি কৃষ্ণা-গোদাবরী বেসিন থেকে ডিরেক্ট লাইন ভারতের কোণায় কোণায়। অপরিশোধিত তেল উৎপাদনে বড়সড় পদক্ষেপ। এবার ONGC র কামাল দেখবে। তেল উৎপাদনকারীদের জোট ওপেক। তাহলে কি এই চালেই ইরান, ইরাক, কুয়েত, সৌদি, ভেনেজুয়েলা, রাশিয়াকে টেক্কা দেবে ভারত?
কৃষ্ণা গোদাবরী বেসিন থেকে তেল উৎপাদন শুরু হলে ভারতের বছরে দশ হাজার কোটি টাকারও বেশি আমদানি খরচ বেঁচে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, ভারত প্রয়োজনীয় অপরিশোধিত তেলের অন্তত ৮৫ শতাংশ এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রায় অর্ধেক আমদানি করে। ফলে, এই ডিপ সি প্রজেক্টের মাধ্যমে তেল উৎপাদন ভারতের জন্য অনেকটাই স্বস্তির হতে চলেছে। দীর্ঘদিন ধরেই এই গভীর সমুদ্রের তৈলখনি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর এবার সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পালা। কৃষ্ণা-গোদাবরী বেসিন থেকে তেল উত্তোলনের গোটা প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রক। এখান থেকে উৎপাদন শুরু হলে তা ONGC-এর জন্য ভালো হবে। কারণ বেশ কিছু সময় ধরেই এই সংস্থা কম উৎপাদনের কারণে সমস্যায় পড়েছে। কাজ শুরু হলে দেশের পূর্ব উপকূলে ওএনজিসির প্রথম গুরুত্বপূর্ণ তৈলখনি হবে কেজি বেসিন।
সবথেকে বেশি গুরুত্ব অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে KG-DWN-98/2 ব্লকের। অনেকগুলি সঞ্চয় মিলেছে যেগুলি জড়িয়ে এক একটি ক্লাস্টার তৈরি করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের উপর এই এলাকায় জলের গভীরতা ৩২০০ মিটারের মতো। এই ব্লকটিকে মোট ৩ টি ক্লাস্টারের ভাগ করা হয়েছে! তার মধ্যে ২ নম্বর ক্লাস্টার থেকে সবার আগে উৎপাদন শুরু হবে। শুধু অপরিশোধিত তেল নয়, ভারতের বেনিফিট হবে অনেক। কারণ এখান থেকেই প্রাকৃতিক গ্যাস ও উৎপাদন হবে। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়, তখনই এই বেসিন থেকে বেশ কিছু পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাসও মিলবে বলে জানানো হয়েছে।ফলে তেল গ্যাস আমদানিতে ভারতের নির্ভরতা কমবে।২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের মধ্যেই প্রতিদিন অন্তত ৪৫০০০ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর এর উপর ভিত্তি করেই ২০২৩ অর্থবর্ষের তুলনায় ২০২৫ অর্থবর্ষে ONGC-এর উৎপাদনের পরিমাণ একলাফে অনেকটাই বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাশিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণ তেল কেনে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভারত রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করে তেল কেনা চালিয়ে গেছে। এদিকে সম্প্রতি রুশ তেলের উপর ডিসকাউন্ট কমে যাওয়াতেই মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল কেনা বাড়িয়ে দিয়েছিল ভারত। তাহলে কি এরপর থেকে মস্কো, সৌদির উপর ভারত আর নির্ভর করবে না? কেজি বেসিন সব হিসেব ঘুরিয়ে দেবে?এটা ফ্যাক্ট, অধিকাংশ তেলক্ষেত্র পুরনো হয়ে যাওয়ায় উৎপাদনে ধাক্কা খেয়েছে ONGC। কিন্তু, কেজি বেসিন থেকে তেল গ্যাস উত্তোলনের কারণে মোট উত্তোলনের পরিমাণ আরও বাড়বে, পুরোনো ঘাটতি মিটে যাবে।তাছাড়া আগেও জানিয়েছিলাম তেল রপ্তানি কারো দেশ হিসেবে ভারত ও পিছিয়ে নেই। ভারতের পরিষদিত তেল ও হুহু করে ছড়িয়ে যাচ্ছে গোটা বিশ্বে। গুছিয়ে তেল এক্সপোর্ট করছে ভারত। সেক্ষেত্রে কেজি বেসিন এর জন্য অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও সেই তেল রপ্তানি করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে নয়া দিল্লি।
বলতেই হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাতে ভারত একেবারে দুর্দান্ত খেলোয়াড় হিসেবে ফ্রন্ট লাইনে এসে দাঁড়াচ্ছে। আর তেল এক্সপোতে কম্পিটিশন চালাচ্ছে বড় বড় তেল উৎপাদক দেশের সাথে। এটাই তো ভারতের মাহাত্ম্য।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম