China – Russia: বন্ধুত্ব নয়, এই স্বার্থে রাশিয়ার পাশে থাকবে চীন! শি এর জুনিয়র পার্টনার হবেন পুতিন?

।। প্রথম কলকাতা ।।

China – Russia: রাশিয়াকে দৃঢ় সমর্থন এর আশ্বাস দিচ্ছে চীন। কিন্তু, ইউক্রেন নীতিতে রাশিয়া চীনের দৃষ্টিভঙ্গিতে একগুচ্ছ অমিলের পরেও কোন ‘স্বার্থে’ রাশিয়াকে ‘দৃঢ় সমর্থন’ দেবে চীন? নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী নয়? ইউক্রেন ইস্যুতে সত্যিই কি লাভের গুড় খেতে চায় চীন? রাশিয়া হারুক বা জিতুক, শি কি শুধুই নিজেদের স্বার্থ দেখছেন? চীনের নেতৃত্বে ‘নয়া বিশ্বব্যবস্থা’ই বেইজিং এর ‘তুরুপের তাস’ বন্ধু কম, রাশিয়া কি চীনের ‘জুনিয়র পার্টনার’ হয়েই থেকে যাবে? কি বলছেন বিশ্লেষকরা? ইউক্রেন যুদ্ধে চীন একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট।পাশ্চাত্যের চাপ থাকা সত্ত্বেও যে চীন বলছে, দ্বিপক্ষীয় মূল স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে মস্কোর প্রতি ‘দৃঢ় সমর্থন’ দিয়ে যাবে তারা। এমনকি, চীন রাশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও পুঁজি বিনিয়োগ সংক্রান্ত সহযোগিতা শক্তিশালী করার আহ্বানও জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং। কিন্তু, সাদা চোখে যা দেখা যাচ্ছে স্বার্থ কি ততটুকুই? চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে শান্তির প্রস্তাব দিয়েছেন বারংবার।

যাঁরা ভেবেছিলেন তিনি হয়তো এই যুদ্ধে নিজেকে নিরপেক্ষ রেখে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছেন, তাঁদের সেই আশার গুড়ে কিন্তু বালি। কারণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুতিনের সোজাসাপ্টা হিসেব। ইউক্রেন তাঁর কাছে এমন একটা অস্তিত্বগত হুমকি, যার অপসারণ পুতিনকে করতেই হবে। আর, চীনের মতলব কিন্তু অন্য। চীনের প্রেসিডেন্ট শি চীন পিং, পুতিনের সুরে সুর মিলিয়ে ‘অনিঃশেষ বন্ধুত্বের’ কথা ঘোষণা করলেও, তাতে স্বার্থ আছে। সেই বন্ধুত্বকে কাজে লাগিয়েই চীন চাইছে এক “নয়া বিশ্বব্যবস্থা” গড়ে তুলতে। মানে, অনেক দূরের পরিকল্পনা। এছাড়াও ইউক্রেন ইস্যুতে চীন রাশিয়ার থেকে প্রচুর পরিমাণে লাভবান হচ্ছে, হবে। তাই পুতিন এবং শি এর মধ্যে ইউক্রেন ইস্যুতে যতই মতের অমিল হোক না কেন সম্পর্ক ভাঙবে না, বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

পুতিন এবং শি এর মধ্যে যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ইউক্রেনে মস্কো যেন পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু না করে, সে ব্যাপারে পরিষ্কার মেসেজ দিয়েছিল বেইজিং। ততক্ষণে, পুতিন বেশ কয়েকবার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়ে দিয়েছেন অথচ মন রাখতে, সেই পুতিনই আবার ১৮০° অ্যাঙ্গেলে ঘুরে গিয়ে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করার যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করলেন। কিন্তু, শি চিন পিং মস্কো ছাড়তেই পুতিন ওই চুক্তি উপেক্ষা করলেন এবং বেলারুশে ট্যাকটিক্যাল পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা করলেন।এখান থেকে একটা বিষয় খুব স্পষ্ট। ইউক্রেন নীতির ব্যাপারে দুই দেশের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে বিরাট অমিল। আরেকটা বিষয় ব্যাখ্যা করি। মস্কোয় পুতিন শি বৈঠকের আগে ইউক্রেনে শান্তি ফেরাতে ১২ দফা শান্তিপ্রস্তাব দেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। যে প্রস্তাব নিয়ে পুতিন প্রকাশ্যে সাফ জানিয়েছেন, শান্তি পরিকল্পনার কিছু বিষয় একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। বলেছেন, অনেক বিধিই নাকি রাশিয়ার দিক থেকে অসঙ্গতিপূর্ণ।

অর্থাৎ শি যেমন, নিজের স্ট্যাণ্ড পয়েন্ট জানিয়ে চলেছেন তেমন পুতিনও কিন্তু ছেড়ে কথা বলেননি। দুই দেশের মধ্যে মতপার্থক্যের শেষ নেই। কিন্তু, এরপরও চীন ও রাশিয়ার সম্পর্ক ভাঙবে তো নাই, উল্টে বন্ধুত্ব যেন গলায় গলায়। কারণ একটাই “বেইজিংয়ের স্বার্থ” বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, আসলে, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত শেষ হোক, সে ব্যাপারে শি চিন পিংয়ের তাড়াই নেই। পর্যবেক্ষকদের‌ মতে, যুদ্ধ জিইয়ে রাখলেই চীনের লাভ। এই যুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে রাশিয়াকে তেল গ্যাস বিক্রির জন্য চীনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আর বন্ধুত্বের নিদর্শনস্বরূপ চীন বাজারের চেয়ে কম মূল্যে রাশিয়ার তেল কিনছে। বড় ফায়দা, চীন রাশিয়ার কাছ থেকে তেল-গ্যাস সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়েছে। আর রাশিয়া কিন্তু চীনের কাছ থেকে অস্ত্র চায়, যা দিতে চীন খুব একটা আগ্রহী নয়। তাদের অর্থনীতি ইউরোপ আমেরিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। শুধু সম্পৃক্তই নয়, নির্ভরশীল ও। এই অবস্থায় রাশিয়ার কাছে অস্ত্র বিক্রির ফলে যদি চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসে, তাহলে অনেক কিছু কেচে যেতে পারে। সেই কথা মাথায় রেখে শি এই মুহূর্তে মস্কোকে অস্ত্র সরবরাহের কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি। মানে, শি কিন্তু মেপে পা ফেলছেন।

হতে পারে, চীন রাশিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে‌। দু দেশের মধ্যে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে পুতিন শি বিরাট চেষ্টা চালাচ্ছেন এমনকি, রাশিয়াকে চীন বড় ইকোনমিক্যাল সাপোর্ট দিচ্ছে, কিন্তু তারপরেও আখেরে চীনের লাভই বেশি। বুঝতে হবে, বিশ্বে চীন এখন দ্বিতীয় প্রধান পরাশক্তি। শুধু অর্থনীতি নয়, সামরিক ও প্রযুক্তিক্ষেত্রেও দেশটা দ্রুত এগোচ্ছে। এই চীন এখন চাইছে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর মার্কিন নেতৃত্বে যে বিশ্বব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তাকে পাশ কাটিয়ে একটি বিকল্প বৈশ্বিক ব্যবস্থা তৈরি করতে। আর এই কাজেই চীন পাশে চাইছে রাশিয়াকে।

বন্ধুত্বকে কাজে লাগিয়ে চীন চাইছে এক নয়া বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে। যে নতুন মৈত্রী জোটে নেতা হবে চীন, আর রাশিয়া তার ‘জুনিয়র পার্টনার’। হতে পারে, রাশিয়া অর্থনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের তুলনায় নস্যি, কিন্তু কে না জানে, পারমাণবিক শক্তি হিসেবে রাশিয়া কারও চেয়ে কম নয়। এই দুই দেশ এবং তার সঙ্গে যদি ব্রাজিল, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইরানের মতো দেশকে সঙ্গে পাওয়া যায়, তাহলে যে ‘বিকল্প’ বিশ্বব্যবস্থার কথা চীন ভেবেছে, তার বাস্তবায়ন কিন্তু অসম্ভব হবে না। অতএব বিভিন্ন দিক থেকে লাভবান কিন্তু চীনই। তাই, রাশিয়াকে চীন যে দৃঢ় সমর্থন দিয়ে যাবে, সেটা বেইজিং সফরে যাওয়া রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিনকেও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং। নেপথ্যে, চীনের স্বার্থ হাসিলের মরিয়া চেষ্টা। মানতে হবে, চীনের ফিউচার প্ল্যানিং কিন্তু মারাত্মক।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version