।। প্রথম কলকাতা ।।
ক্লাসরুম আছে, শিক্ষক রয়েছেন, কিন্তু নেই কোনও পড়ুয়া। ফাঁকা স্কুল আগলে বসে রয়েছেন দুই শিক্ষক। ৫ সেপ্টেম্বর, শিক্ষক দিবস এই দিনটা আসলেই গলার কাছে কান্না যেন দলা পাকিয়ে থাকে এই দুজনের। ক্লাসরুম শুনশান! কেউ কোথাও নেই স্কুল বলে মনেই হবে না। শিক্ষকতা ভুলতে বসেছেন আর কাকেই পড়াবেন? ছাত্রছাত্রীই তো নেই রাজ্যের এই সরকারি স্কুলের ছবি দেখে চোখে জল আসবে আপনার শিক্ষক দিবসের করুণ ছবি। পড়ুয়া শূন্য এই স্কুলে নিয়ম মেনে আসেন শিক্ষকরা। নিয়ম মাফিক স্কুলের গেট খোলা হয়। তবে শোনা যায় না ঘন্টার শব্দ, পড়ুয়াদের গলা, পড়ার আওয়াজ। ধুলো পড়ছে ব্লাকবোর্ড থেকে পড়ুয়াদের বেঞ্চে। ক্লাসরুমের পিছনের ফাঁকা বেঞ্চগুলোতে মাকড়সার জাল। ছাত্রছাত্রী নেই! শিক্ষক দিবসে কীভাবে কাটান এই স্কুলের দুই শিক্ষক?
একটা করে পড়ুয়া কমতে কমতে আজ সংখ্যাটা ৬ -এ দাঁড়িয়েছে। খাতায় কলমে ৬ জনের নাম থাকলেও কোনও কোনও দিন ক্লাসরুম ফাঁকাই পরে থাকে স্কুলে কেউ আসে না। তুফানগঞ্জ টাউন বিদ্যাসাগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছবিটা এমনই। বছরের অনান্য দিন যাওবা কেটে যায় কেবল একটি দিন পাঁচ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস আসলেই বুকে একটা চাপা কষ্ট অনুভব করেন বিদ্যাসাগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক। ক্লাসরুমের স্যাঁতস্য়াঁতে দেওয়াল, চক, ডাস্টার এদিনটাতে যেন তাঁদের দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসে। দেওয়ালে ধাক্কা খায় সেই অট্টহাসি এ যেন দীর্ঘ অবসরযাপন। আক্ষেপের সুর শিক্ষক অরিন্দম রায়ের গলায়। বাংলা মিডিয়াম তার উপর আবার সরকারি স্কুল। কেউ পড়তে চায় না। নামী দামী বেসরকারি স্কুলে পড়ার হিড়িক। যে কারণে ধুঁকছে এই প্রাথমিক বিদ্যালয়। মানছেন শিক্ষকরাও।
পরীক্ষার আগে স্টুডেন্টদের বাড়িতে ফোন করলে একজন দুজন আসে। তাও ইচ্ছে থাকে না পরীক্ষার দিন থাকে এক পরীক্ষা দিতে আসে অন্য তারিখে এভাবেই চলছে দিনের পর দিন। শিক্ষক দিবসে তাই ভীষণ মন খারাপ হয় বললেন প্রধান শিক্ষক সুধীরবাবু। একটা সময় রমরমিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি চলত। গমগম করত পড়ুয়াদের আওয়াজে। কিন্তু প্রাইভেট স্কুলের দাপটে টিকে থাকত পারল না। নতুন চকগুলো এখনও শেষ হল না, ব্ল্যাকবোর্ডে চকের দাগ পড়েনি বহুদিন। আসলে শিক্ষকতা শুধুমাত্র পেশা নয়, একটা চ্যালেঞ্জ, একটা আবেগ। তা আর বুঝতে পারেন না বিদ্যাসাগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ফাঁকা ক্লাসরুম দেখতে দেখতে এভাবেই পেরিয়ে যায় একেকটা শিক্ষক দিবস।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম