।। সুচিত্রা রায় চৌধুরী ।।
মুসলিম দেশগুলোয় জনপ্রিয়তার শিখরে নরেন্দ্র মোদী। কেন হঠাৎ করে মুসলিম দেশ গুলোর সামনে দৃষ্টান্ত হলেন নমো? ওবামার ভারত ভাগ মন্তব্য মুখ থুবড়ে পড়ল। মিশরে ভারতকে এত তোয়াজ কাঁটার মতো বিঁধছে চিনের। জেনে রাখুন মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে গভীরে ডুব দিল ভারত। সৌদি থেকে মিশর মোদী নাম জপছে সকলে কোন কারণে? মিশর কেন মোদীকেই সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব দিল বলতে পারেন? ২০১৫ সালে আবু ধাবির শেখ জায়েদ মসজিদের পর মিশরের আল হাকিম মসজিদে গেলেন নমো। মিশরের দাউদি বোহরা সম্প্রদায়কে ছিল ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নমোকে সম্মান জানাতে সবটা উজার করল ইজিপ্ট কিন্তু কেন? এরপরও কি বারাক ওবামার ভারত ভাগ নিয়ে করা উক্তি সমর্থনযোগ্য বলে মনে করা যায় প্রশ্ন করছে কূটনৈতিক মহলের একাংশ৷ গত এক দশকে অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করেছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে ভারতের বিপর্যয় বাড়তে পারে। কিন্তু ২০২৩ দাঁড়িয়ে গ্রাউন্ড ফ্যাক্ট বলছে একেবারেই হচ্ছে তার উল্টোটা। ভারতের থেকে এমন কি পাওয়ার আছে পশ্চিম এশিয়ার? নাকি ভারতই মন জুগিয়ে চলছে শক্তিশালী মুসলিম দেশগুলোর। মিশরের দাউদি বোহরা মুসলিমদের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন মোদী খবর এমনটাই৷
ভারতে বোহরা মুসলিমদের সম্মিলিত জনসংখ্যা ১০ থেকে ১২ লাখ, যা ভারতে মোট মুসলিম জনসংখ্যার ১০ শতাংশ। গুজরাট এবং মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে এই সম্প্রদায়ের আর্থিক প্রগতি চোখে পড়ার মতো। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় থেকেই মোদির সঙ্গে এই বোহরা মুসলিমদের সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। সেই সম্পর্ক ঝালিয়ে নেওয়া গেল। মিশরে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘অর্ডার অব নীল’ পেয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এনডিটিভির রিপোর্ট বলছে এ নিয়ে বিশ্বের ১৩তম সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব পেলেন মোদি। আর এই খবরের ভিত্তিতেই ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বললেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোদিকে যে ১৩টি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৬টি দিয়েছে মুসলিম প্রধান দেশ। পশ্চিম এশিয়া বাম ধ্যপ্রাচ্য। প্রথম কলকাতার বিশ্লেষণে আগেও জানানো হয়েছে যে চিনের নিজেদের পথ প্রশস্ত করতে গিয়ে ইরান-সৌদি বন্ধুত্ব করিয়ে ভারতেরও লাভ করিয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। কিন্তু এটা অস্বীকার করা যায় না মিডল ইস্টের দেশগুলোর মধ্যে চিনের এফেক্ট বাড়ছে। প্রায় হঠাৎ করেই পরম মিত্র থাকা আমেরিকা চক্ষুশূল হয়ে গেল সৌদির। পাল্টাতে থাকা ইকুয়েশনে ভারতের অবস্থা কোথায় ? মোদী ম্যাজিক যুক্তরাষ্ট্রের মতো এখানেও কি কাজ করছে? নাকি অঙ্কটা আসলে অন্য।
কূটনৈতিক মহল বলছে, প্রথমত মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ভারত বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে ম্যাটার করে। এক্ষেত্রে মিশরের উদাহরণ দেখুন মিসর থেকে শীর্ষ পাঁচ আমদানিকারী দেশের মধ্যে রয়েছে ভারত। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার দিকে এগোচ্ছে দুই দেশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারত ও মিসরের মধ্যে ৭৩০ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। একইভাবে সৌদি হোক বা আরব আমিরাত ওমান কাতার ভারতের ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আর্থিক ও সাংস্কৃতিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার স্ট্র্যাটেজি এদের পশ্চিম এশিয়ার কাছে স্পষ্ট। আর সেই স্পষ্ট নীতির কথা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে পেরেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোজা কথায় যে গুরুত্ব ভারত মধ্যপ্রাচ্যকে দিচ্ছে সেই গুরুত্বই ফেরত পাচ্ছে দিল্লি। ভারত জি২০র সম্মেলনে স্পেশাল গেস্টের তালিকায় আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মহঃ বিন জায়েদ আল নাহয়ান রয়েছেন। রয়েছেন সুলতান ওফ ওমান হাইথাম বিন তারেক। মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে ভারতের সাংস্কৃতিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক গভীর ও স্থায়ী। সবথেকে বড় কথা মধ্যপ্রাচ্য জ্বালানি দেওয়ার বদলে বড় লাভ করে ভারতের থেকে।
এদিকে সিইপিএ স্বাক্ষর হয়ে গিয়েছে ভারতের আরবের সঙ্গে। কূটনৈতিক মহলের মতে, এটা ভারতও স্বীকার বাধ্য। মধ্যপ্রাচ্যে চিনের মজবুত প্রভাব দিল্লির মাথাব্যাথার কারণ। তাই চিনের প্রভাবকে ক্ষুন্ন করতে প্রতিনিয়তই ডাবল এফোর্ট দেওয়া হচ্ছে ভারতের স্ট্র্যাটেজিতে। তবে মধ্যপ্রাচ্যও যে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করলে লাভেই থাকবে সেটা জলের মতো পরিস্কার তাদের কাছে৷
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম