সাগরের নীচে রহস্যময় কেবল তার! বিষদৃষ্টি চীন-যুক্তরাষ্ট্র- রাশিয়ার। পৃথিবী ডুবছে অন্ধকারে ?

।। প্রথম কলকাতা ।।

সমুদ্রের নীচে বিছানো সাবমেরিন কেবল নিয়ে রহস্যময় খেলা। জলের তলায় জীবন্ত ফাঁদ, ঘাপটি মেরে বসে আছে
রাশিয়া -চীন-যুক্তরাষ্ট্র? আপনার অজান্তে অন্য একটা জগতে চলছে বিশাল বড় যুদ্ধ। বাইডেনের জালে জড়িয়ে গোটা বিশ্ব? জানেন? আপনার নাড়ি নক্ষত্র কাদের হাতে? এই খতরনাক অস্ত্রে জড়িয়ে শেষ হয়ে যেতে পারে কি যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ? খুব সাবধান, কেন বলছেন বিশেষজ্ঞরা? ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা একবার ধসে পড়লে, অন্ধকারে ডুবে যাবে গোটা পৃথিবী। পৃথিবী বিশেষ এক প্রকার তার দিয়ে সংযুক্ত, কানেক্টেড। ওই তারগুলো সাগরের নীচে অবস্থিত। যেগুলোকে বলে সাবমেরিন কেবল। এই তারগুলো আমাদের দূরের মানুষের সঙ্গে কথা বলতে এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করতে সাহায্য করে।

না, বিষয়টা এতটাও সহজ নয়। মাথায় রাখতে হবে ইন্টারন্যাশনাল ডেটার অন্তত ৯৫% ট্রান্সফার হয় সমুদ্রের নিচে স্থাপিত সীমিত সংখ্যক কিছু কেবল তারের মাধ্যমে। প্রতি সেকেন্ডে ২১ টেরাবাইট ডেটা ট্রান্সফারে সক্ষম এই ধরনের কেবলের সংখ্যা হাতে গোনা। এসব তার দিয়েই দৈনিক প্রায় ১০ লক্ষ কোটি ডলার সমান আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন হয় তাহলে বোঝাই যাচ্ছে পৃথিবীর মহাসাগর গুলোর তলদেশে বিছানো এ ধরনের কেবলগুলো ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ। অথচ, শুনলে অবাক হয়ে যাবেন গোটা পৃথিবীকে যুক্ত করা এমন তারের সংখ্যা মাত্র ৫০০। অর্থাৎ ৫০০টি তার গোটা পৃথিবীকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। এই সাবমেরিন কেবল কমিউনিকেশন যোগাযোগ ব্যবস্থার মূল স্তম্ভ যা সব দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামরিক ও আর্থিক শক্তিতে বলিয়ান পশ্চিমা বিশ্ব দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারছে না সাগরের তলদেশে কেবলগুলো তাদের জন্য কত বড় দুর্বলতার জায়গা।উপকারী এই সাবমেরিন কেবলগুলো নিয়ে অলরেডি বড় ধরনের একটা সমস্যা তৈরি হয়ে বসে আছে। চীন-রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র পেরে উঠবে তো? তলে তলে কী ফন্দি আঁটছে ওই দুই দেশ?

খোলসা করে বলি। তীরের কাছাকাছি সমুদ্রের তলদেশে বালির নিচে কেবলগুলো পুঁতে বসানো হয়। তবে মাঝ সমুদ্রে যেখানে মাছ ধরার সরঞ্জাম, নোঙর, ট্রলারের তেমন বাঁধা থাকে না, সেখানে সমুদ্রের তলায় মাটি বা বালির উপর সাবমেরিন কেবলটি স্রেফ শুইয়ে রাখা হয়। কেবলগুলো বেশ টেকসই করেই তৈরি করা। এখন সমস্যা হলো অনেকেই মনে করে যে এই বিশেষ কেবেলগুলোর মধ্য দিয়ে কি কি তথ্য আদান-প্রদান করা হয় তার উপর কড়া নজরজারি করছে আমেরিকা। যদিও আমেরিকার দাবি সবাইকে নিরাপদ বা সেফ জোনে রাখার জন্যই তারা এটা করে থাকে কিন্তু তাতে আদৌ কি সবাই স্বস্তিতে আছে? সেফ থাকছে? অনেকেই তাদের গোপনীয়তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছে। আরো একটা তথ্য শুনলে আপনার দুশ্চিন্তা বাড়বে বই কমবে না। নজরদারির এই যুদ্ধে চীন ও পিছিয়ে নেই। তাদের প্ল্যানিং হয়তো আরও বড়। আরো বেশি অঞ্চলকে দ্রুত ইন্টারনেটের আওতায় আনার পরিকল্পনা অনেকেই বলছেন এটা ভালো উদ্দেশ্য হতে পারে, কারণ তাতে হয়তো ইন্টারনেটের গতি অনেক বৃদ্ধি পাবে কিন্তু এতে বিপদের গন্ধ ও পাচ্ছেন অনেকে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, অন্যরা অনলাইনে কি করছে তা দেখার জন্য চীন এই কেবলগুলোর ব্যবহার করতে পারে। তাহলে কি, সাবমেরিন কেবল দিয়ে কি কি তথ্য আদান প্রদান হচ্ছে সেটা জানতেই চীনের এই স্ট্র্যাটেজি? সোজাসাপ্টা কথা অনেকেই চীনের এই রাস্তা তৈরীর উদ্দেশ্যকে মোটেই ভালো চোখে দেখছে না। এ তো গেল দুই সুপারপাওয়ারের কথা। আর রাশিয়া?

যুদ্ধে নতুন টার্গেট হয়ে উঠছে সাবমেরিন কেবল। গত দুই দশকে সাগরতলের এসব কেবল নেটওয়ার্কে হামলা চালানোর মতো বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি করেছে রাশিয়া, মার্কিন মিত্র যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দেওয়া হচ্ছে। এমনকি হামলার জন্য মানবহীন অত্যাধুনিক সাবমারসিবল জান এর বহর রয়েছে ক্রেমলিন এর কাছে। চীনের রয়েছে এমন বহর। আশঙ্কা করা হচ্ছে রাশিয়ার সাথে সশস্ত্র সংঘাতের পরিণতিতে সাগরতলের কেবল গুলোই আক্রমণের শিকার হতে পারে। একবার ভাবুন, রাশিয়া এই বিশেষ সাবমেরিন কেবলগুলোর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলে আপনার টেলিফোন লাইন বা ইন্টারনেট যদি আচমকাই হঠাৎ করে কাজ করা বন্ধ করে দেয় তাহলে সারা বিশ্বের মানুষ একে অপরের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারবে না। সেটা হলে এর পরিণতি কিন্তু সত্যিই ভয়ংকর হবে। গোটা পৃথিবী কার্যত অন্ধকারে ডুবে যাবে। কিন্তু রাশিয়ার বিরুদ্ধে সাবমেরিন কেবল ধ্বংসের আগাম অভিযোগ কেন তুলছে ব্রিটিশরা সেটাও তো জানতে হবে? ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যের শেটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের সাথে বাকি বিশ্বের ইন্টারনেট কানেকশনের কেবল দুই জায়গায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন সেখানে নাকি রাশিয়ার একটা বৈজ্ঞানিক গবেষণা জাহাজ কে দেখতে পাওয়া গেছিল।

রাশিয়াই যে ওই কাজ করেছে তা কিন্তু প্রমাণ হয়নি কিন্তু তারপরেও ঘটনাস্থলে রাশিয়ান জাহাজের উপস্থিতির ঘটনায় রীতিমতো নড়েচড়ে বসে পশ্চিমা নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। তাই, মস্কো কে নিয়ে টেনশন কমছে না। অন্য অনেক দেশ এই সমস্যা গুলোর মাঝখানে রয়েছে। তাদের ভূমিকা এখানে নিরপেক্ষ। তারা ভালো উদ্দেশ্যে এই সাবমেরিন কেবলগুলো ব্যবহার করতে চায়। তারা চায় না কেউ তাদের উপর স্পাইং করুক। অথবা সাবমেরিন কেবল গুলো নষ্ট করে ফেলুক। এমন একটা উপায় বের করতে চাইছে যাতে সাবমেরিন কেবল গুলো নিরাপদ থাকে। কারণ যে কোন দেশের সাবমেরিন কেবলে হামলা হলে সীমাহীন ক্ষতি হতে পারে, অন্য মাত্রার বিপদ ডেকে আনতে পারে, নাশকতায় ধ্বসে পড়তে পারে যোগাযোগ ব্যবস্থাও। রাতারাতি বৈশ্বিক ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ব্যাহত হওয়ার রিস্ক থাকছে ১০০%। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রিতে এর প্রভাব কতটা মারাত্মক হবে তা কল্পনারও বাইরে। এমনকি ভৌগলিক মন্দা ও শুরু হতে পারে। বিপর্যস্ত হতে পারে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য, ব্যাংকিং, আর্থিক সেবা, টেলি যোগাযোগ। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক বিনিময়ও এতে বাধাগ্রস্ত হবে

আর চীন আমেরিকা রাশিয়া জলের তলার সেই ভয়ংকর খেলাতেই মত্ত। ভাবছে কী যুক্তরাষ্ট্র, সাবমেরিন কেবল বিচ্ছিন্ন করে কোনো দেশকে বহুমুখী সংকটের মধ্যে ঠেলে দেওয়া সম্ভব, যা মোকাবিলা করা প্রায় অসাধ্য? রাশিয়া কিন্তু এই পথেও প্রতিশোধ নিতে পারে। তাই, বিশেষজ্ঞরা বলছেন সাগরের নিচে সাবমেরিন কেবলে নজরদারি না করে, অবহেলা না করে যুক্তরাষ্ট্রের সচেতন হওয়া উচিত, সাবধান হওয়া উচিত। কিন্তু, তা না করে যুক্তরাষ্ট্র যা করছে সেই ভুলের দাম চোকাতে ঘুম উড়ে যাওয়ার জোগাড়। সাবমেরিন কেবলের ওপর হামলার ঘটনায় পশ্চিমা বিশ্বের সাথে চীন, রাশিয়ার মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের সংঘাত কতোককটা মারাত্মক হতে পারে? ভাবতে পারছেন? সেটা কিন্তু কল্পনারও অতীত।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version