India-Bangladesh Relationship: প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেই হাসিনার সাথে মোদীর একান্ত বৈঠক! মিটবে কী দুই দেশের সমস্যা?

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

India-Bangladesh Relationship: তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসে প্রথম দ্বিপাক্ষিক বৈঠকটা শেখ হাসিনার সাথেই করবেন নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগদানের লক্ষ্যে, ঢাকা থেকে দিল্লি এসেছেন শেখ হাসিনা। যদি বলা হয়, ভারত আর বাংলাদেশের সম্পর্ক কেমন? তাহলে উত্তরটা প্রথমেই হবে, ভীষণই ভালো। কিন্তু বাংলাদেশের বহু সমালোচক থেকে শুরু করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অন্দরে ভারতের সম্পর্কে ভাবমূর্তি কিছুটা নেতিবাচক। সোজা কথায়, ভারতের বিরুদ্ধে যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে। বছরের পর বছর অমীমাংসিত হয়ে পড়ে রয়েছে তিস্তা চুক্তি। সীমান্ত হত্যা নিয়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশের মানুষকে ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরাতে দেখা যায়। বাংলাদেশের বহু সমালোচক মনে করেন, দুই দেশের সম্পর্কে ভারতের স্বার্থ যতটা সুরক্ষিত হয়েছে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কিন্তু ততটা হয়নি। এটা কি আদৌ ঠিক? মোদী-হাসিনার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে কোন কোন বিষয় আলোচনা হতে পারে? মিটবে কি, দুই দেশের মধ্যে থাকা সমস্যা গুলো?

 

৯ই জুন রবিবার নরেন্দ্র মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর, শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর একান্ত বৈঠক হওয়ার কথা। এছাড়াও ভারতের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আয়োজিত নৈশভোজে যোগদান করবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। প্রশ্নটা এখানেই, ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কিছু মানুষের যে ক্ষোভ রয়েছে, যে দাবি রয়েছে, এই বৈঠকে কি সেই দাবিগুলো উঠতে পারে? ভারত আর বাংলাদেশের মধ্যে যে যে সমস্যাগুলো রয়েছে তার সুরাহা কবে হবে? দেখুন, ভারত আর বাংলাদেশের বন্ধুত্বের সম্পর্ককে প্রতিবেশী দেশ গুলোর ক্ষেত্রে রোল মডেল বলে মনে করা হয়। বিগত দুই দশকে, দুই দেশের সম্পর্ক যেভাবে উন্নতি শিখরে পৌঁছেছে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলের একাংশের মতে, কূটনৈতিক সম্পর্ক শুধু দুই সরকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ হতে পারে না, তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে দুই দেশের জনগণও।

 

২০২৪ সালটা দুই দেশের জন্যই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনা যেমন বাংলাদেশে পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় এসেছেন, অপরদিকে নরেন্দ্র মোদীও তৃতীয় মেয়াদে পুনরায় ভারতে সরকার গড়তে চলেছেন। দুই দেশের জনগণের জনপ্রিয়তার নিরিখে দুজনেই এগিয়ে। সেখানে এই বৈঠকে দুই দেশের জনগণের ভালো মন্দের বিষয়টা আসা স্বাভাবিক। ভারতের পররাষ্ট্র নীতিতে বাংলাদেশের গুরুত্ব বিগত দেড় দশকে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবেও ভারতকে বহুবার বলতে শোনা গিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ভারতের সবথেকে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। বিগত বছরগুলোতে সংযোগ, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, স্থল ও সমুদ্রসীমার বিরোধ নিরসন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা সহ অভিন্ন নদী গুলোর জল বন্টন বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার ক্ষেত্রে অগ্রগতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। কিন্তু সবটাই যে নিষ্পত্তি হয়েছে, এমনটা নয়। সীমান্ত বিরোধ মিটলেও অস্বস্তি রয়ে গিয়েছে সীমান্তে হত্যা নিয়ে। প্রায় এক যুগ কেটে গিয়েছে, কিন্তু এখনো খোলেনি তিস্তা চুক্তির জট।

 

যা নিয়ে বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মনে। এই বিষয়গুলো নিয়েও বৈঠকে কথা হতে পারে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। এছাড়াও ভারত বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত গঙ্গা চুক্তির কার্যকাল শেষ হবে ২০২৬ সালে। ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিটির মেয়াদ ছিল ৩০ বছর। হিসাব অনুযায়ী, এই চুক্তি নতুন ভাবে নবায়ন করার জন্য দিল্লি আর ঢাকার হাতে আর খুব একটা বেশি সময় নেই। তাই বড় মাপের কিংবা কোন গুরুত্বপূর্ণ জল বণ্টন চুক্তির কথা নিয়ে আলোচনা হতে পারে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে। এছাড়াও বর্তমানে নিম্নমুখী বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। অর্থনৈতিক দিক থেকেও দেশটা একটু কোণঠাসা। তাই তো দেশটার বহু অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, এই মুহূর্তে বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণদাতা দেশ কিংবা নানা আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারকে আলোচনা করতে হবে। এমত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত কি ধরনের ভূমিকা নেয় সেদিকে নজর রয়েছে অর্থনীতিবিদদের। যদিও বাংলাদেশের বহু কূটনৈতিক মনে করেন, বাংলাদেশ এখন এমন কোন গভীর সংকট নেই, যার কারণে ভারতের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে হবে।

 

এছাড়াও কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করেন, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে কাজ করছে চীন ফ্যাক্টর। বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশে চীন কতটা প্রভাব বিস্তার করছে কিংবা ঢাকাকে বেজিং কীভাবে নিজের কাছে টানার চেষ্টা করছে, সেদিকে নয়া দিল্লির নজর থাকে। যদিও প্রকাশ্যে এই নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য হয় না। অপরদিকে বাংলাদেশও ভারত আর চীনের মধ্যে একটা ভারসাম্যের কূটনীতি বজায় রাখার চেষ্টা করে। নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে, মোদী-হাসিনার বৈঠক দুই দেশের সম্পর্ককে আরো মজবুত করবে। তবে দুই দেশের মধ্যে থাকা সমস্যাগুলোর সমাধান কতটা হবে, তা বৈঠকের পরেই জানা যাবে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version