মেঘনা দুহাত ভরে দিচ্ছে বাংলাদেশকে, শেখ হাসিনা প্রকৃতির এই দেওয়াকে কাজে লাগাতে পারছেন তো ?

।। প্রথম কলকাতা ।।

অবিশ্বাস্য ব্যাপার। নদীর বুক ফুঁড়ে জেগে উঠছে নতুন বাংলাদেশ। দেখতে কেমন? স্বপ্ন দেখাচ্ছে হাজারো চর। কারা পাবে এই নতুন ভূখণ্ড? বড় সৌভাগ্য দেশটার। আশীর্বাদ ঢেলে দিচ্ছে প্রকৃতি। একটা দ্বীপই দেখাচ্ছে কামাল। হয়ে উঠবে গেম চেঞ্জার। যুদ্ধ করে নয়, আপনা আপনি আয়তন বাড়ছে বাংলাদেশের।

বাংলাদেশের নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া। এখানে দুহাত ঢেলে দিচ্ছে মেঘনা। দূর থেকে দেখতে পাবেন, জেগে উঠেছে ছোট বড় ত্রিশটিরও বেশি চর। পড়ে রয়েছে হাজার হাজার একর জমি। না এই জমি বাংলাদেশ যুদ্ধ করে পায়নি। কারোর কাছ থেকে ছিনিয়েও নেয়নি। বা বাংলাদেশকে কেউ দানও করেনি। এই জমি বাংলাদেশ পেয়েছে প্রকৃতির আশীর্বাদে। এটা বাংলাদেশের সৌভাগ্য। মেঘনার গর্ভে তলিয়ে যায় পুরনো ভূখণ্ড, অপরদিকে জেগে ওঠে নতুন ভূমি।

বাংলাদেশে সাগরের তলদেশে প্রতিনিয়ত বেড়ে উঠছে এমন অসংখ্য ডুবো চর। মেঘনা নদী পথে যাওয়ার সময় যেদিকে চোখ যাবে দেখবেন কেবলই দ্বীপ, আর সবুজের সৌন্দর্য। কয়েক দশক পেরোতে না পেরোতেই নতুন স্বপ্ন নিয়ে বসতি গড়ছে মানুষ। বেঁচে থাকার আশ্বাস পাচ্ছে ভূমিহীনরা। গত দশ বছরে ভূমিহীনরা পেয়েছে ঢালচর, কেরিংচর, ঠেঙাচর, মৌলভী চর সহ বহু নতুন ভূখণ্ড।

হাতিয়ার অবস্থান বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর এলাকার উত্তর দিকে নদীর মোহনায়। চারিদিকে অথৈ জলরাশি আর উত্তল তরঙ্গের মাঝখানে ভেসে রয়েছে ভেলার মতো। ২১০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ৬ লক্ষ। মেঘনার বুক চিরে জেগে ওঠা চর গুলো এখন সবুজ গাছগাছালিতে ভরা। একটা সময় হাতিয়াই ছিল নোয়াখালী জেলার একদম শেষ সীমানা। কিন্তু এখন সেই হাতিয়া শেষ কথা বলছে না, বরং হাতিয়া থেকে দাঁড়িয়ে বঙ্গোপসাগরের দিকে যেতে যেতে যে দিকে তাকাবেন সেদিকেই দেখবেন নতুন ভূমি। এক সময় হাতিয়াকে কম ঝড় ঝাপটা সহ্য করতে হয়নি। হরণি, সুখচর, নলচিরা, সাগরদি, নীলাক্ষি প্রভৃতি ইউনিয়ন নিয়ে বাংলাদেশের হাতিয়া উপজেলা। ১৮৯০ সাল নাগাদ খরস্রোতা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গিয়েছে বহু জনপদ। কিন্তু যতটা না হারিয়েছে, তার দ্বিগুণ ফিরিয়ে দিয়েছে মেঘনা। যদিও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে চর গুলো সেভাবে কাজে লাগানো হয়নি। জোয়ারে প্লাবিত হওয়ার কারণে একাধিকবার ধান চাষ হলেও, সুফল মেলে মাত্র একবার। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ বেঁচে গেলেও, ছাড় পায় না নিরীহ পশুগুলো।

গত ৫০ বছরে হাতিয়া নদীগর্ভে হারিয়েছে প্রায় ৭০বর্গ কিলোমিটার এলাকা। খুইয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। হাতিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সমস্যা, চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তবুও এই জায়গাটাতে রয়েছে একরাশ সম্ভবনা। শুধু প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা আর ব্যবস্থাপনা। যদি এই চরগুলো কৃষিকাজের আউতায় আনা হয়, ফুলেফেঁপে উঠবে বাংলাদেশের অর্থনীতি। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সরকারের বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। চেষ্টা চলছে চরের মানুষগুলোকে যাতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পায়। চরগুলোতে উৎপন্ন হচ্ছে বিভিন্ন শাক সবজি থেকে শুরু করে ধান বাদাম কৃষিজ পণ্য। হাতিয়ার উপকূলেই রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম মৎস্যচরণ ক্ষেত্র। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী ২ দশকের মধ্যেই হয়ত চরগুলো একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তৈরি করবে নতুন বাংলাদেশ।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version