।। প্রথম কলকাতা ।।
মহাদেব এখানে ভীষণ জাগ্রত। ভক্তদের খালি হাতে ফেরান না। পূরণ করেন সবার মনোবাঞ্ছা। মন্দিরে পা দিলেই কানে আসবে হর হর মহাদেব ধ্বনি। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে স্নিগ্ধ নদী। মন্দির চত্বরে দু’দণ্ড বসলে ভালো হয়ে যাবে মন। পশ্চিমবঙ্গের সবুজে ঘেরা এই স্থান দেশ-বিদেশের বহু মানুষের কাছে ভীষণ প্রিয়। বলছি জল্পেশ মন্দিরের কথা।
জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি থেকে সাত থেকে আট কিলোমিটার দূরে রয়েছে জল্পেশ মন্দির। এটা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বড় মন্দির। স্থাপত্যশৈলী দাঁড়িয়ে দেখার মতো। একদম কাছ দিয়ে বয়ে চলেছে জর্দা নদী। অপরূপ মনোরম পরিবেশ। এই মন্দিরে শিবলিঙ্গ জল লিঙ্গ অর্থাৎ শিবলিঙ্গ থাকে একটা গর্তের মধ্যে। যাকে বলা হয় অনাদি। এখানে গর্তে জল ঢেলে অর্জন করতে হয় পূণ্য। সেই সপ্তদশ শতক থেকেই এই মন্দিরে শিবরাত্রি উপলক্ষে বিখ্যাত মেলা বসে।
প্রায় ৭০০ বছরের প্রাচীন মন্দিরের প্রত্যেক গাঁথুনিতে জড়িয়ে রাজকাহিনী আর শিবের মাহাত্ম্য। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান থেকেও বহু ভক্ত এখানে ভিড় জমান। শুধুমাত্র মহাদেবের আশীর্বাদের জন্য। এখানে দেবাদিদেব ভীষণ জাগ্রত। কথিত আছে, তিনি কখনই ভক্তকে নিরাশ করেন না। বিশেষ করে শ্রাবণ মাসটা এই মন্দিরে ভীষণ স্পেশাল। ভক্তদের ভিড়ে গমগম করে মন্দির চত্বর। ভিড় সামলাতে থাকে পুলিশি ব্যবস্থা। মন্দির চত্বরে ঢুকতেই চোখে পড়বে একটা কাউন্টার। যেখানে শ্রী শ্রী জল্পেশ দেবের নিত্য পুজো, ভোগ, আরতি, মন্দির সংস্কার আর দাতব্য কাজের জন্য মাত্র ৫০ টাকা জমা করতে হয়। মন্দিরের চারিদিকে রয়েছে বিভিন্ন জিনিসের পসরা, কিনে নিতে পারেন মন পছন্দের পুজোর সামগ্রী। মন্দিরটি যাত্রীদের জন্য সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। মন্দিরের তরফ থেকে প্রায় প্রচুর সিসিটিভি ক্যামেরা সহ রয়েছেন ১০০ এর বেশি স্বেচ্ছাসেবক।
লোক মুখে শোনা যায়, ১৫২৪ সাল নাগাদ কোচরাজা বিশ্ব সিংহ এই মন্দির তৈরি করেছিলেন। ভ্রামরী শক্তি পীঠের ভৈরব হলেন জল্পেশ। সময়ের ধারায় লেগেছে ইতিহাসের প্রলেপ। স্বাধীনতার আগে নাকি এই মন্দির থেকে হাতি বিক্রি করা হত। মন্দিরের পুরোহিত অরূপ ভট্টাচার্য ‘প্রথম কলকাতা’কে জানান, জল্পেশ মন্দির ভীষণ জাগ্রত। জল্প রাজা বলে একজন রাজা ছিলেন। সেই রাজার নামেই মন্দিরের এমন নামকরণ। তিনি আশীর্বাদ পেয়েছিলেন মহাদেবের কাছে। প্রতিবছর বৈশাখ মাসে বৈশাখী মেলা, ফাল্গুন মাসে শিবরাত্রি মেলা আর শ্রাবণ মাসে শ্রাবণী মেলায় ভক্তদের ভিড়ে মন্দির চত্বরে গা গলানো দায়। উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম মেলাগুলোর মধ্যে এই মন্দিরের মেলা অন্যতম। মন্দিরে পা দিলেই শুনতে পাবেন হর হর মহাদেবধ্বনি। প্রতিদিন এখানে প্রায় তিন থেকে চার হাজার যাত্রী পুজো দিতে আসেন । তবে মেলাগুলোতে তুলনামূলকভাবে যাত্রী সংখ্যা বেশি থাকে। এখানে মহাদেব স্বয়ম্ভু, প্রতিষ্ঠিত নন। ১৬৬৫ সাল নাগাদ মন্দিরটি সংস্করণ করেছিলেন কোচবিহার রাজ প্রাণনারায়ণ।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম